অর্থনীতির আলোচনায় বিনিয়োগের পরিবেশ যতটা গুরুত্ব পায়, কর্মের পরিবেশ ততটা মনোযোগ পায় না। অথচ টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের যথাযথ কর্মপরিবেশ অর্থাৎ ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মস্থল, সংগঠিত হওয়ার অধিকারসহ সব ধরনের আইনি স্বীকৃতি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

দেশের অর্থনীতির বিকাশ এমন পথে ঘটেছে যে বেশির ভাগ শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে; যেখানে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি, নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, ওভারটাইম, সবেতন ছুটি, বিমা, পেনশন ও গ্র্যাচুইটির অধিকার থাকে না। এমনকি প্রাতিষ্ঠানিক খাতেও কারখানার মালিকেরা শ্রমিকদের যে মজুরি দেন, তা মানসম্পন্ন জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট নয়। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশও ভয়ংকর অনিরাপদ, যার ফলে নিয়মিত অকালমৃত্যু ঘটছে। কর্মস্থলে সরাসরি দুর্ঘটনায় মৃত্যু ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশের কারণে প্রতিবছর ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেন বহু শ্রমিক, যার কোনো হিসাব কারও কাছে থাকে না।

অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৮ নভেম্বর ‘শ্রম সংস্কার কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশন সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে শ্রম অধিকারবিষয়ক ২৫টি ক্ষেত্রে ৪৫০ পৃষ্ঠাজুড়ে যে সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশের শ্রমিকশ্রেণির অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে। এই প্রবন্ধে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ

শ্রম সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহভিত্তিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শ্রম আইনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দেশের সব শ্রমিকের জন্য একটি সর্বজনীন জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, মজুরি তিন বছর পরপর পুনর্নির্ধারণ, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মজুরি না দিলে শ্রমিককে ক্ষতিপূরণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, আপৎকালীন তহবিল, নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান, ট্রেড ইউনিয়ন করার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস, স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

দেশে বর্তমানে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রায় সাত কোটি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি এবং আইনি সুরক্ষা কিছুই নেই। সুপারিশে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ক্ষেত্রে প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র বা প্রমাণপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ হলো লিভিং ওয়েজ বা জীবনী মজুরির ধারণাকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে প্রতি তিন বছর পরপর জাতীয় ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। এরপর এই জাতীয় ন্যূনতম মজুরিকে ভিত্তি ধরে কাজের প্রকৃতি, খাতভিত্তিক চাহিদা, ঝুঁকি এবং অঞ্চলভেদে বিশেষ খাত ও পেশার জন্য পৃথক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে, যা কোনোভাবেই জাতীয় ন্যূনতম মজুরির কম হতে পারবে না।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয় মালিক শ্রমিক দর–কষাকষির মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে মজুরি নির্ধারণের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না। বিদ্যমান ক্ষমতাকাঠামোয় দুর্বল শ্রমিকপক্ষের বিপরীতে শক্তিশালী মালিকগোষ্ঠীর ইচ্ছাতেই মজুরি নির্ধারিত হয়।

এ পরিস্থিতির অবসানে কমিশন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য একটি মানদণ্ড তৈরির সুপারিশ করেছে, যেখানে শ্রমিক পরিবারের মাসিক খাদ্য ব্যয়, খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় (যেমন বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক ও বিনোদন) এবং ন্যূনতম মাসিক সঞ্চয় বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবারের একক উপার্জনকারীকে বিবেচনায় নিয়ে এমন মজুরি নির্ধারণ করতে হবে যেন শ্রমিক তাঁর পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

কমিশন ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতিটি সেক্টরের মজুরি সুপারিশ করার সময়ে মজুরির পরিমাণ নির্ধারণের ভিত্তি, মজুরির হিসাবপদ্ধতি ও মজুরির পরিমাণ নির্ধারণে ব্যবহৃত তথ্য–উপাত্ত প্রকাশ করার সুপারিশ করেছে। মজুরি নির্ধারণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে কমিশন শ্রম, অর্থনীতি ও মজুরি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠনের কথা বলেছে। খাত ও পেশাভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে স্থায়ী কমিশনের অধীন এক বা একাধিক কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট গড় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করার কথা বলেছে কমিশন।

অনেক সময় দেখা যায়, সময়মতো মজুরি না পেয়ে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য কমিশন একটি বাধ্যতামূলক আপৎকালীন তহবিল গঠনের সুপারিশ করেছে। এই তহবিলে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের দুই মাসের সমপরিমাণ মজুরি জমা রাখবে। তহবিলটি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, সরকার ও সংশ্লিষ্ট শিল্পের মালিকদের সংগঠনের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।

মজুরি পরিশোধসংক্রান্ত তথ্য প্রতি মাসে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে অনলাইনে জমা করতে হবে। সময়মতো মজুরি প্রদান না করা হলে নির্দিষ্ট হারে ক্ষতিপূরণ আদায়েরও সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে ও নিয়মিত তদারক করা হলে বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের রাস্তা অবরোধের ঘটনা অনেকাংশে কমবে।

শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়া এবং সম্মিলিত দর–কষাকষির ক্ষেত্রে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চা সহজ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এ জন্য প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে মোট শ্রমিকের অনুপাতের শর্তের পরিবর্তে ন্যূনতম শ্রমিকসংখ্যা বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। এই সংখ্যা নির্ধারণের জন্য কমিশন একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে।

প্রতিষ্ঠানপুঞ্জের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সদস্যের শর্তের বদলে ন্যূনতম ৫০ জন এবং অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে অঞ্চলভিত্তিক ইউনিয়নের জন্য ন্যূনতম ৫০ জন ও জাতীয়ভিত্তিক ইউনিয়নের জন্য ৪০০ জনের সুপারিশ করা হয়েছে। কমিশন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলগুলোকেও (ইপিজেড) অভিন্ন শ্রম আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে।

কমিশন কাজের পরিবেশ নিরাপদ করার জন্য কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে, যেমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ চিহ্নিত করে সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত, কর্মস্থলে সেফটি কমিটি গঠন ও প্রশিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা, শ্রম পরিদর্শনে সেক্টরভিত্তিক চেকলিস্ট প্রণয়ন ও হালনাগাদ এবং পরিদর্শন প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটলে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন ও বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি রোগব্যাধি ও দুর্ঘটনার হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রতি তিন বা ছয় মাস অন্তর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

বর্তমানে শ্রম আইন অনুসারে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে মাত্র দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, যা একেবারেই অপ্রতুল। কমিশন তাই ক্ষতিপূরণের হার বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে। এ জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন ১২১ ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করার কথা বলেছে। এ ছাড়া শ্রমিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির জন্য শ্রম আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও অযথা হয়রানি বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলেছে কমিশন।

কমিশন জাতীয় পেনশন স্কিমের অধীন শ্রমিকবান্ধব পেনশন স্কিম চালু করার সুপারিশ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে কারখানা বা প্রতিষ্ঠানকে পেনশন স্কিমে অংশ নিতে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য আয় অনুসারে কন্ট্রিবিউটারি, নন-কন্ট্রিবিউটারি বা ভলান্টারি পেনশন স্কিম চালু করতে হবে। প্রান্তিক শ্রমিকদের পেনশানের চাঁদা সরকার ও নিয়োগকারী যৌথভাবে বহন করবে। সেই সঙ্গে শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় শ্রমিকদের জন্য কার্ডভিত্তিক রেশন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া কমিশন শিল্পাঞ্চলগুলোয় শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে দিবাযত্ন কেন্দ্র, স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবারের ক্যানটিন, সাশ্রীয় আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন, শিল্পাঞ্চলে হাসপাতাল স্থাপন, শ্রমিক স্বাস্থ্য কার্ড চালু, শ্রমিকের প্রয়োজন বিবেচনায় হাসপাতালে বিনা মূল্যে সন্ধ্যাকালীন সেবার ব্যবস্থা, সরকারি স্কুল, বিনোদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

বিশেষ শ্রম-জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ

শ্রম সংস্কার কমিশন বিশেষ শ্রম-জনগোষ্ঠীর জন্য আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট কতগুলো সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সুপারিশ হলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য স্থায়ী চাকরি ও ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী আবাসিক এলাকা’ স্থাপন, কৃষিভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য মৌসুমি কর্মহীনতা মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, চা–শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা, চাতালশ্রমিকদের ঋণচক্র থেকে মুক্ত করতে সরকারি সহায়তা, রাত্রিকালীন কাজের জন্য নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধান ও নিয়োগকারীর পক্ষ থেকে পরিবহন নিশ্চিত করা, ট্যানারি শিল্পে স্বাস্থ্য ও রাসায়নিক ঝুঁকি বিবেচনায় বিশেষ প্রশিক্ষিত শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ।

এছাড়া বন্দরশ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা ও ঝুঁকি ভাতা প্রদান, জাহাজভাঙা শিল্পকে নিরাপদ করা, ইয়ার্ডভিত্তিক সেফটি কমিটি ও এলাকাভিত্তিক নিরাপত্তা কমিটি গঠন, পাথরভাঙা শ্রমিকদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পাথরভাঙা সাইটগুলোর তদারকি বৃদ্ধি, পরিবহনশ্রমিকদের নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করা, দোকান কর্মচারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে আশপাশে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা, হকারদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান, রাইড শেয়ারিং, গিগ, প্ল্যাটফর্ম কর্মীদের শ্রম অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ মজুরিকাঠামো নির্ধারণ ও কোম্পানিগুলোর কমিশন যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা, অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য দূতাবাসে পর্যাপ্ত জনবল ও বাজেটের ব্যবস্থা করা, অভিবাসী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও সমস্যাগুলো সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়গুলো রয়েছে।

সুপারিশে আরও যা থাকতে পারত

শ্রমিকসংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে শ্রম আইনের ২৬ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। এই ধারায় সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে মালিকপক্ষ কোনো ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়াই শ্রমিকের চাকরির অবসান ঘটাতে পারে। কমিশন এই ধারা পুরোপুরি বাতিলের বদলে কেবল যৌথ দর–কষাকষি প্রতিনিধির (সিবিএ ইউনিয়ন) কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধক্ষকে ২৬ ধারায় টার্মিনেট করা যাবে না মর্মে সংশোধনের সুপারিশ করেছে। অথচ যেকোনো বিবেচনাতেই শ্রম আইনে যখন–তখন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের এই বিধান পুরোপুরি বাতিল করা উচিত।

কমিশন মানদণ্ডভিত্তিক জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের পদ্ধতি কী হবে ও উপাত্ত কোথা থেকে সংগ্রহ করতে হবে, সে বিষয়ে একটি গাইডলাইন দিয়েছে। পাশাপাশি এই পদ্ধতি ও উপাত্ত ব্যবহার করে মজুরি নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট বা ফর্মুলা প্রস্তাব করা হলে তা রেফারেন্স হিসেবে কাজ করত। তা ছাড়া কমিশন নিজেই একটা জাতীয় ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করতে পারত, যা স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠিত হওয়ার আগপর্যন্ত বিভিন্ন সেক্টরের ন্যূনতম মজুরির ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারত। কমিশন দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের মানদণ্ড নির্ধারণের জন্য এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ন্যূনতম শ্রমিকসংখ্যা নির্ধারণে ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে।

১৮ সদস্যের শ্রম সংস্কার কমিশনই তো গঠিত হয়েছে বিশেষজ্ঞ, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। ফলে কমিশন নিজেই
এই মানদণ্ডগুলো নির্ধারণ করে দিতে পারত। এ ছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের অকালমৃত্যুর তদন্তের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা সুপারিশ করা প্রয়োজন ছিল।

সরকারের করণীয়

দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শ্রমজীবী। তাঁদের জীবনে স্বস্তি এনে দিতে শ্রম সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কারের মতো কোনো জটিলতা নেই। মালিক, শ্রমিক, বিশেষজ্ঞসহ সব পক্ষের অংশগ্রহণে সুপারিশগুলো তৈরি হয়েছে, তাই এগুলো বাস্তবায়নে নতুন করে ঐকমত্য তৈরিরও কিছু নেই। সরকারের উচিত হবে দ্রুত এই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। অভ্যুত্থানের সরকার সংস্কারের প্রতি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট করতে এই সংস্কারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর র স প র শ কর ছ র র স প র শ কর ছ প নশন স ক ম ন শ চ ত কর র ব যবস থ জন য একট ন র জন য দ র জন য র জন য ক র পর ব শ ম নদণ ড দ র ঘটন ত ম লক গঠন র ধরন র তহব ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে দারুণ পারফর্ম করলেও এখনও টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ ২০-এ জায়গা হয়নি কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারের। তবে দলগতভাবে বেশ কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা গেছে। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছেন জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল, বোলিংয়ে বড় ধাপ এগিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

বাংলাদেশের হয়ে সিরিজ সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ব্যাটে সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুই ম্যাচে ১৫ উইকেট তুলে নিয়ে ৪ ধাপ এগিয়ে এখন তিনি বোলিং র‍্যাংকিংয়ে ২৬তম স্থানে। অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে তিনি এখন আছেন তিন নম্বরে।

ব্যাটিংয়ে ব্যক্তিগত উন্নতি হয়েছে জাকের আলী, শান্ত ও মুমিনুল হকের। দুটি ইনিংসে ৫৬ ও ৪৭ রান করে মুমিনুল এগিয়েছেন ৫ ধাপ, এখন অবস্থান ৪৮তম। জাকের আলী এগিয়েছেন ১০ ধাপ, অবস্থান ৫০তম। শান্ত ৪ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ৫৩তম স্থানে।

অন্যদিকে সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করে জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি উঠে এসেছেন র‍্যাংকিংয়ের সেরা ১৫ বোলারের তালিকায়। প্রয়াত হিথ স্ট্রিকের পর তিনিই প্রথম জিম্বাবুইয়ান বোলার হিসেবে টেস্ট রেটিংয়ে ছুঁয়েছেন ৭০০ পয়েন্টের মাইলফলক। বাংলাদেশ সফরেই তার এই অর্জন। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান বেনেট দুই ইনিংসে ৫৭ ও ৫৪ রান করে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০০-র মধ্যে ঢুকেছেন।

বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিসেবে এখনও তালিকায় আছেন লিটন দাস, যদিও সিরিজে না থাকায় তিনি এক ধাপ পিছিয়ে যৌথভাবে এখন ৩৭তম। ফর্মহীনতায় ভোগা মুশফিকুর রহিম নেমে গেছেন ৪০তম স্থানে। বোলিং র‍্যাংকিংয়ে মিরাজের আগেই আছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, যার অবস্থান ২৩তম। এছাড়া সাকিব আল হাসান এখনো শীর্ষ ৫০-এ আছেন, তাসকিন আহমেদ রয়েছেন ৫১ নম্বরে।

অলরাউন্ডারদের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে জায়গা ধরে রেখেছেন সাকিব আল হাসান, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই এই তালিকার নিয়মিত মুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ