কারারক্ষী পদে কাম্য উচ্চতা থাকলেও বাদ, রাজশাহীতে বিক্ষোভ
Published: 15th, May 2025 GMT
কারারক্ষী পদে নিয়োগের শর্তে শারীরিক উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ন্যূনতম ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। এই শর্ত পূরণ করেও অনেক চাকরিপ্রার্থী রাজশাহীতে প্রাথমিক শারীরিক যাচাইপর্বে বাদ পড়েছেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা।
এ দিন সকাল ৯টা থেকে রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাঠে চাকরিপ্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতা যাচাই শুরু হয়। এতে অংশ নেন প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে উচ্চতা মেপে প্রায় ২০০ জনকে প্রাথমিক পর্যায়েই মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা সেখান থেকে না গিয়ে শুরুতে সড়কের পাশে অবস্থান নেন, পরে বিক্ষোভে অংশ নেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা সাময়িকভাবে সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। তবে তারা কারাগারের সামনের সড়কের পাশে বসে অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যান। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তারা সেখান থেকে চলে যান।
আরো পড়ুন:
এইচএসসি পাসে চাকরি দিচ্ছে স্কয়ার টয়লেট্রিজ
এক্সিম ব্যাংকে চাকরি, লাগবে না অভিজ্ঞতা
পাবনা থেকে আসা চাকরিপ্রার্থী বিজয় কুমার বলেন, ‘‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। অথচ যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি— তাদের প্রাথমিক পর্যায়েই বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু যাদের উচ্চতা ৫ ফুট ৯ ইঞ্চির বেশি, তারাই মাঠে থেকে যাচাইয়ের সুযোগ পেয়েছেন। এতে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘যাদের বাদ দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে দুইজন প্রার্থীকে পরে কারারক্ষীরা নিয়ে গিয়ে মাঠে প্রবেশ করিয়েছেন— এই বলে যে তারা নাকি কর্মকর্তাদের আত্মীয়। অথচ ওই দুইজনের উচ্চতাও আমাদের মতোই ছিল। এটা স্বজনপ্রীতিরই প্রতিফলন।’’
রাজশাহীর কাটাখালী থেকে আসা চাকরিপ্রার্থী জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘‘আমরা সরকারি নিয়ম মেনে উচ্চতা অনুযায়ী আবেদন করেছি। কিন্তু উচ্চতা মাপার পরই আমাদের বের করে দেয়া হয়। অন্য শারীরিক সক্ষমতার কোনো যাচাই না করেই এইভাবে বাদ দেয়া অন্যায়। সরকারি চাকরির প্রাথমিক বাছাইয়ে এমন অনিয়ম আগে দেখিনি।’’
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘‘চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তা অবরোধ করলে আমরা গিয়ে বোঝাই। তারা মিনিট দশেক পরেই রাস্তা ছেড়ে দেন এবং সড়কের পাশে অবস্থান করতে থাকেন। পরে বিকেলে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান।’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কামাল হোসেন বলেন, ‘‘৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ন্যূনতম যোগ্যতা মানে এই নয় যে তাদেরই নিতে হবে। স্বাভাবিকভাবে যাদের উচ্চতা বেশি, তারাই অগ্রাধিকার পাবেন। এটা সবখানেই এমনভাবে হয়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘কারও আত্মীয় পরিচয়ে শারীরিক উচ্চতা কম থাকা সত্ত্বেও তাদের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। এখানে অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগই নেই।’’
ঢাকা/কেয়া/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ কর চ কর প র র থ অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।
নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।
এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।
এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।
প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।
‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।
শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।
এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।
তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমিনেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।
হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।
শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স