আগামী অর্থবছরের বাজেটে আমদানি পর্যায়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আমদানি পর্যায়ে এলএনজির ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে গ্রাহক পর্যায়ে দাম কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

আগামী ২ জুন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাজেট দিতে যাচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে এবার বাজেট ঘোষণা করবেন। সেখানে এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে পারেন।

এলএনজি সাধারণত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা হয়। শিল্প খাতে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, সিরামিকস ও সিমেন্ট কারখানায় এলএনজি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া গৃহস্থালি ও পরিবহন খাতে সীমিত পরিসরে ব্যবহার হয় এলএনজি। দেশীয় গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়।

কিছুদিন আগে তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) নিজেদের লোকসান ঠেকাতে আমদানি পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিল। পেট্রোবাংলা বলছে, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সময় তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পেট্রোবাংলাকে এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি পর্যায়েও এলএনজি আমদানি করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর য য় আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষি ও খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ছে বিদ্যুৎ-গ্যাসে কমছে

আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষি ও খাদ্য খাতে সরকারের ভর্তুকি বাড়ছে। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে কমানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা থাকছে নতুন বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের কয়েকটি বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে। এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। 

চলতি বাজেটে কৃষি ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে তা ২০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। এ বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই সারে ভর্তুকি বাবদ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হলো, বর্তমান বিশ্বে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ, ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়া ও জোগান ঘাটতির কারণে বাণিজ্যে স্থবিরতা রয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট এবং খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই স্থানীয় পর্যায়ে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে বাড়তি নজর দেওয়া হবে। 

চলতি বাজেটে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তায় ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে বেড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ফলে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, টিসিবির জন্য আগামী বাজেটেও রাখা হচ্ছে ১৯ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে আগের অর্থবছরের বকেয়া পরিশোধ করার ফলে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৬২ হাজার করা হয়। চলতি অর্থবছর বকেয়ার প্রায় পুরোটাই পরিশোধের পাশাপাশি এ খাতের সিস্টেম লস কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামীতে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। তাই নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। 

জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ৭ হাজার কোটি টাকা। এ খাতের বরাদ্দ মূলত এলএনজি আমদানিতে ব্যয় করা হয়। সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহে অতিরিক্ত চার কার্গো এলএনজি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ কারণে সংশোধিত বাজেটে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। 

বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমানো হলে দাম বাড়ানো হবে কিনা, সে বিষয়ে মানুষের উদ্বেগ থাকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই এসবের দাম বাড়ানো হবে না। সিস্টেম লস কমানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন বাড়িয়েই ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ থাকবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে যেভাবেই হোক, জ্বালানি নিশ্চিত করা হবে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে না। ‘সিস্টেম লস’ কমিয়ে ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গ্যাস সংকট কাটাতে বাপেক্সকে অন্তত পাঁচটি কূপ খননের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো গেলে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলে মনে করছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। 

সাবেক অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের ভর্তুকিতে লাগাম টানার উদ্যোগ ইতিবাচক। শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাগর উত্তাল, চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ
  • কৃষি ও খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ছে বিদ্যুৎ-গ্যাসে কমছে