বর্ষা মৌসুম যতই নিকটবর্তী হইতেছে ততই প্রাণঘাতী ডেঙ্গু বিস্তারের শঙ্কা বৃদ্ধি পাইতেছে। রবিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, মে মাসে এই বৎসরের সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেড় সহস্রাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছেন। ঋতুচক্রের নিয়ম অনুসারে বর্ষা আসিবার পূর্বে গ্রীষ্মেও বৃষ্টিপাত বিরল নহে। এইবার নিম্নচাপের কারণে ঢাকাসহ সমগ্র দেশেই বর্ষণ চলিতেছে। রহিয়াছে ভ্যাপসা গরমও। বিশেষজ্ঞগণের অভিমত, এইরূপ আবহাওয়া এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য খুবই অনুকূল। উপরন্তু ঈদুল আজহার দীর্ঘ বন্ধে বাসাবাড়ি তালাবদ্ধ করিয়া অনেকেই অন্যত্র অবস্থানকারী প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যাইবেন বলিয়া নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের অভাবে সেইগুলিও ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তারের নিরাপদ ক্ষেত্র হইয়া উঠিতে পারে। ফলে ঈদের পর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করিবার আশঙ্কা প্রবল। কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা জরিপ করিয়া দেখিয়াছে, গত বৎসরের মে মাস অপেক্ষা এইবারের মে মাসে মশার ঘনত্ব যদ্রূপ অধিক, তদ্রূপ রোগীও অধিক। তাই তাহাদেরও আশঙ্কা, এই বৎসর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাহিরের কিছু জেলায় পরিস্থিতির অবনতি হইতে পারে।
উদ্বেগটা হয়তো এই পর্যায়ে যাইত না যদি বিশেষত সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সময় থাকিতে তৎপর হইত। প্রতিবেদন বলিতেছে, ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকিলেও অনেকাংশেই উপেক্ষিত সেই নির্দেশনা। ঢাকার কোনো হাসপাতালে পৃথক ডেঙ্গু ইউনিট স্থাপিত হয় নাই। অদ্যাবধি এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও বৃহদাকারে কর্মসূচি গ্রহণ করে নাই। চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সিটি করপোরেশনও অনুরূপ ঔদাসীন্য প্রদর্শন করিতেছে। আর পৌরসভা বা অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানেরও নিদ্রাভঙ্গ হয় নাই। অথচ যেই পাড়া-মহল্লা পরিষ্কার রাখা ডেঙ্গুবিরোধী অভিযানের প্রধান অংশ, সেই দায়িত্ব মূলত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানেরই পালন করিবার কথা। সত্য, গণঅভ্যুত্থানের ধাক্কায় অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের ন্যায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিও নানাবিধ অস্থিরতার শিকার। কিন্তু ৯ মাসেও সেই অস্থিরতা হইতে প্রতিষ্ঠানগুলিকে বাহির করিতে না পারা শুভ লক্ষণ নহে। সর্বোপরি নগর দগ্ধ হইলে যদ্রূপ দেবালয় রক্ষা পায় না, তদ্রূপ ডেঙ্গু মহামারির রূপ লইলে কেবল সাধারণ মানুষই আক্রান্ত হইবে না।
অস্বীকার করা যাইবে না, পরিবর্তনের বিপুল প্রতিশ্রুতি লইয়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিলেও প্রায় সর্বত্র এক প্রকার স্থবিরতা পরিলক্ষিত হইতেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইতে কতদিন লাগিবে, তাহা অজ্ঞাত। তদুপরি মব সন্ত্রাস চলমান। বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের সহিত উহা যুক্ত হইয়া ব্যবসায় কর্মকাণ্ডও গতি হারাইয়াছে। প্রতিদিন নানা পেশাজীবী গোষ্ঠী তাহাদের দাবিদাওয়া লইয়া রাজপথে উচ্চকণ্ঠ। ফলে যানজট পরিস্থিতি প্রকট হইতে প্রকটতর রূপ গ্রহণ করিতেছে। কিন্তু সরকারের যেন এই বিষয়ে কিছুই করণীয় নাই। সরকারের এহেন নিষ্ক্রিয়তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও প্রতিফলিত হইলে নাগরিকগণ যাইবে কোথায়?
বিপদের বিষয়, এই নিশ্চয়তা নাই– কেহ একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইলে অবশিষ্ট জীবন সংক্রমণমুক্ত থাকিবে। উপরন্তু এডিস মশা উহার আচরণ পরিবর্তন করে বলিয়া পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হইয়াছেন বিশেষজ্ঞগণ। উদাহরণস্বরূপ, একদা বলা হইত, এডিস স্বচ্ছ পানিতে জন্মায় এবং সাধারণত রজনীকালে দংশনকার্যে অংশগ্রহণে অনীহ। কিন্তু এখন সকলেই পরিজ্ঞাত, এডিস অস্বচ্ছ পানিতেও জন্মায় এবং কোনো ব্যক্তিকে দংশনে উহার দিবা-রাত্রিভেদে অরুচি নাই। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ পূর্বাপেক্ষা জটিল হইয়া পড়িয়াছে। যথাযথ আন্তরিকতা ও ব্যাপ্তি লইয়া কার্যক্রম পরিচালনা না করিলে ফল শূন্য হইতে বাধ্য। একই কারণে জনস্বাস্থ্যগত এই সমস্যা জনগণকে যুক্ত না করিয়া সফলভাবে মোকাবিলাও অসম্ভব। তাই সরকারের প্রতি আহ্বান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনুগ্রহ করিয়া দ্রুত তৎপর হউন, প্রস্তুতি লউন। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে লইয়া উহা বাস্তবায়ন করুন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র পর স থ ত সরক র র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।