মেট গালার লাল গালিচায় হাঁটবেন শাহরুখ, উড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে
Published: 4th, May 2025 GMT
প্রথমবার মেট গালার লাল গালিচায় হাঁটবেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। এ উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন ‘পাঠান’ তারকা। নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টে ধারণ করা শাহরুখের একটি ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল। খবর ইন্ডিয়া টুডের।
বেশ কিছু দিন ধরে খবর উড়ছে, মেট গালায় দেখা যাবে শাহরুখ খানকে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানির নিউ ইয়র্ক এয়ারপোর্টের ভিডিও সেই সংশয় কাটিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া শাহরুখ খানের ভক্তদের ভেরিফায়েড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ৫ মে মেট গালার রেড কার্পেটে হাঁটবেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। তিনি প্রথম ভারতীয় অভিনেতা, যে মেট গালার রেড কার্পেটে হাঁটতে যাচ্ছেন। ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির তৈরি পোশাকে তাকে দেখা যাবে। শাহরুখকে নতুন রূপে দেখতে মুখিয়ে রয়েছেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। গত বছর এই অনুষ্ঠানের লাল গালিচায় হাঁটেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট।
আরো পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অভিনেতাদের তালিকায় শাহরুখ
শাহরুখের সঙ্গে দীপিকার পঞ্চম মিশন
শাহরুখ খান ছাড়াও মেট গালায় অভিষেক হতে যাচ্ছে অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি ও অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জের।
নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন প্রচারক এলিনর ল্যাম্বার্ট ১৯৪৮ সালে মেট গালার যাত্রা শুরু করেন। তার নবনির্মিত কস্টিউম ইনস্টিটিউটের তহবিল সংগ্রহের জন্য মেট গালা শুরু করেছিলেন। বর্তমানে মেট গালাকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় ফ্যাশন ইভেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছরের মে মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় এই মেট গালা। ধীরে ধীরে এই অনুষ্ঠানের বিস্তৃতি ঘটে।
চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সংগীত, থিয়েটার, ব্যবসা, খেলাধুলা, রাজনৈতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় ব্যক্তিকে প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। শুধু আমন্ত্রিত অতিথিরাই এতে অংশ নিতে পারেন। ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের টিকিটের মূল্য ছিল পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার; যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুরা কোথায় নিরাপদ?
নারী ও শিশু ধর্ষণ একটি নৈতিক অবক্ষয়জনিত সামাজিক অপরাধ। এরূপ বেদনাদায়ক সংবাদ গণমাধ্যমে ব্যাপক মাত্রায় প্রচারিত হচ্ছে। মাগুরার আছিয়া নামে ৮ বছরের কন্যাশিশুকে বাঁচানো গেল না। দেশের সব গণমাধ্যম নির্মম এই সংবাদটি প্রচার করেছে। আছিয়া বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়। বোনের স্বামীর সহায়তায় শ্বশুর হিটু শেখ আছিয়াকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি সেই পাষণ্ড। ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার চেষ্টা করে। অচেতন অবস্থায় মাগুরা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পর্যায়ক্রমে ফরিদপুর মেডিকেল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ সংকটাপন্ন অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ৮ বছরের কন্যাশিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জীবন ও জগৎ দেখার আগেই নিষ্পাপ একটি শিশুটির জীবনাবসান হয়।
শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের নারী নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসন্ধানক্রমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধর্ষণ সম্পর্কিত ভয়ানক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদনে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে ৬ হাজার ৩০৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৪৭১ জন ১৮ বছরের কম বয়সী। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার ১০৭ জন, যার মধ্যে ৬৬ জন শিশু।
দেশের সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ষণ একটি চিহ্নিত সামাজিক অপরাধ। ধর্ষণ ও ধর্ষণের শাস্তির বিধানাবলি উল্লেখ আছে ১৮৬০ সালের ‘দণ্ডবিধি’র ৩৭৫ নম্বর ধারায়। তা ছাড়া বাংলাদেশে যৌন নিপীড়নমূলক আইন হচ্ছে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (২০০৩ সালে সংশোধিত)’। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ নম্বর ধারায় ধর্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে– ‘যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত ১৬ বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া অথবা ১৬ বছরের কম বয়সের কোনো নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।’
ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনে শাস্তির বিধান অত্যন্ত কঠিন। আইনের বিধানমতে– কেউ ধর্ষণের শিকার, ভিকটিম মারা গেলে, দলগত ধর্ষণের শিকার ও ধর্ষণের চেষ্টার জন্য পৃথক শাস্তির বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান হচ্ছে– মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০-৫ বছর সাজা ইত্যাদি। দেশে ধর্ষণের অভিযোগে অনেক মামলা হয়। কিন্তু দায়েরকৃত মামলা যথাসময়ে সম্পন্ন হয় না। সাক্ষীর অনুপস্থিতি, বিলম্বে প্রতিবেদন পেশ, বাদীর সময় প্রার্থনাসহ বিবিধ কারণে বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়। ফলে ধর্ষণের শাস্তির গতি খুবই মন্থর।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশে শিশু ধর্ষণ অন্যতম সামাজিক ব্যাধি। ধর্ষণের শিকার শুধু কন্যাশিশু নয়, ছেলে শিশুরাও। শিশুদের প্রতি বর্বর যৌনাচরণ বর্তমান সমাজের একটি নগ্ন রূপ। আতঙ্কের বিষয়, বেশির ভাগ শিশু যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে পরিচিতজনের হাতেই। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক নিবন্ধ অনুযায়ী, প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নির্যাতনকারী শিশুর পরিচিত ও নিকটাত্মীয়। শিশুদের প্রতি পুরুষদের যৌন ইচ্ছা অনুভূত হচ্ছে কেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এরূপ পুরুষরা ‘পিডোফাইল’ হিসেবে অভিহিত। পিডোফাইলদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে শিশুদের সুরক্ষায় অধিকতর সতর্ক হতে হবে।
ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য মানবাচরণ। দেশে যৌনবাদের উত্থানে বিব্রত গোটা সমাজ ব্যবস্থা। কুরুচিপূর্ণ মানুষ প্রবৃত্তির তাড়নায় অশ্লীল পথ অবলম্বন করছে। আজ নারী, কিশোরী, কন্যাশিশু এমনকি ছেলেশিশুও যৌন নিপীড়কদের শিকার হচ্ছে। ধর্ষকরা সমাজের বর্ণচোরা। এসব হীনচরিত্রের ব্যক্তি সমাজ এবং সভ্যতার প্রতি আনুগত্যশীল নয়। তারা সমাজের অগ্রযাত্রা ব্যাহত ও সামাজিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। তাই ধর্ষণ প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। পরিবার, বিদ্যালয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা জোরদার করতে হবে। যে কোনো নারীর শ্লীলতাহানি ও নিষ্পাপ শিশুর প্রতি বর্বরতায় গোটা সমাজ লজ্জিত হয়। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ব্যক্তিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। সমাজে বসবাসকারী সবার প্রতি শোভন আচরণ এবং পারস্পরিক আস্থা জোরদার হোক।
মোহাম্মদ শাহী নেওয়াজ: অধ্যক্ষ, জাতীয় সমাজসেবা একাডেমি, ঢাকা