ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি শিক্ষকদের
Published: 1st, June 2025 GMT
রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা খাতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
রবিবার (১ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে এই দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। পরবর্তীতে স্মারকলিপিটি উপাচার্য প্রধান উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করবেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড.
৮৩টি বিভাগের স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পাশাপশি এই জনপদের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দায়িত, পালন করে যাচ্ছে। মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বুদ্ধিভিত্তিক দিক-নির্দেশনা, রাজপথের নেতৃত্ব এবং সম্মুখসমরে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনন্যসাধারণ ভূমিকা সুবিদিত।
নব্বই-এর সফল স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানসহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে চালকের আসনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্যাসিবাদী সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সূচনা এবং স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নবযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাই নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছেন। ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায়ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাক্তনীরা।
এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিধারা অব্যাহত রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শতাব্দী জুড়ে মানবসম্পদ তৈরির প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে। দেশের সরকারি, বেসরকারি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং বহুজাতিক খাতের সকল পর্যায়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকগণ ধারাবাহিকভাবে অবদান রাখছেন। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সাথে তাঁরা কর্তব্য পালন করছেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে দেশের প্রধান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাদানের দরজা সমাজের সকল আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার মানুষের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে। দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানের এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষকরা বলেন, অবিরত চর্চার মাধ্যমে বিদ্যমান জ্ঞানের বিকাশ, নতুন জ্ঞান সৃজন এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে আলোকিত মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি জাতি বিনির্মাণে সব ক্ষেত্রে অবদান রাখার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা ক্ষেত্রে উপেক্ষার শিকার হয়ে চলেছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের পদচারণা থাকলেও মেধার লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বরাবরই অনীহা পরিলক্ষিত হয়েছে।
ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ ও অবকাঠামো তৈরি করা কখনই সম্ভবপর হয়নি। এ সত্ত্বেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রার পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে শিক্ষকদের, বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভ করা যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকগণের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তবে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তির এই জায়গাটি আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
অপ্রতুল আর্থিক সুবিধা এবং গবেষণার যথোপযুক্ত পরিবেশ ও ব্যবস্থা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকগণের অনেকে বিদেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বিবেচনায় না আনলেও দেশের প্রধান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তুলনা করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধার অপর্যাপ্ততার বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। এই আর্থিক এবং অন্যান্য বাস্তবতা বিবেচনা করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। আর্থিক ও পেশাগত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এবং সম্মানের কথা বিবেচনা করে বিকল্প পেশা গ্রহণের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালটি আজ নিজের মেধাবী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। এটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা ও নানা সমর্থন-সহযোগিতা প্রদান করার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি জাতি গঠনে সর্বোচ্চ অবদান রাখার পথ সুগম করে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর এবং ভারতের আইআইটি এর কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ বিষয়ে ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে যত গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছে, তার সবগুলোতেই ঢাবি অবদান ছিল অগ্রগামী। শুধু তাই নয় শিক্ষা ও গবেষণায়ও ঢাবি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পরেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোন বিশেষ মর্যাদা। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার নজির রয়েছে। আমরা চাই, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবে।”
ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, “বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এবং সর্বশেষ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি।” ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তিনি উপাচার্যকে অনুরোধ জানান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তিনি এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণঅভ য ত থ ন স ম রকল প শ ক ষকদ র অবদ ন র খ উপ চ র য র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রিফকেসবিহীন বাজেট যেসব কারণে ব্যতিক্রম
আগের বছরগুলোতে ব্রিফকেস ছাড়া যেন বাজেট কল্পনা করা যেত না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিফকেস হাতে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করতে আসতেন। তবে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে বাজেট।
সংসদ না থাকায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। এবারের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে বিটিভির ধারণ করা বাজেট বক্তব্যে। এমন বেশকিছু কারণে এবারের বাজেট অন্যান্যবারের তুলনায় ব্যতিক্রম।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন তিনি। যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম আগের বছরের তুলনায় বাজেটের আকার কমল। এ বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা।
আরো পড়ুন:
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বাজেট বাড়ল ৮৪২ কোটি ২১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা
ঠিকাদারি কাজে উৎসে কর কমল
ব্রিফকেসবিহীন
যেহেতু এবারের বাজেট প্রস্তাবনা আগে ধারণ করা এবং জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি, এ কারণে এবারের বাজেটে ব্রিফকেসের মতো আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি।
অর্থ উপদেষ্টা সোমবার বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) স্টুডিও থেকে সরাসরি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নিজের এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অনুমোদন হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। অনুমোদনের পর তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সে সময় তার হাতে কোনো কালো ব্রিফকেস ছিল না।
সেখান থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি বিকেল ৩টায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট বক্তৃতা প্রচার করা হয়। সে সময় স্বাভাবিক পোশাক পরেই ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিটিভিতে তার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন।
বাজেটের আকার কমলো
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যা আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার আগের বছরের তুলনায় ছোট বা কম আকারের বাজেট উপস্থাপন হলো এবার।
এর আগে কখনোই আগের অর্থবছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট পেশ হয়নি দেশের ইতিহাসে।
সংসদের বাইরে বাজেট
অভ্যুত্থান পরবর্তী ভিন্ন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে সংসদের বাইরে। বর্তমানে সংসদ কার্যকর না থাকায় এবারের বাজেট সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে এ বাজেট উপস্থাপন করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও তা প্রচার হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ভিন্ন বাস্তবতায় এবার সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হয় ভিন্ন আঙ্গিকে।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয় ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই, সেহেতু বাজেটের ওপর জুন মাসজুড়ে সাধারণ আলোচনারও সুযোগ নেই। বিধায় এ বছর সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে বাজেট সম্পর্কিত মতামত নেবেন অর্থ উপদেষ্টা। দেশের যেকোনো নাগরিক বাজেট সম্পর্কিত যেকোনো মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। এসব মতামতকে একত্রিত করে যা গ্রহণ করা সম্ভব তা তিনি বাজেটে যুক্ত করে আগামী ২৩ জুন অনুষ্ঠিতব্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করবেন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। উপদেষ্টা পরিষদের ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
জুলাই যোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ও তাদের পরিবারের জন্য বাজেটে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনা রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজও চলমান। শিগগিরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ‘শহীদদের’ পরিবার এবং আহতদের ভাতা দেওয়ার নীতিমালা করা হবে। তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ‘শহীদদের’ পরিবার ও আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।
তারুণ্যের উৎসব
তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের জন্য নতুন অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেট বক্তৃতায় উপদেষ্টা বলেন, যুব সমাজের অমিত শক্তি ও সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তোলা এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ প্রতিপাদ্যকে ঘিরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উদযাপন করা হয়েছে।
আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে সফল যুব উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
এছাড়া তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এমন তহবিল এবারই প্রথম উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা/হাসান/মাসুদ