ভারতের অশুল্ক বাধা আস্থার পরিবেশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলছে
Published: 19th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে উভয় দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা ও অভিন্ন সীমান্ত এই অংশীদারিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সম্প্রতি উভয় পক্ষের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত অশুল্ক বাধা আরোপের ফলে যে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে, তা কেবল ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, বরং আস্থার পরিবেশ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে ফেলছে।
ভারতের পক্ষ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের কিছু ভোগ্যপণ্য যেমন ফলের রস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী ও তৈরি পোশাক প্রবেশে হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশও ভারতীয় সুতা আমদানিতে নির্দিষ্ট স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সরাসরি শুল্ক বাড়ানো না হলেও কার্যত আমদানি-রপ্তানির বাস্তব পথ সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে ব্যবসা পরিচালনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারের ঘটনা এই চাপ আরও বৃদ্ধি করেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভারতের মূল ভূখণ্ডসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের জন্য লাভজনক বাজার। সেখানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদির চাহিদা রয়েছে এবং এ চাহিদা মেটাতে স্থলপথে পণ্য প্রবেশ দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। হঠাৎ করে এই প্রবেশাধিকার সীমিত হলে শুধু ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়বে তা নয়, বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সীমান্তবর্তী ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা, যাঁরা সরাসরি এই বাজারের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের মতো পণ্য, যা বাংলাদেশের রপ্তানির অন্যতম প্রধান খাত, তা যদি দূরবর্তী সমুদ্রবন্দর যেমন কলকাতা বা নব সেবা বন্দরনির্ভর হয়ে পড়ে, তাহলে পরিবহন খরচ, সময় ও প্রতিযোগিতার দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে।
এদিকে বাংলাদেশও ভারত থেকে আমদানি করা সুতার ওপর নির্ভরশীল; এটি দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। এই আমদানিতে কোনো বাধা সৃষ্টিও অভ্যন্তরীণ শিল্প খাতের ব্যয় বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যাহত করে। কাজেই এ ধরনের একতরফা এবং হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরস্পর নির্ভরশীল দুই দেশের শিল্প খাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘদিনের পারস্পরিক আস্থা ক্ষুণ্ন করে।
প্রতিটি দেশ তার অর্থনৈতিক সীমান্ত ও বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সার্বভৌম, তারপরও নীতিনির্ধারণে স্থিতিশীলতা, আগাম অবহিতকরণ ও যৌক্তিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। হঠাৎ করে আরোপিত নীতিগত প্রতিবন্ধকতা শুধু ব্যবসায়ীদের জন্যই অনিশ্চয়তা তৈরি করে না, বরং আঞ্চলিক বাণিজ্য ব্যবস্থায়ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে যে সরবরাহ শৃঙ্খলা দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে উঠেছিল, তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককেও অবিশ্বাস ও সংশয়ের পথে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সমস্যাগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এসব সংকট পারস্পরিক প্রতিযোগিতা বা ‘শাস্তিমূলক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে না দেখে বরং সহযোগিতার ভিত্তিতে সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই সময়োপযোগী পদক্ষেপ। দুই দেশই আঞ্চলিক সংহতি, আন্তসীমান্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পক্ষে। তাই অশুল্ক বাধার মতো পদক্ষেপগুলোর প্রভাব নিরীক্ষা করে দ্রুত পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিতে হবে।
ভবিষ্যতে এমন সংকট এড়াতে উভয় দেশের সরকার, নীতিনির্ধারক, বাণিজ্য সংগঠন ও বেসরকারি খাতের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহজ বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তোলা দরকার, যেখানে অপ্রত্যাশিত নীতিগত বাধা কমে আসবে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে।
সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক শুধু দুই দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর সংহতি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্ক যেন অশুল্ক বাধা, সমন্বয়হীনতা কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল নীতির কবলে পড়ে দুর্বল না হয়ে পড়ে, সেদিকে সচেতন ও দায়িত্বশীল দৃষ্টি দেওয়া সময়ের দাবি। আলোচনার মাধ্যমে ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়াই এই অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির সঠিক পথ।
সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সানেম
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘বউ পেটানো’ অভিনেতার দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন
সৈয়দা আলিজা সুলতানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেতা ফিরোজ খান। তাদের এই সংসার ভেঙে গেছে। আলিজা অভিযোগ করেছিলেন, তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন ফিরোজ। কেবল তাই নয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ছবিও প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তোপের মুখে পড়েন ফিরোজ খান। নেটিজেনদের অনেকে তাকে ‘বউ পেটানো’ অভিনেতার তকমাও দেন।
প্রথম সংসার ভাঙার প্রায় দুই বছর পর ডা. জয়নবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ফিরোজ খান। এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্বিতীয় সংসার ভাঙার গুঞ্জন ছড়িয়েছে। মূলত, বিনোদনভিত্তিক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ডা. জয়নবের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। তারপরই শুরু হয় ফিরোজ খানের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে জয়নবের অভিযোগের স্ক্রিনশট।
ডা. জয়নব কথিত এই নোটে বলেন, “আমি আমার সহনসীমার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অবিরাম মানসিক চাপ ও উদ্বেগে ক্লান্ত। এমন একজন মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে আছি, যে আমাকে বিশ্বাস করে না। আমি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন ক্লান্ত। প্রতিটি কথোপকথন একটা লড়াইয়ের মতো লাগে, প্রতিটি মতবিরোধ যেন যুদ্ধ। এমন আচরণের শিকার হয়ে আমি ক্লান্ত। আমি যখন তাকে কিছু বলি, সে আমার উপর রাগ ঝাড়ে।”
স্ত্রী জয়নবের সঙ্গে ফিরোজ খান
সুখ স্মৃতিগুলো কষ্টে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। এমন মন্তব্য করে জয়নব বলেন, “সত্যি বলতে, আমরা একসঙ্গে যে স্মৃতিগুলো তৈরি করেছিলাম, তা এখন কষ্ট ও আঘাতে ঢাকা পড়ে গেছে। আমি অসংখ্যবার তাকে ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো কখনো পুরোপুরি সারেনি। বুঝতে পারছি, আমি এক ধরণের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে বাস করছি, একটা সম্পর্কে আটকে আছি, যা আমার জীবনের শক্তি শুষে নিচ্ছে। আমি জানি, আমি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। আমি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও কোমলতার যোগ্য। সবকিছু ঠিক আছে—আমি আর এই ভান করতে চাই না।”
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে জয়নব বলেন “এমন বিষাক্ত একটা সম্পর্কের জন্য আমি আমার সুখ ত্যাগ করেছি। আমি এখন নিজের জন্য, নিজের মানসিক সুস্থতার জন্য দাঁড়াচ্ছি। বেদনা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে, আমি আমার জীবনের এই অধ্যায় (বিবাহিত জীবন) শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি ডিভোর্স নিচ্ছি। কারণ আমি জানি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর জন্য আমি প্রস্তুত, যেখানে আমাকে মূল্য দেওয়া হবে, সম্মান করা হবে, ভালোবাসা হবে।”
জয়নবের এই ‘ডিভোর্স নোট’ নিয়ে যখন জোর চর্চা চলছে, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন ফিরোজ খান। তবে এর আগে ফিরোজ খানের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে দেখা যায়। তাতে জয়নবের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল’ ও ‘মানসিক চাপের’ অভিযোগ তোলেন। যদিও পরবর্তীতে পোস্টটি মুছে ফেলা হয়। পাশাপাশি এই অভিনেতা জানান, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল।
ডা. জয়নব
তবে সংসার ভাঙার গুঞ্জনে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেননি ফিরোজ খান কিংবা তার স্ত্রী ডা. জয়নব। তবে বিনোদনভিত্তিক যে পেজ থেকে জয়নবের ‘ডিভোস নোট’ ছড়ানো হয়েছে, সেই পোস্টে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাতে জয়নব লেখেন, “এই ধরনের পেজগুলো আনফলো করুন অথবা রিপোর্ট করুন। এই ধরনের পেজ থেকে ভুয়া খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিরক্ত করা হচ্ছে। সত্যি বলছি, আমি জানি না কীভাবে তারা আমার স্টোরিতে পোস্টটি করার অ্যাকসেস পেয়েছে। এই পোস্ট আমি কখনো করিনি।”
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্ত্রী সৈয়দ আলিজা সুলতানের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় ফিরোজ খানের। এ সংসারে সুলতান খান ও ফাতিমা খান নামে দুই সন্তান রয়েছে। বর্তমানে দুই সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে আদালতে মামলা লড়ছেন এই প্রাক্তন দম্পতি। ২০২৪ সালে ডা. জয়নবকে বিয়ে করেন ফিরোজ খান।
ঢাকা/শান্ত