১৫ ও ১৭ বছর বয়সী দুই কিশোরের ডিএনএ পরীক্ষায় পটুয়াখালীতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এক শহীদের কলেজপড়ুয়া মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা করে আরেক কিশোরের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ।

পটুয়াখালী জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে ওই তিন কিশোরের জড়িত থাকার তথ্য উল্লেখ করা হয়। ৬ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুমকি থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

রফিকুল ইসলাম মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী তার ‘ঘনিষ্ঠ’ সহপাঠীর (১৭) মাধ্যমে প্রথমে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনা দেখে তা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযুক্ত অন্য দুই কিশোর ভুক্তভোগীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। পাশাপাশি মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ফাঁসের হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়। ধর্ষণের ভিডিও, এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও জব্দ করা আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষায় দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. সাজেদুল ইসলাম সজল প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের মামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামির ডিএনএ ও ধর্ষণ-সংক্রান্ত আলামত পরীক্ষায় পাঠানো হয়। এতে এজাহারভুক্ত দুই কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযোগপত্রে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ধর্ষণস্থল থেকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা গাছের শুকনা পাতা ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠিয়ে তৃতীয় একজনের আলামত শনাক্ত হয়। পরে এজাহারভুক্ত এক আসামি অন্য কিশোরের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। যে কারণে অভিযোগপত্রে ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, ২৫ মে আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন তৃতীয় কিশোরের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। আদালতের অনুমতি পেলে তৃতীয় কিশোরের ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। বর্তমানে গ্রেপ্তার তিন কিশোর যশোর শিশু সংশোধনাগারে আছে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীর বাবা ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তাঁকে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকিতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ওই কলেজছাত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে দুই কিশোরের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করে। এরপর গত ২৬ এপ্রিল রাতে রাজধানীর শেখেরটেক এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ভুক্তভোগীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২৭ এপ্রিল তার শহীদ বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে জুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় আরও এক আসামি গ্রেপ্তার১১ মে ২০২৫

ভুক্তভোগীর বাবার বাড়ি থেকে নানা বাড়ির দূরত্ব সাত থেকে আট কিলোমিটার। পুলিশের অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বাবার কবর জিয়ারত করে নানা বাড়িতে ফিরছিল ভুক্তভোগী। পথে ভুক্তভোগীর কলেজের ঘনিষ্ঠ সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন সহপাঠী ভুক্তভোগীকে ফুসলিয়ে পাশের একটি বাগানে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ভুক্তভোগীর চিৎকারে এজাহারভুক্ত দুই কিশোর ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা ধর্ষণের দৃশ্য দেখে তা ফাঁস করে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায় ভুক্তভোগীর সহপাঠীকে। তখন এজাহারভুক্ত দুই কিশোরের মুখ বন্ধ রাখতে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করতে সহায়তা করে ওই সহপাঠী। ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করে দুই কিশোর। ভিডিও ফাঁসের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়।

অভিযোগপত্রে পুলিশ উল্লেখ করে, প্রথম দিকে গ্রেপ্তার দুই কিশোরের ডিএনএ ও সংগৃহীত আলামত পরীক্ষায় পাঠানো হলে তারা শনাক্ত হয়। কিন্তু তদন্তকালে ধর্ষণস্থলের আলামত হিসেবে সংগৃহীত গাছের কয়েকটি পাতায় পাওয়া নমুনা পরীক্ষা করে ঘটনায় আরেকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে তৃতীয় এক কিশোরের নাম জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এক কিশোর। এ জন্য তৃতীয় আরেক কিশোরকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুনজুলাই শহীদের মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৩ কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র০৮ মে ২০২৫আরও পড়ুনজুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার২৬ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলার এক আসামি তিন দিনের রিমান্ডে২৭ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনপটুয়াখালীতে কলেজছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে আটক ১১৯ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ র র ড এনএ পর ক ষ য় প সহপ ঠ র ঘটন ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রীকে অপহরণ করে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪

ঢাকার ধামরাইয়ে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকার আশুলিয়া থানার নবীনগর বটতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধারসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে ধামরাই থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলো– রংপুর জেলার পীরগঞ্জের মুংলাকুটি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আরিফুজ্জামান, একই জেলার গংগাচড়ার খাটারি খা বাড়ী গ্রামের মৃত আবুল হাশেমের ছেলে আয়নাল হক, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার দরগ্রামের মোজ্জামেল হকের ছেলে রবিউল আওয়াল ও ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের গাওয়াইল গ্রামের সোহানা আক্তার। গতকাল বুধবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

ভুক্তভোগী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ধামরাইয়ের এক ছাত্রী স্কুলের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর আর বাড়ি ফিরে না আসায় বাড়ির লোকজন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। কোথাও তাকে না পেয়ে ছাত্রীর বাবা গত শনিবার ধামরাই থানায় জিডি করেন।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, স্কুলে যাওয়ার পথে গাওয়াইল গ্রামের সোহানা তাকে বেড়ানোর কথা বলে কৌশলে আশুলিয়া থানার নবীনগর বটতলা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে সোহানার পূর্বপরিচিত আরিফুজ্জামান, তার বন্ধু আয়নাল ও রবিউল তাকে ধর্ষণ করে।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি হয়। সেই জিডির সূত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে সহযোগীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রীকে অপহরণ করে দলবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪
  • দেশে স্টারলিংক চালু, মাসে সর্বোচ্চ খরচ ৬ হাজার টাকা