স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিতে ঈদের ছুটি বিন্যাসের দাবি
Published: 27th, May 2025 GMT
ঈদুল ফিতরের ন্যায় ঈদুল আজহায় স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুবিধার্থে ঈদের ছুটি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে ঈদের আগে ছুটি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বেলা সাড়ে ১১ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো.
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় সরকারের পক্ষ থেকে ১০ দিন ছুটি ঘোষণার বিষয়টি ইতোপূর্বে গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। কিন্তু কোন প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই এই ছুটি ঘোষণা করায় দেশের যাত্রীসাধারণ এবারের ঈদুল আজহায় ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিষয়টি সরকারের সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও তেমন কোন সাড়া মেলেনি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত ২৫ বছরের মধ্যে বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রার পেছনে মূলত তিনটি কারণ ছিল- ১. ঈদের আগে ৪ দিনের লম্বা ছুটি ২. সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রভাবশালী মাফিয়া নেতারা পালিয়ে যাওয়ায় সড়কে মাস্তানিতন্ত্রের অবসান ৩. সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তরসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে মানুষের ভোগান্তিমুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করা গেছে। এই কারণে ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতরের তুলনায় ২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ২১.০৫ শতাংশ, নিহত ২০.৮৮ শতাংশ, আহত ৪০.৯১ শতাংশ কমেছিল। এই কারণে অন্তর্বর্তী সরকার নানা মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এবারের ঈদের লম্বা ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো সক্ষম হবে।’’
সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার পবিত্র ঈদুল আজহায় আগামী ৫ জুন থেকে ১৪ জুন মোট ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছেন। লম্বা ছুটির কারণে এবারের ঈদে বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে পারে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, এবারের ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ১০ লাখ ও ঢাকার আশেপাশে জেলা থেকে আরো ৩০ লাখসহ ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে দেড়কোটি মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারে।
৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলে ঈদের আগে ৫ ও ৬ জুন বৃহস্পতি ও শুক্রবার মাত্র ২ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। আর ৬ জুন ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলে ঈদের আগে মাত্র ৫ জুন বৃহস্পতিবার ১ দিনের সরকারি ছুটি থাকে। ঈদের আগে ঈদের ছুটি ২ দিন হলে একদিনে ৭৫ লাখ করে দুই দিনে দেড়কোটি মানুষ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে গেলে দেশের যাত্রীসাধারণ ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদের আগে ঈদের ছুটি ১ দিন হলে ১ দিনে দেড়কোটি মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি পাঠানোর মত সড়ক, রেল, নৌ কোন পথের যানবাহনের সক্ষমতা আমাদের দেশে নেই। এমনিতেই ঈদুল আজহায় সড়কের পাশে পশুরহাট ও পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে যানজট অব্যাহত থাকবে, ফলে যানবাহনের গতি কিছুটা কমে আসবে। এই ১ বা ২ দিনে ঢাকা থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে রাস্তায় ভয়াবহ দুর্ভোগ তৈরি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে দেওয়া ১১ ও ১২ জুন ২ দিনের ছুটি বিন্যাস করে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন মঙ্গল ও বুধবার এগিয়ে আনলে পবিত্র ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহায় ও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত হবে বলে দেশের যাত্রীসাধারণ মনে করে। তাই দুর্ভোগ কমাতে সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আর্কষণ করেছে সংগঠনটি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘‘ঈদের লম্বা ছুটি কেবল বিনোদনের জন্য নয়, মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমানো, ভাড়া নৈরাজ্য কমানো ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমানোর জন্য ব্যবহার করা জরুরী।’’
তাই এই ছুটি ব্যবস্থাপনা ঠিক করে ঈদের আগে ছুটি বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদের পরের ১১ ও ১২ জুনের ছুটি বাতিল করে ৩ ও ৪ জুন ছুটি নিশ্চিত করা গেলে দেশের মানুষজন পবিত্র ঈদুল ফিতরের মত ঈদুল আজহায় ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পাবে। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমে আসবে ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমবে, পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ৪ দিন ছুটি ছিল বলেই মানুষজন ধাপে ধাপে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়েছিল।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশসমূহ:
১. ঈদের পরের ছুটি কমিয়ে ঈদের আগে ৩ ও ৪ জুন ২ দিনের ছুটি বাড়ানো।
২. ঈদযাত্রায় ফিটনেস বিহীন লক্কড়-ঝক্কড় বাস ও লঞ্চ চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩. পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. জাতীয় মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমন চলাচল কঠোরভাবে বন্ধ করা।
৫. কালবৈশাখী মৌসুম হওয়ায় নৌ-পথে ফিটনেস বিহীন লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করা।
৬. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা।
৭. জাতীয় মহাসড়কের টোল পয়েন্টগুলোতে যানজট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।
৮. সড়কে চলাচলকারী পশুবাহী ট্রাক থামিয়ে যানজট তৈরি ও সড়কের পাশে পশুরহাট থেকে সৃষ্ট যানজট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
৯. ঈদের আগে প্রতিটি জাতীয় মহাসড়ক সড়ক নিরাপত্তা অডিট নিশ্চিত করা।
১০. সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় রাখা।
১১. সড়কে ডাকাতি, পথে পথে ছিনতাই বন্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো জরুরী।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনটির চেয়ারম্যান সাবেক নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায় দাশ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, মো. আরিফ প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ঈদ র ছ ট দ র ঘটন সরক র র পর বহন স গঠনট য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ড. ফরিদ আহমদ সোবহানীকে সংবর্ধনা দিল গ্রীন এইচ আর প্রফেশনালস
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) হিসেবে অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী নিয়োগ পাওয়ায় তাকে সংবর্ধনা জানিয়েছে পেশাদার মানবসম্পদ উন্নয়নভিত্তিক সংগঠন ‘গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ’।
সংগঠনটির ৩০৯তম পাঠচক্র শেষে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. সোবহানীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশের সদস্য, উপদেষ্টা এবং কর্পোরেট ও শিক্ষাজগতের বিভিন্ন পেশাজীবী।
অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাবিদ ও গবেষক। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বারলেতে অবস্থিত সোল প্লাতজে ইউনিভার্সিটির ইকোনমিক্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ভিজিটিং প্রফেসর, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক অস্ট্রেলিয়ান একাডেমি অব বিজনেস লিডারশিপের একজন রিসার্চ ফেলো এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি এমএআরএ এর অ্যাকাউন্টিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটেরও ভিজিটিং প্রফেসর।তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের নিয়োগ বোর্ডে এক্সটারনাল মেম্বার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক সোবহানীর শিক্ষা জীবনের শুরু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, যেখানে তিনি অ্যাকাউন্টিংয়ে মেজরসহ বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দ্বিতীয় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে এইচআর অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন।তিনি দেশে-বিদেশে সম্মানিত জার্নাল ও ম্যাগাজিনে প্রায় ১০০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে একাডেমিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রওশন আলী বুলবুল। তিনি বলেন, “ড. সোবহানী আমাদের সংগঠনের অ্যাডভাইজার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে জ্ঞান ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। আমরা গর্বিত যে তিনি ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এটি আমাদের সবার জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা।”
তিনি আরো জানান, গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে গ্রিন এইচআর ধারণা ছড়িয়ে দিতে এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সংগঠনটি ইতোমধ্যে ৫৫টিরও বেশি বই পাঠের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ৩০৯টি পাঠচক্র সম্পন্ন করেছে, যেখানে সফট স্কিল, পাওয়ার বিআই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং সমসাময়িক উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮টি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম এবং তিনটি ট্রেইনার অব ট্রেইনার্স (টিওটি) প্রোগ্রাম সম্পন্ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে “গ্রীন এইচআর ফাউন্ডেশন” গঠনের মাধ্যমে আরো সুসংগঠিত কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনাও রয়েছে।
সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির চিফ অ্যাডভাইজার ড. মোশাররফ হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম (সাবেক হেড অব এইচআর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ), এস এম জাহিদ হাসান (সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, ওয়ালটন গ্রুপ), রানা চক্রবর্তী (সিওও, বাংলাদেশ স্পেশালিস্ট হসপিটাল), মোহাম্মদ ইকরাম হোসেন, সৈয়দ আকরাম হোসেন, সৈয়দ মো. আসিফ রহমান, সাইফুল আমিন হাসানাত, প্রণব চন্দ্র, এমরান হোসেন, তৌহিদ হোসেনসহ কোর মেম্বাররা।
সংবর্ধনায় অংশ নেওয়া সদস্যরা জানান, “গ্রীন এইচআর প্রফেশনালস বাংলাদেশ শুধু পেশাগত উন্নয়নের প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একে অপরকে শেখার ও সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ করার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।”
ঢাকা/এসবি