দুধ এমন এক খাবার, পুষ্টিমানে যার কোনো বিকল্প নেই। দেহের প্রয়োজনীয় সব উপাদান দুধে পাওয়া যায়। ৮ থেকে ৮০ সব বয়সের মানুষের জন্য দুধ বেশ পুষ্টিকর। দুধের পুষ্টিগুণ নিয়ে বললেন ঢাকার গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ারের বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান।
পুষ্টিমানের দিক থেকে তরল দুধ আর গুঁড়া দুধে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। তাদের মূল পার্থক্য আর্দ্রতায়। তরল দুধ বাষ্পীভূত করে সবটুকু পানি সরিয়ে নিলেই তা গুঁড়া দুধে পরিণত হয়। তবে আর্দ্রতা থেকে আরও কিছু পার্থক্য তৈরি হয়, যেমন পরিমাণে ও ওজনে। ১ লিটার তরল দুধে যেখানে সমান তরলের ওজন থাকে, সেখানে ১ কেজি গুঁড়া দুধ তৈরি করতে প্রায় ৬ থেকে ৭ লিটার তরল দুধ ব্যবহার করতে হয়। ক্যালরির দিক বিবেচনা করলে ২৫০ মিলিলিটার বা ১ কাপ দুধ থেকে ১২০ থেকে ১৫০ কিলোক্যালরি পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১ কাপ গুঁড়া দুধ থেকেও আমরা প্রায় ১৩০–১৪০ কিলোক্যালরি পেয়ে থাকি। তাই ক্যালরির দিক থেকেও পুষ্টিগুণ বেশ কাছাকাছি।
দুধে থাকে চর্বি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিনসহ বহু উপাদান। তবে তরল দুধে ভিটামিনের সব রকম উপাদান যেমন বিদ্যমান থাকে, গুঁড়া দুধের বাষ্পীভবনের ফলে পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিনগুলো কিছু পরিমাণ কমে যায়। ফলে তরল দুধের তুলনায় ভিটামিন বি১, ২, ৫, ৬, ১২ ও ভিটামিন ডি কম থাকে গুঁড়া দুধে। অনেক সময় তাই প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় গুঁড়া দুধে প্যাকেটের গায়ে ভিটামিন ডির পরিমাণ লেখা থাকে।
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধদুধে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, যা দেহে শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন হয়। তবে দুধ একটি অনন্য খাদ্য, যাতে দুটি উপাদান একসঙ্গে মিলবে। ফসফরাসের ভালো উৎস দুধ। দাঁত ও হাড়ের গঠনের জন্য তাই দুধ বেশ সহায়ক। ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়ক। এ ছাড়া ‘নার্ভাস সিস্টেম’ ঠিক রাখতে এটি বেশ কার্যকরী। ইসরাত জাহান জানান, প্রয়োজনভেদে দেহের মেলাটোনিন, সেরোটোনিন নামক হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে দুধ।
দুধে থাকা ট্রিপটোফেন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মস্তিষ্ককে শান্ত করে ঘুমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তাই আজকাল যাদের অস্থিরতা, হাইপার টেনশন, ঘুমের সমস্যা থাকে, তাদের প্রতিদিন রাতে শোবার আগে হালকা গরম নন–ফ্যাট এক গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।
ভিটামিন ডি হাড়, দাঁত, নখ, চুল ও ত্বকে পুষ্টি জোগায়। দুধে রয়েছে ভিটামিন এ ও ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা শরীরে কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ত্বককে রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। খনিজ পদার্থের উপস্থিতির কারণে দুধ দেহের রোগ প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি করে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।
আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।