আসামে কাদের লক্ষ্য করে আদিবাসী, মূল নিবাসীদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দিল হিমান্তের সরকার
Published: 30th, May 2025 GMT
ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় বিজেপিশাসিত আসাম রাজ্যের মন্ত্রিসভা গত বুধবার একটি প্রস্তাব পাস করেছে। এতে বলা হয়েছে, রাজ্যের আদিবাসী, মূল নিবাসী এবং উপজাতি জনজাতিকে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার এই ঘোষণাকে ‘বিপজ্জনক পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীরা।
মূলত বাংলাদেশি বলে রাজ্যের মুসলিমদের চাপে রাখতে বিজেপি–দলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত শর্মার সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি গৌরব গগৈ গতকাল বৃহস্পতিবার হিমান্ত শর্মার সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান। তিনি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি ভবিষ্যতে আসামে সহিংসতা বৃদ্ধি করবে।
বিশ্বশর্মা গত বুধবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর’ বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘আসাম রাজ্যে ধুবড়ি, বরপেটা, নগাঁও, মরিগাঁও, দক্ষিণ শালমারা, গোয়ালপাড়ার মতো এমন অনেক জেলা রয়েছে, যেখানে আমাদের মূল নিবাসী আদিবাসীরা সংখ্যালঘু। তারা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। বিশেষত, সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনার পরে তাঁরা আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, সীমান্তের ওপার থেকে তাঁদের ওপর হামলা হতে পারে বা তাঁদের গ্রামেও হামলা হতে পারে। এই পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসামের এসব অঞ্চলে মূল নিবাসী আদিবাসীদের আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি দেওয়া হবে। আমরা তাঁদের লাইসেন্স দেব।’
হিমন্ত শর্মা যে ছয়টি জেলার কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোতে মুসলিমদের বসবাস বেশি। যেমন ২০১১ সালের শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, বরপেটা জেলায় মুসলমান জনসংখ্যা ৭৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ধুবড়িতে ৭৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ, নগাঁও জেলায় ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ, মরিগাঁওতে ৫২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, দক্ষিণ শালমারায় ৯৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং গোয়ালপাড়া জেলায় ৫৭ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর বাইরেও একাধিক জেলা রয়েছে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। যেমন পশ্চিম আসামের বঙ্গাইগাঁও, দক্ষিণ আসামে করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি, মধ্য আসামে হোজাই এবং দারাং। তবে সেসব জেলায় আগ্নেয়াস্ত্রের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
আসাম সরকার অতীত ও বর্তমানের বক্তব্য অনুসারে এসব জেলায় মুসলিমদের মধ্যে প্রধানত রয়েছেন বাঙালি মুসলমান। যদিও মুসলিম সম্প্রদায়ে বড় অংশ এই বক্তব্যকে অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা ওই রাজ্যেই জন্মেছেন। তাঁরা বাঙালি নন, আসামের মুসলিম। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, ‘আমরা দেখেছি এখানে উপজাতি সম্প্রদায় চূড়ান্ত ভয়ের মধ্যে রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষত বর্তমানে ‘বাংলাদেশি নাগরিকদের’ ফেরত পাঠানোর যে প্রক্রিয়া চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মূল নিবাসী মানুষের নিরাপত্তাহীনতা আরও বেড়েছে। কিছু কিছু গ্রামে মূল নিবাসী মানুষ চূড়ান্তভাবে সংখ্যালঘু।’
বড়পেটা জেলার উদাহরণ দিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করেন, ‘বাঘাবার-জনিয়া নামের এক অঞ্চলে কী হচ্ছে, আমি নিজে তা জানি। সেখানকর গ্রামে উপজাতিদের ৫০০টি পরিবার রয়েছে। তাদের আশপাশে আর কেউ নেই। এই অঞ্চল থেকে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র রাখার আবেদন জানালে আমরা নিশ্চিতভাবে তাঁকে বন্দুক রাখার অনুমতি দেব।’
কংগ্রেসের বিরোধিতা
আসামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও সমাজের বড় অংশের মানুষ বলেছেন, এর ফলে রাজ্যে ও অঞ্চলে সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
আসামের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব গগৈ এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করে বলেন, ‘আসামের মানুষের যেটা প্রয়োজন সেটা হলো চাকরি, কম খরচের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষা। বন্দুকের প্রয়োজন তাদের নেই। কিন্তু সরকার এখন পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে শক্তিশালী না করে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতি সহানুভূতিশীলদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র বিতরণ করতে চাইছে, যা স্থানীয় অপরাধ চক্রের হাতে পৌঁছাবে। এতে ব্যক্তিগত আক্রোশের ভিত্তিতে বিভিন্ন উপদলের মধ্যে সহিংসতা ও অপরাধ বাড়বে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করা হবে।’
গৌরব গগৈ আরও বলেন, এটা সুশাসন নয় বরং অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি পদক্ষেপ, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এবং জঙ্গলের রাজত্বে তৈরি হবে।
কংগ্রেস নেতা বলেন, এই সিদ্ধান্ত মানুষের কল্যাণে করা হয়নি। নির্বাচন নিয়ে যে উদ্বেগ, তা মাথায় রেখে করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
আসামের পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে সীমান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের সঙ্গে আসাম তথা ভারতের সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই স দ ধ ন ত পদক ষ প আস ম র আগ ন য দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি