দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে বাঁচাতে কৃষি খাতের বিনিয়োগে সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক–মজুর সংহতি। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষকদের অবদান এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও গত ৫৩ বছরে কৃষক–মজুরদের স্বার্থ রক্ষায় বড় কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষি খাত সংস্কারের যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে হবে।

রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আজ শনিবার আয়োজিত প্রাক–বাজেট সেমিনারে এসব কথা বলেছেন কৃষক–মজুর সংহতির নেতারা। ‘কৃষি খাতে বিনিয়োগে সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধি’ শিরোনামে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অবিলম্বে ‘কৃষিপণ্য মূল্য কমিশন গঠন’ করে কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান হয়েছে কৃষি খাতে। গত ৫৪ বছরের উন্নয়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিবছরই ৩ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা বৈশ্বিক গড়ের অনেক বেশি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, বহুদিন ধরে কৃষি খাতে ব্যবস্থাগত বদলের লক্ষ্যে সরকারের ভেতরে–বাইরে চেষ্টা চলছে, কিন্তু সরকারি ব্যবস্থার অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে কার্যকর সংস্কার কাজ করে না। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, তবে তা বেসরকারি খাতের মাধ্যমেই। কারণ কৃষি খাতের শতকরা ৯০ ভাগ এখন বেসরকারি খাতের হাতে।

সেমিনারে কৃষক–মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও প্রবীণ কৃষক নেতা দেওয়ান আবদুর রশীদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষকদের অবদান এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও গত ৫৩ বছরে কৃষক–মজুরদের স্বার্থ রক্ষায় বড় কোনো সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আবারও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষি খাত সংস্কারের যে সুযোগ এসেছে তাকে কাজে লাগাতে হবে।

সেমিনারে কৃষি খাতে বিনিয়োগে বাড়ানোর বিষয়ে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। সেমিনারের শুরুতেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে কৃষক পরিবারের শহীদ সদস্য আবু সাঈদসহ সব শহীদের প্রতি দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

কৃষক–মজুর সংহতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিমের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম সবুর, সমাজতান্ত্রিক কৃষক ও ক্ষেতমজুর ফ্রন্টের সভাপতি বজলুর রশিদ ফিরোজ, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুর রহমান, জাতীয় কৃষক জোটের সাধারণ সম্পাদক আশেক ই ইলাহি, প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সংগঠক ইফতেখার আলী, কৃষক–মজুর সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত

ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।

আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।

সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত