প্রতিযোগিতামূলক পেশাজীবনে টিকে থাকতে হলে শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ থাকলে হয় না, পাশাপাশি প্রয়োজন যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, দল ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও নেতৃত্বের গুণ। এই সব চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ক্যারিয়ার ক্লাব শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে গিয়ে নিজেদের যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়ে থাকে শিক্ষার্থীর। শুরুর দিকে অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েট সরাসরি ফ্যাক্টরি লেভেলে চাকরিতে প্রবেশ করলেও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে শিক্ষার্থীদের চাকরি বাছাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গি। ২০১৫ সালের দিকে বুটেক্সের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মার্চেন্ডাইজিং, ব্র্যান্ড, বায়িং হাউসসহ বৈচিত্র্যময় করপোরেট ভূমিকার প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। তবে সে সময় পেশাদার দক্ষতা প্রশিক্ষণের অভাব, বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সংযোগ না থাকা, পেশাদার আচরণের দুর্বলতাসহ নানা সমস্যা অনেককেই পিছিয়ে রাখছিল অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পড়ালেখার
পাশাপাশি ক্যারিয়ার উন্নয়ন এবং পেশাদার দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন উদ্যমী শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০১৬ সালের দিকে বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাবের যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারমুখী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওয়ার্কশপ, ইন্ডাস্ট্রি এনগেজমেন্ট সেশন, সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ, জব ফেয়ার, সিভি সংগ্রহ, সার্কুলার চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, স্কলারশিপে বিদেশে পড়াশোনা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখাসহ বিভিন্ন কাজ করছে বুটেক্স ক্যারিয়ার ক্লাব। ক্লাবটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার কৌশল শিখে এবং পেশাদার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হয়। ক্লাবটিতে আছে সাতটি বিভাগ। বিভাগগুলো হলো আইটি, ফিন্যান্স, ক্রিয়েটিভ অ্যাফেয়ার্স, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড প্রমোশন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, লজিস্টিকস ও ইন্ডাস্ট্রি এনগেজমেন্ট। প্রতিটি বিভাগের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে আয়োজন করা হয় নানা সেশন, ওয়ার্কশপ ও ইভেন্ট যা সদস্যদের মাঝে পেশাদারিত্ব, নেতৃত্ব ও দলগত কাজের অভিজ্ঞতা তৈরি করে। বর্তমানে ক্লাবটির নবম কার্যনির্বাহী পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ৮০ জন। ক্লাবটির সভাপতি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হজের ইতিহাসে আক্রমণ ও ডাকাতি
রাজনৈতিক সংঘাত, মহামারি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও আগ্রাসী আক্রমণ এবং হজযাত্রীদের লুণ্ঠন হজের আয়োজনকে ব্যাহত করেছে। এই তৃতীয় পর্বে আমরা মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ, সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ এবং হজের পথে ডাকাতির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ
মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ মুসলিম অঞ্চলগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হজের পথকে বিপজ্জনক করে তুলেছিল। মঙ্গোলদের আক্রমণ ৬১৫ হিজরি (১২১৮ খ্রি.) সনে শুরু হয়, যখন তারা মঙ্গোলিয়া ও উত্তর চীন থেকে খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এই আক্রমণ ইরান, ইরাক এবং মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস করে দেয়। আবু শামা মাকদিসি (মৃ. ৬৬৫ হি.) তাঁর আয-যাইল আলা আর-রাওযাতাইন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ৬১৭ হিজরি (১২২০ খ্রি.) সনে খোরাসান ও পারস্য অঞ্চল থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি, কারণ মঙ্গোলদের ভয়ে পথ অনিরাপদ হয়ে পড়েছিল।
৬৩০ হিজরি (১২৩৩ খ্রি.) থেকে মঙ্গোলদের আক্রমণ ইরাকের দিকে মোড় নেয়, যা আব্বাসি খিলাফতের কেন্দ্র বাগদাদকে হুমকির মুখে ফেলে। ইমাম জাহাবি (মৃ. ৭৪৮ হি.) তাঁর তারিখ আল-ইসলাম গ্রন্থে বলেছেন যে এই সময়ে ইরাক থেকে হজ বন্ধ হয়ে যায়, কারণ মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে যুদ্ধে অংশ নিতে হয়। আব্বাসি খলিফা মুস্তানসির বিল্লাহ (মৃ. ৬৪০ হি.) হজ ত্যাগ করে মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফতোয়া পান। এই সিদ্ধান্ত হজ বন্ধের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল। ৬৫৬ হিজরি (১২৫৮ খ্রি.) সনে মঙ্গোলরা বাগদাদ দখল করে আব্বাসি খিলাফতের পতন ঘটায়, যা ইরাক থেকে হজ বন্ধের সময়কালকে আরও দীর্ঘায়িত করে।
ক্রুসেডারদের আক্রমণও হজের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। ৪৯২ হিজরি (১০৯৯ খ্রি.) সনে ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন ও শামের উপকূলীয় অঞ্চল দখল করে। ইবনে কাসির (মৃ. ৭৭৪ হি.) তাঁর আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ৬২৪-৬২৭ হিজরি (১২২৮-১২৩১ খ্রি.) সনে শামের হাজিরা তিন বছর ধরে হজে যেতে পারেননি। ক্রুসেডারদের উপস্থিতি ও আইয়ুবি শাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব পথের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে। এই আক্রমণগুলো হজের পথে ভয় ও অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়, যা হাজিদের যাত্রাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল।
আরও পড়ুনহজের ইতিহাসে মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ২৪ মে ২০২৫কখনো কখনো শাসকেরাও লুটেরাদের সঙ্গে সমঝোতা করতেন। ৩৮৫ হিজরি সনে বদর ইবনে হাসানওয়াইহ কুর্দি (মৃ. ৪০৫ হি.) আসফার আরাবিকে ৫ হাজার দিনার প্রদান করেন, যাতে হাজিরা নিরাপদে যাত্রা করতে পারেন।সামাজিক-অর্থনৈতিক বাধা
হজ পালনের জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাতেমি ও আব্বাসিদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সময় মিসর ও ইরাকে অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। ইবনে জাওজি (মৃ. ৫৯৭ হি.) তাঁর আল-মুনতাজাম গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে ৪১১ হিজরি (১০২১ খ্রি.) সনে দক্ষিণ ইরাকের ওয়াসিতে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের কারণে হজে গমন বন্ধ হয়ে যায়। এই অর্থনৈতিক সংকট হাজিদের জন্য পথের খরচ বহন করা অসম্ভব করে তুলেছিল।
৪৪১ হিজরি (১০৫০ খ্রি.) সনে বাগদাদে সুন্নি-শিয়া দাঙ্গা হয়, যা ইবনে কাসিরের বর্ণনা অনুযায়ী হজে যাতায়াত বন্ধের কারণ হয়। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত হাজিদের মধ্যে ভয় ও অনাস্থা সৃষ্টি করে, যার ফলে তাঁরা হজে যাওয়া থেকে বিরত থাকতেন।
ডাকাতি ও লুটপাট
আরব উপদ্বীপের মরুভূমি এবং অন্যান্য অঞ্চলের পথে বেদুইন ও অন্যান্য লুটেরা গোষ্ঠী হাজিদের কাফেলার ওপর হামলা চালাত। ইবনে আসির (মৃ.৬৩০ হি.) তাঁর আল-কামিল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে ৩৮৪ হিজরি (৯৯৫ খ্রি.) সনে আসফার আরাবিকে নামক একজন বেদুইন নেতা হাজিদের পথ রোধ করে এবং তাদের সম্পদ দাবি করে। আলোচনার পর হাজিরা সময়ের অভাবে ফিরে আসেন এবং হজ পালন করতে পারেননি।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল ৪২৪ হিজরি (১০৩৪ খ্রি.) সনে। ফাসি (মৃ. ৮৩২ হি.) তাঁর শিফা আল-গারাম গ্রন্থে বলেছেন যে এই বছরে ইরাক ও মিসর থেকে হাজিরা বেদুইনদের ভয়ে হজে যেতে পারেননি। যাঁরা বসরা থেকে যাত্রা করেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও লুটেরারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁদের সম্পদ লুট করে।
কখনো কখনো শাসকেরাও লুটেরাদের সঙ্গে সমঝোতা করতেন। উদাহরণস্বরূপ, ৩৮৫ হিজরি (৯৯৬ খ্রি.) সনে বদর ইবনে হাসানওয়াইহ কুর্দি (মৃ.৪০৫ হি.) আসফার আরাবিকে ৫ হাজার দিনার প্রদান করেন, যাতে হাজিরা নিরাপদে যাত্রা করতে পারেন। ইবনে তাগরিবারদি (মৃ. ৮৭৪ হি.) এ ঘটনার উল্লেখ করে বলেছেন যে এটি একটি নিয়মিত রীতিতে পরিণত হয়েছিল।
আরও পড়ুনমদিনার হজ কার্যালয় যেন 'বাংলাদেশ'২২ জুন ২০২৪৬৫৬ হিজরি (১২৫৮ খ্রি.) সনে মঙ্গোলরা বাগদাদ দখল করে আব্বাসি খিলাফতের পতন ঘটায়, যা ইরাক থেকে হজ বন্ধের সময়কালকে আরও দীর্ঘায়িত করে।ফিকহের দৃষ্টিকোণে ডাকাতির প্রভাব
হজের পথে ডাকাতি ও লুটপাট ফিকহের আলোচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে। ইমাম কাসানি (মৃ. ৫৮৭ হি.) তাঁর বাদাইউস সানাই গ্রন্থে বলেছেন যে পথে নিরাপত্তার অভাব হজের ফরজ হওয়াকে বাতিল করে। মালিকি ফকিহরা দীর্ঘ পথে ডাকাতির ঝুঁকির কারণে হজের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার ফতোয়া দিয়েছিলেন। ইবনে রুশদ (জাদ্দ) (মৃ. ৫২০ হি.) ও তুরতুশি (মৃ. ৫২০ হি.) বলেছেন যে পথের ঝুঁকি হজকে নিষিদ্ধ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
আল–জাজিরা ডট নেট অবলম্বনে
পর্ব-২: হজের ইতিহাসে মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
পর্ব-১: হজের ইতিহাসে রাজনৈতিক ঘটনাচক্র
আরও পড়ুনসহজ ওমরাহ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫