ওয়ানডেতে ৭ হাজারে প্রথম ইংলিশ রুট, রেকর্ড সেঞ্চুরিতে জেতালেন দলকে
Published: 1st, June 2025 GMT
১৯৭১ সালে ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডেতে একটি দলের নাম ছিল ইংল্যান্ড। এরপর কেটে গেছে ৫৪ বছর। এ সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭ হাজার রান করেছেন ৪৬ জন ব্যাটসম্যান। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে কারও ৭ হাজার রান ছিল না। এ নিয়ে যদি ইংল্যান্ডের কোনো আক্ষেপ থেকে থাকে তবে সেটি দূর হয়ে আজ। ইংল্যান্ডের প্রথম ও ইতিহাসের ৪৭তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন জো রুট।
কার্ডিফে মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে দলকেও জিতিয়েছেন রুট। তাঁর ১৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে ভর করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩০৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেটা জিতেছে ইংল্যান্ড। ইংলিশরা জিতেছে ৩ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজটাও এক ম্যাচ হাতে থাকতে জিতে গেছে ইংলিশরা।
১৭৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ইনিংসটা আজই খেললেন রুট। এর আগের ১৬ সেঞ্চুরিতে তাঁর সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ১৩৩। ঠিক আট বছর আগে আরেক ১ জুন ওভালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ইনিংসটি খেলেছিলেন রুট। রুটের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে জস বাটলারের করা ১৫০ রানের রেকর্ড ভাঙলেন রুট। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের পঞ্চম সর্বোচ্চ ইনিংস রুটের ১৬৬।
এই ইনিংস খেলার পথেই ইংল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েছেন রুট। রুট ম্যাচটি শুরু করেছিলেন ৬৯১৬ রান নিয়ে। ৬৯৫৭ রান নিয়ে তখন ইংল্যান্ডের শীর্ষ ব্যাটসম্যান এইউন মরগান।
রান তাড়ায় রুট যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, ঘোর বিপদে ইংল্যান্ড। ২ রান তুলতেই ২ রান নেই দলটি। কোনো রান না করেই ফিরে গেছেন দলটির দুই ওপেনার জেমি স্মিথ ও বেন ডাকেট। এরপর অধিনায়ক হ্যারি ব্রুককে নিয়ে ৮৫ রান যোগ করে ধাক্কাটা সামলান রুট। ৪৭ রান করে ব্রুকের বিদায়ের ৬ রান যোগ হতেই ফিরে যান বাটলার। এরপর জ্যাকব বেথেল যখন ফিরলেন ২৩.
সেখান থেকে উইল জ্যাকসকে নিয়ে ১৪৩ রানের জুটি গড়েন রুট। জ্যাকস ফিরেছেন ৪৯ রান করে। পরে ব্রায়ডন কার্স ফিরে গেলেও আদিল রশিদকে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়া রুটের ১৩৯ বলের ইনিংসটি সাজানো ২১ চার ও ২ ছক্কায়।
এর আগে কিসি কার্টির (১০৩) প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ভর করে ৩০৮ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ ছাড়া ৭৮ রান করেছেন অধিনায়ক শাই হোপ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’