আরও কিছু সরকারি কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার উদ্যোগ
Published: 23rd, May 2025 GMT
আরও কিছু সরকারি কোম্পানির শেয়ার সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আনতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় সরকারি কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়। আর এসব কোম্পানিকে বাজারে আনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি)। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আপাতত এসব কোম্পানির ৫ শতাংশ করে শেয়ারবাজারে ছাড়া হবে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টা বৈঠকে ছিলেন না। এমনকি বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, শিল্পসচিব মো.
শেষ পর্যন্ত বৈঠকে অংশ নেন অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
এর আগে ১১ মে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা, বিএসইসির চেয়ারম্যান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকে পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণ এবং কোনো দপ্তর কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে, তা–ও ঠিক করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েই আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। তবে অনেকেই শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিলেন না।
সরকারি যেসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেম, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সোনারগাঁও হোটেল, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, লিকুফায়েড পেট্রোলিয়ম গ্যাস, সিলেট গ্যাসফিল্ড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগাং ডকইয়ার্ড, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, টেলিটক ও টেলিফোন শিল্প সংস্থা।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ১১ মের বৈঠকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন, এর মধ্যে রয়েছে—যেসব বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারি মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; দেশের বেসরকারি খাতের ভালো ও বড় বড় কোম্পানিকে বাজারে আনতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান বাড়ানো; বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এনে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া; পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বড় কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকের বদলে পুঁজিবাজারমুখী করা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধান ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।
বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, ভালো ও বড় কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে না চাইলে সরকার জোর করবে না। তাই প্রণোদনা দিয়ে তাদের বাজারে আনার চেষ্টা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র অন ষ ঠ ত ব এসইস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল