চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সাথে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা’ রক্ষায় পাকিস্তানকে সমর্থন করবে চীন।
মঙ্গলবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি এবং সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার পর চীন জানিয়েছে, পাকিস্তানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তারা দৃঢ়ভাবে দেশটির পাশে রয়েছে। মঙ্গলবার বেইজিংয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চীন এই বার্তা দেয়।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেও তারা সংলাপ ও শান্তিপূর্ণভাবে মতপার্থক্য মেটানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বেইজিং সফরে থাকা পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার–এর সঙ্গে বৈঠকে এই মন্তব্য করেন ওয়াং।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “পাকিস্তান হচ্ছে চীনের ‘অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য, দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু’ এবং দুই দেশের ‘সব পরিস্থিতিতে কৌশলগত সহযোগিতা’ আরও গভীর করা হবে।”
এদিকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য বৈঠকে ইসহাক দার চীনকে ধন্যবাদ জানান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দুই দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা এবং চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আঞ্চলিক শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই দেশের নেতৃত্ব।”
এর আগে, ইসহাক দার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও–এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সিপিসির সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।
লিউ বলেন, “চীন সব সময় পাকিস্তানকে ‘সব পরিস্থিতিতে কৌশলগত সহযোগী’ ও ‘অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য, দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য বন্ধু’ হিসেবে দেখে থাকে। তাই চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক সবসময় অগ্রাধিকার পাবে।”
ইসহাক দার সম্প্রতি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে বেইজিং পৌঁছান। সফরটি এমন এক সময় হলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পেহেলগাম হামলার জেরে কয়েকদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির পরেও পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র র পরর ষ ট র ইসহ ক দ র পর স থ ত মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলনের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির
কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬তম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন (সিসিসি) উদ্বোধন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেনা সম্মেলন একটি দ্বিবার্ষিক প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শীর্ষস্তরীয় মতবিনিময়ের আসর।
অপারেশন সিঁদুরে’র পর এটিই প্রথম সম্মিলিত সেনা সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান, প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানও।
আরো পড়ুন:
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
আসামে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ৫ বাংলাদেশি ছাত্রকে বহিষ্কার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদর দপ্তর কলকাতার বিজয় দুর্গে তথা ফোর্ট উইলিয়ামে আগামী তিনদিন এই সম্মিলিত সেনা সম্মেলন চলবে।
এই সম্মেলন সেনার তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ চিন্তাভাবনামূলক ফোরাম, যা দেশের শীর্ষ অসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বকে ধারণাগত ও কৌশলগত স্তরে মতামত বিনিময়ের জন্য আয়োজন করা হয়েছে ৷ কলকাতার আগে সর্বশেষ সম্মিলিত সেনা সম্মলেন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালে ভোপালে। অপারেশন সিঁদুরের প্রেক্ষাপটে, এই বছরের সম্মেলন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এবারের সম্মেলনে সংস্কার, রূপান্তর, পরিবর্তন এবং অপারেশনাল প্রস্তুতির উপর জোর দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু সশস্ত্র বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, সংহতিকরণ এবং প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণে বিশেষ জোর দেওয়া। একই সঙ্গে শীর্ষস্তরের একাধিক ক্ষেত্রে অপারেশনাল প্রস্তুতির উপরও জোর দেওয়া হবে। তিনদিনের এই সম্মেলন সশস্ত্র বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হবে, যাতে ক্রমবর্ধমান জটিল ভূ-কৌশলগত পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়।’
রবিবার আসাম সফর সেরে নির্ধারিত সময়ের থেকে বেশ কিছুটা পর দমদম বিমানবন্দরে নামেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। দলীয় কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মোদিকে দেখতে ভিড় ছিল বিজেপি সমর্থকদের। ভিড় দেখে গাড়ি থামিয়ে হাত নেড়ে জনসংযোগ সারেন মোদি। সেখান থেকে তার ২৪ গাড়ির কনভয় পৌঁছায় রাজভবনে। সেখানেই রাত্রিবাস করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। তিনি রাত কাটান ফোর্ট উইলিয়ামে।
চলতি বছরে এই নিয়ে চতুর্থবার পশ্চিমবঙ্গে এলেন নরেন্দ্র মোদি। সকাল ৯ টাতেই রাজভবন থেকে ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফোর্ট উইলিয়ামে ছিলেন মোদি। দেড়টার পরে কলকাতা থেকে বিহারের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
একদিকে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অন্যদিকে অস্থির চিন সীমান্ত। তার মধ্যে আবার নেপালে পালাবদল। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের উত্তরে চিন বিমানঘাঁটি তৈরি করতে চলেছে বলে একটি খবর ছড়ায়। ঘাঁটিটি নাকি আবার তৈরি হবে চিকেনস নেকের কাছেই। সবমিলিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিরাট এক জটিল সমীকরণ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় কলকাতার বিজয় দুর্গে সেনা সম্মেলনের আয়োজন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ