মহাসড়কে বার বার ডাকাতি, ঈদযাত্রায় শঙ্কায় উত্তরের যাত্রীরা
Published: 30th, May 2025 GMT
ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কে যাত্রীবাহী দু’টি বাস, চারটি মাইক্রো-প্রাইভেটকার ও দু’টি গরু-পণ্যবাহী ট্রাকসহ গত ছয় মাসে অন্তত সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বাসে ডাকাতি ও তল্লাশিকালে কয়েকজন নারী বাসযাত্রীকেও যৌন হয়রানি করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে সম্প্রতি ডাকাতদলের লুটের গরুর ট্রাকের চাপায় গুরুতর আহত হয়ে কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম প্রাণ হারান।
মহাসড়ক ছাড়াও সিরাজগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরে চৌহালী, কামারখন্দ, কাজিপুর ও শাহজাদপুরে দশটি চুরি-ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে ঈদপূর্ব যাতায়াতকারী মানুষজনের মধ্যে এবারও ডাকাতির শঙ্কা রয়েছে। প্রতিটি ডাকাতির ঘটনার পর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও আসন্ন ঈদযাত্রায় আবারও ডাকাতি হয় কিনা, এমন আশঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ। ঈদপূর্ব এক জিজ্ঞাসায় এমন আশঙ্কার কথা সমকালকে জানিয়েছেন কয়েকজন।
জানা যায়, যমুনার সেতুর পূর্ব পাড়ের ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-রংপুর মহাসড়কের এলেঙ্গায় গত ২০ মে ঢাকা-রংপুরগামী ইমরান পরিবহণ নামের বাসে ডাকাতি হয়। ডাকাতির সময় তল্লাশির নামে কয়েকজন নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি ঘটে। গত ২৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের এলেঙ্গার গরুবোঝাই ট্রাক লুটে নিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে উত্তরাঞ্চল অভিমুখে যাবার চেষ্টা করে একদল ডাকাত। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে উল্টে টাঙ্গাইলের দিকে যেতে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ের সয়দাবাদ এলাকায় দায়িত্বরত সেতু পশ্চিম থানার পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলামকে চাকার নিচে পিষে মেরে পালিয়ে যায়।
রোজার ঈদের আগে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোলচত্বর সাসেক প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতারের বেস ক্যাম্পে গত ১৩ মার্চ দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তা প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে ব্যাটারিসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। সদর থানায় মামলা হলেও অপরাধীরা ধরা পড়েনি। নিরাপত্তাপ্রহরীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে ঘটনার পরদিন থানায় রাতভর আটকে নির্যাতন-হয়রানি করা হয়। পরে ২৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। নির্যাতিত ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আকতার লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী একলাছ উদ্দিন সমকালকে বিষয়টি পরবর্তীতে জানান।
গত ২২ মার্চ ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীর কয়েকজন ব্যবসায়ীর গরু ও মহিষ বিক্রির ৭৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় সশস্ত্র অবস্থায় হোন্ডায় আসা একদল ছিনতাইকারী। যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড়ে গত ৭ ও ৯ মার্চ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ঝাঐল, কোনাবাড়ী ও কড্ডায় পৃথক তিনটি ঘটনায় মাইক্রোবাসে ডাকাতি হয়। জামায়াতপন্থি কয়েকজন শিক্ষক ঢাকা থেকে ফেরার পথে ডাকাতের কবলে পড়েন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঢাকা-নাটোরগামী রয়েলস্ পরিবহনে ডাকাতির সময় নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির শিকার হয়। যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে কড্ডার মোড়ে ৩০ ডিসেম্বর গরু বোঝাই আরেকটি ট্রাক ডাকাতির কবলে পড়ে। ঠাকুরগাঁও থেকে গরুভর্তি একটি ট্রাক নারায়ণগঞ্জ যেতে কড্ডায় ডাকাতির কবলে পড়ে। ওই মহাসড়কের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ২০২২ সালের ২ আগস্ট ঢাকা-কুষ্টিয়াগামী পৃথক বাসে ডাকাতির সময় এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া, গত ২১ মে সিরাজগঞ্জের চৌহালীর যমুনার দুর্গম ঘোরজান ইউনিয়নের মুরাদপুর-কাউলিয়া একদল ডাকাতের হাতে নিজ গো-খামারে খুন হন তারা মিয়া। তিনটি গরু লুটে নিয়ে নাতি ইব্রাহিমকে বস্তাবন্দি করা হলেও প্রাণে বেঁচে যান। গত ৩ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের চৌহালী এনায়েতপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে কৃষক আলমগীর তার ও তার স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে গোয়ালের প্রায় ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ১১টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল। গত ২৪ মার্চ জেলার কাজীপুরের কুনকুনিয়া গ্রামে মাশফী ডেইরি ফার্মের ৪টি গরু লুটে নেয় ডাকাতদল। এছাড়া, শাহজাদপুরের পোতাজিয়ায় ৩ ফেব্রুয়ারি ও সরিষাকোলে ৭ মার্চ দু’টি খামারে ৬টি গরু-ছাগল লুটের ঘটনা ঘটে।
ঢাকার ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী রহমত আরা পারভীন শুক্রবার মুঠোফোনে জানান, ‘প্রতিবছর সাধারণ ঈদের ছুটিতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে নীলফামারী শ্বশুড়বাড়ি রাতে নাইটকোচে যেতাম। সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল জেলার ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গত কয়েক মাসে কয়েকটি ডাকাতির খবর শুনে এবার আগে থেকেই দিনেরবেলার আগাম টিকেট কেটেছি।’ এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত দিনাজপুর ঘোড়াঘাটের বাসিন্দা মিজনু বেগমও এমন আশঙ্কার কথা বলেন।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠার মীর আকতারের বেস ক্যাম্পে গত ১৩ মার্চ ডাকাতির ঘটনাটি আমি যোগদানের আগে। নতুন কোন চুরি-ডাকাতির ঘটনা যাতে না ঘটে, পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা গত কয়েকদিন থেকেই দিনরাত কাজ করছি।’
সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি এবং ১৪টি ডাকাতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো.
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘চৌহালীর ডাকাতির ঘটনার পর পুলিশ তৎপর হওয়ায় নতুন কোনো ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। আগামী ১ জুন থেকে জেলা পুলিশের ৫ শতাধিক সদস্য পালাক্রমে দিনরাত্রি ঈদের আগে জেলার ৮৮ কিলোমিটার মহাসড়ক বাদেও অভ্যন্তরের আঞ্চলিক সড়কে দায়িত্ব পালন করবেন।’
হাইওয়ে পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-রাজশাহী ও বগুড়া-নগরাড়ি মহাসড়কের ৬৩টি পয়েন্টে আমাদের ছয় শতাধিক পুলিশ ঈদের নিরাপত্তায় থাকছেন। হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-সেনাবাহিনী আগে থেকে তৎপর। ইনশাল্লাহ, এবার মহাসড়কে ডাকাতির আশঙ্কা নেই।’
এদিকে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গত ১৭ ফেব্রুয়ারির ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মানিকগঞ্জের শহিদুল ইসলাম মুহিত, শরীয়তপুরের জাজিরার সবুজ ও ঢাকার সাভারের শরীফুজ্জামান (২৮) এবং একই মহাসড়কে মির্জাপুরে গত ২০ মে পৃথক বাস ডাকাতির ঘটনায় সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের রহিমপুরের সাব্বির হোসেন, সিহাব সরকার ও জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৪ এপ্রিল যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ট্রাক চাপার তিনদিন পর কনস্টেবল রফিকুল খুনের আসামি নুর ইসলামকে গত ২৭ মে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এছাড়া, গত ২২ মার্চ মির্জাপুরে রাজশাহীর গরু ও মহিষ ব্যবসায়ীর ৭৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় হোন্ডা, পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি ও লুটের ৬ লাখ টাকাসহ তিনজন গ্রেপ্তার হন। যৌথ অভিযানে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে গ্রেপ্তার হন মাইক্রোবাসচালক মিলন, যাত্রাবাড়ী থেকে ইসমাইল হোসেন মামুন ও শুটার সাগর বারুই খিলগাঁও থেকে।
টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আদনান বলেন, ‘ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রাতে ছদ্মবেশে ছিনতাইকারীরা প্রাইভেটকারে যাত্রী উঠিয়ে তাদের জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নেওবার বিষয় জেনে চক্রকে ধরতে চেষ্টা চলছে। এছাড়া, গত ২২ মার্চ মির্জাপুরে রাজশাহীর গরু ও মহিষ ব্যবসায়ীর ৭৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় প্রাইভেটকারসহ একটি পিস্তল ও ১০ রাউন্ড গুলি এবং লুটের ৬ লাখ টাকাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ স র জগঞ জ র ড ক ত র ঘটন র ঘটন র ড ক তদল ইসল ম আশঙ ক ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বায়ুদূষণ রোধের সমাধান আছে, আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই
বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধান সবারই জানা আছে। আইন আছে, বিধান আছে। কিন্তু সমাধান করি না। যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করা হয় না। এখন সময় এসেছে এগুলো কার্যকর করতে হবে। সবাইকে নিয়ে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
‘নীরব ঘাতক বায়ুদূষণ: সমস্যার গভীরতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খ্যাতিমান জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে শনিবার বিকেলে যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ও ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্ট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
সেমিনারে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বায়ুদূষণের কারণ ও প্রতিকার এবং বায়ুদূষণের কারণের স্বাস্থ্যগত সমস্যার দিক তুলে ধরে দুটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, নগর–পরিকল্পনাবিদ, চিকিৎসক ও পরিবেশবাদীরা আলোচনায় অংশ নেন।
প্রকৌশলী সরদার আমিন তাঁর তথ্যবহুল গবেষণাপত্রে বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে কোনো শহরে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ৫০ থাকা ভালো। এই মাত্রা ১০০ পার হলেই তা বিপজ্জনক। ঢাকায় ২০২৪ সালে একিউআই মাত্রা ছিল ১২৪। এই মাত্রা স্থায়ী ছিল ৩৫ দিন। এত দিন ধরে এত উচ্চমাত্রা একিউআই বিশ্বে আর কোনো দেশে ছিল না।
দিল্লিতে একিউআই মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল ২০৯, তবে তা ছিল মাত্র ১০ দিন। লাহোরে এই মাত্রা ১২৬ আর দূষণের মেয়াদ ছিল ১০ দিন। এ কারণে ঢাকা এখন বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের শহর হলেও স্থায়িত্বের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে বলে গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।
সরদার আমিন বলেন, জনঘনত্বের নিরিখেও ঢাকা শীর্ষে। এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮৭ হাজার মানুষের বাস, যেখানে আদর্শ জনঘনত্ব হওয়া উচিত প্রতি বর্গকিলোমিটারে সাড়ে ছয় হাজার। এই বিপুল জনসংখ্যার চাপও বায়ুদূষণের একটি কারণ। এত মানুষের খাবার তৈরির জন্য রান্নাঘরে যে ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, তা বায়ুকে দূষিত করছে।
এ ছাড়া অপর প্রধান কারণের মধ্য মোটরযানের ধোঁয়া, ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, নির্মাণসামগ্রী ও নির্মাণকাজের ধুলাবালি প্রভৃতি। বাতাস মিশে থাকা ধোঁয়া ও বিভিন্ন ধরনের অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মানবদেহে প্রবেশ করে মারাত্মক ক্ষতি করছে। বায়ুদূষণ রোধে ১৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এই গবেষক।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন চিকিৎসক তামান্না বাহার। তিনি বলেন, বায়ুদূষণ বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ। গত বছর দেশের বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫–এর মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে শনাক্ত করা হয়েছে ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি।
গবেষণাপত্রে বলা হয়, বাতাসে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা মধ্যে যেসব ক্ষতিকর উপাদান থাকে তা কাশি, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি অ্যালার্জি, নিউমোনাইটিস থেকে হৃদ্রোগ ও কিডনির রোগ, ক্যানসার, স্নায়বিক রোগ এবং গর্ভবতীদের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। দেশে ২০২১ সালের এক জরিপে ২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়েছিল।
তামান্না বাহার বলেন, এ থেকেই বায়ুদূষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করা যায়। প্রতিবছর এত মানুষ মারা যাচ্ছে। এর সঙ্গে বিপুল চিকিৎসা ব্যয় পরিবার ও সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, শুধু বায়ু নয়, পানি, মাটিসহ দেশে পরিবেশের সবকিছুই খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এসব নিয়ে অনেক সেমিনার, গবেষণা হয়েছে। কী করণীয় তা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিবেশ, নদী, পানি, বায়ু—সবকিছু নিয়েই ভালো ভালো আইন ও বিধিমালা আছে। কিন্তু কোনো কিছু সঠিকভাবে কার্যকর করা হয় না। এটাই হলো প্রধান সমস্যা। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। এখন সময় এসেছে, বিপুল জনমত তৈরি করে জোরদারভাবে আইন প্রয়োগের দাবি তুলতে হবে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও বায়ুদূষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ঢাকার বায়ুদূষণ মাত্রা ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে কেবল করোনাকালে (২০২০ সাল) অল্প কিছু সময়ের জন্য বায়ুদূষণ কমেছিল। এর পর থেকে ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে ঢাকা এখন বিশ্বের তৃতীয় দূষিত বায়ুর শহর।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, সারা দিনের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেলা তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শহরে দূষণের মাত্রা একটু কম থাকে। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে হলে নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। করোনাকালে মাস্ক ব্যবহারের যে অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, তা বহাল রাখলে নাগরিকেরা উপকৃত হবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক নগর–পরিকল্পনাবিদ শেখ মো. মেহেদী হাসান বলেন, এই নগর গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। আইন আছে বটে, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে ক্ষমতাবানদের জন্য কোনো আইন নেই। তারা জলাধার ভরাট করছে, নদী দখল করছে। সব রকমের দূষণে সঙ্গে তাদের ভূমিকা আছে। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।
প্রকৌশলী আল্লামা আর রাজি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে দূষণ জড়িত। তবে দূষণ রোধে সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মী চিকিৎসক লেনিন চৌধুরী বলেন, বায়ুদূষণের ফলে শুধু মানুষের সমস্যাই হচ্ছে না, সমগ্র বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে জীবজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দূষণরোধে যে আইন ও বিধিমালা রয়েছে এবং উচ্চ আদালতের যে ১২ দফা নির্দেশ রয়েছে, সেগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলি। সঞ্চালনা করেন চিকিৎসক আনোয়ারুল আনাম কিবরিয়া।