মাহফুজ-আসিফ আ’লীগ নিষিদ্ধ চায়, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারা: হাসনাত
Published: 8th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, মাহফুজ, আসিফ, নাহিদরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই লীগের বিচার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা চায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করুন।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, আওয়ামী লীগের বিচার প্রশ্নে যারা মাহফুজ আলমের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন, তারা হয় অন্যের খেলার গুটি হচ্ছেন, নাহলে তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।
তিনি আরও বলেন, মাহফুজ, আসিফ, নাহিদরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই লীগের বিচার ও নিষিদ্ধ ঘোষণা চায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে কারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করুন। মূল সমস্যা চিহ্নিত না করে, সে ব্যাপারে কথা না বলে ব্যক্তিগত ক্ষোভ, ঈর্ষা বা গোষ্ঠীগত স্বার্থোদ্ধারের জন্য যারা মাহফুজদের টার্গেট করছেন, আওয়ামী লীগ ফিরে আসার দায় তাদেরও নিতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাত ১টার দিকে যমুনার সামনে নাহিদের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে এসেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেখানে রাত ১০টার পর থেকেই অবস্থান করছেন এনসিপি মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহসহ কয়েক শ নেতা-কর্মী।
মিছিল নিয়ে নাহিদ ইসলাম যমুনার সামনে আসার আগে রাত ১২টার দিকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত যমুনার সামনে থেকে তাঁরা সরবেন না।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা আমাদের গুলি করে থামাতে পারবেন না, আমাদের এই জীবন আমরা ওয়াক্ফ করে দিয়েছি এই বাংলাদেশকে। যখন আমরা জুলাইয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম, তখন আমরা সকল শক্তি জুলাইয়ের পক্ষে আমাদের জীবনটাকে ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলাম।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সহযোদ্ধাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, পলিসি (নীতি) নিয়ে বিভাজন থাকবে, কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রশ্নে পুরো বাংলাদেশ ঐক্যবদ্ধ। যতক্ষণ পর্যন্ত না আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এখানে (যমুনার সামনে) অবস্থান করব।’
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনার এটা বলার ম্যান্ডেট নাই যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সে সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নেবে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা আপনাকে সম্মান করি, যতক্ষণ না আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী, ফ্যাসিস্ট, সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা না করছেন এবং নিষিদ্ধ না করছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এখান থেকে কেউ উঠবে না।’
যমুনার সামনে একটু পরপর স্লোগান হচ্ছে, ‘ব্যান করো ব্যান করো, আওয়ামী লীগকে ব্যান করো’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’।
রাত ১০টা থেকে অবস্থানগণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করা ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণার দাবিতে যমুনার সামনে রাত ১০টা থেকে অবস্থান নেন হাসনাত। এর আগে এ বিষয়ে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তাঁর সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও তখন যমুনার সামনে জড়ো হন।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামিদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।’
নাহিদ ইসলাম ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, ‘জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনিদের বিচার এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে। আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠব না।’
জুলাইয়ের সব শক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ও আহতদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি লিখেছেন, ‘বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।’
নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগজুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানান আসিফ মাহমুদ।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। তিনি আজ রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সপ্তাহখানেক আগে থেকেই প্রসেস করে সব ফর্মালিটি শেষ করে এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্নকরণ নিশ্চিত করাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার।’