ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলা, এক দিন পর ওসি প্রত্যাহার
Published: 31st, May 2025 GMT
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনার এক দিন পর নগরকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সফর আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে নগরকান্দা থানা থেকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সফর আলী নগরকান্দা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো.
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়া সীমান্ত দিয়ে আরো ৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতীয় নারী কারাগারে
এর আগে, শুক্রবার উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভুবকদিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা শাহ্ মো. আরাফাত অভিযোগ করেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এলেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয়।
হামলার ঘটনার পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বৈশাখী ইসলাম অভিযোগ করেন, বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আমাকে রাস্তায় ফেলে মেরেছে।
তবে, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা।
ঢাকা/তামিম/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী সংগঠককে মারধর, দোষীদের আটক করতে এসে পুলিশ হামলার শিকার
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বোনকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়ে ফেরার পথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকের হামলা ও মারধর করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ভবুকদিয়া এলাকায় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মারধরের শিকার বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষা (১৮) সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ভবুকদিয়া এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা করেছেন। তবে উপজেলা বিএনপির নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে খবর পেয়ে মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আসে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। তখন পুলিশ ও ছাত্রদের ওপর হামলা করা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকায় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ভবুকদিয়া এলাকায় নিজ বাড়ির পাশের রাস্তার বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বৈশাখী তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ বক্তব্যে হামলা ও মারধরের অভিযোগ করেন। ওই লাইভ বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি বৈশাখী ইসলাম। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত। আমি একটা ইভ টিজিংয়ের কেস নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিএনপির লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করছে। আমাদের কি জুলাই আন্দোলন করা ভুল ছিল, যার কারণে রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন আমাকে মারছে? তারা আমাকে, একজন মেয়ে বলে, ইচ্ছেমতো চুল ধরে লাথি মেরেছে। আমার আব্বাকে খুঁজছে মারার জন্য। আমি খুব বাজে অবস্থায় আছি। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।’
বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। একই সময় ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও সেখানে যান। পুলিশ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মারধর করা হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে আসে।
হামলায় আহত নগরকান্দা থানা–পুলিশের গাড়ি চালক আবদুল হান্নান শরীফ (৫৬) বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমরা আসামি ধরে আনতে গেলে স্থানীয় দেড় শতাধিক লোক আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে। হামলাকারীরা আমার হাত ও মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়; গাড়ির পর্দা ছিড়ে ফেলে। তবে তাঁরা আসামি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আমরা তাদের ধরে থানায় এনেছি।’
ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল রাত ৯টা থেকে ১০ পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভবুকদিয়া এলাকা অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধ ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন ভবুকদিয়া গ্রামের জালাল ব্যাপারীর ছেলে শরীফ ব্যাপারী (২১)। তাঁর বিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফর আলী বলেন, হামলায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নগরকান্দার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ভাঙ্গা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসিফ ইকবাল বলেন, এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় তিনটি মামলা করা হবে। একটি বৈশাখীর ওপর হামলার ঘটনায় নারী ও শিশু নিযাতন দমন আইনে, একটি হবে বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় এবং অপর মামলাটি হবে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও প্রতিকার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিএনপির এক প্রার্থী ও তাঁর ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ষাকে (বৈশাখী ইসলাম) চুল ধরে টেনে মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলা আমরাই প্রতিরোধ করেছি। আমাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, ওই সমন্বয়ক (বৈশাখী) এবং যে ছেলের সঙ্গে এ ঘটনা, তাঁদের দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।