সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টিতে পানি বাড়ছে নদী ও হাওরে, বড় বন্যার আশঙ্কা নেই
Published: 30th, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা ঢলে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। আগামী তিন দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ১২ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭১ মিলিমিটার। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হচ্ছে, তবে সেটি স্বাভাবিক মাত্রায়। মূলত চেরাপুঞ্জিতে বেশি বৃষ্টি হলে ভাটির সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় আজ সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ৮৮ মিটার, যা বিপৎসীমার ১৯২ সেন্টিমিটার নিচে। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৮০ মিটার।
এ ছাড়া জেলার পাটনাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি, রক্তি, বৌলাই, খাসিয়ামারাসহ সব নদ–নদীর পানি বেড়েছে। পানি বাড়লেও সুনামগঞ্জে আপাতত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, পানি বাড়বে। তবে বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদে বন্যা হতে পারে।
পাউবো ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল নেমে প্রথমেই সীমান্তবর্তী জেলার ছাতক, সুনামগঞ্জ সদর দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এই পাঁচ উপজেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। তবে হাওরে এখনো পানি কম থাকায় বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা কম।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখন হাওরে কোনো ধান নেই। ধান কাটা শেষ। তাই বন্যা হলেও ধানের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সীমান্তবর্তী উঁচু এলাকায় সবজির চাষ করা হচ্ছে। অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানিতে সেগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা আছে। বন্যায় সড়ক প্লাবিত হলে গ্রামাঞ্চলের লোকজন যাতায়াতে বিড়ম্বনায় পড়েন। আবার গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তি বেড়েছে।
সদর উপজেলার সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের ইব্রাহিমপুর গ্রামের গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, তাঁদের এলাকায় সবজি হয় বেশি। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সবজির ক্ষতি হয় বেশি। একই সঙ্গে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনেকেই মৌসুমি গবাদিপশু পালন করেন। বন্যা হলে তাঁরা ভোগান্তিতে পড়েন বেশি।
বন্যা সতর্কতায় প্রস্তুতি
সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ মে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি তাঁদের দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জে আগামী তিন দিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হবে। এই মৌসুমে এমন বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। বৃষ্টি হবে, পানি বাড়বে এটাও স্বাভাবিক। তাই বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র আশঙ ক বন য র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত
নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।
কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।
১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)
আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)
ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।
৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)
ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।
৪. ঋণের মেয়াদ
কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।
৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)
শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।
৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)
ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।
৭. প্রসেসিং ফি
আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।
৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)
বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।
৯. জামানত (কোলেটারাল)
ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।
১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও
আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।