তহবিল–সংকটের ঝুঁকিতে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষা
Published: 2nd, June 2025 GMT
তহবিল–সংকটের কারণে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে থাকা ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জরুরি মৌলিক শিক্ষার সুযোগ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে তাদের। এরই মধ্যে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টারগুলোর ১ হাজার ১৭৯ বাংলাদেশি শিক্ষক চাকরি হারাতে বসেছেন। আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ইউনিসেফ কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিসের প্রধান অ্যাঞ্জেলা কার্নে বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইউনিসেফ পরিচালিত কার্যক্রমের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আশ্রয়শিবিরে ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত শিক্ষাকেন্দ্রগুলোয় ভর্তি হওয়া শিশুদের ৮৩ শতাংশের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়, নতুন তহবিল গঠন ও নতুনভাবে কার্যক্রম সাজানোর নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর পরেও তহবিল–সংকটের কারণে ইউনিসেফকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাক্–প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের সহায়তা স্থগিত করার মতো বিষয়। ৩০ জুনের মধ্যে সর্বমোট ১ হাজার ১৭৯ স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকের সঙ্গে ইউনিসেফের চুক্তি শেষ হবে। এই স্বেচ্ছাসেবকেরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য।
তহবিল–সংকটের কারণে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের মতো সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরেও ইউনিসেফের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়। এ সময় ইউনিসেফের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউনিসেফের কর্মকর্তা অ্যাঞ্জেলা কার্নে বলেন, নতুনভাবে তহবিল পাওয়া গেলে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান মাধূরী ব্যানার্জি ও কক্সবাজার অফিসের কমিউনিকেশন অফিসার আবিদ আজাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন স ফ র
এছাড়াও পড়ুন:
এক সপ্তাহ পর চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা চালু
এক সপ্তাহ পর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা চালু হয়।
সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালের ফটকে অপেক্ষারত রোগীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে জরুরি বিভাগে রোগীদের সেবা দেওয়া শুরু হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সীমিত পরিসরে চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। যাঁদের লম্বা সময় সেবার প্রয়োজন আছে, তাঁদেরও এই মুহূর্তে জরুরি সেবা নিয়ে চলে যেতে হবে।
সকালে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে জরুরি বিভাগের সেবা চালু হয়েছে। জরুরি চিকিৎসার পরে কারও বাড়তি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটা আপাতত দেওয়া হবে না।’
কতজন চিকিৎসক হাসপাতালে এসেছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি জানে আলম। তিনি বলেন, ‘মাত্র হাসপাতাল খুলেছে। প্রথমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হবে। চিকিৎসকদের সংখ্যা এখনো নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’
গত বুধবার চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের মারামারি-সংঘর্ষের পর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফরসহ মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা আহতদের সঙ্গে সভা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জরুরি বিভাগসহ সীমিত আকারে অন্য সেবা চালু করার ব্যাপারে কথা হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করবে।
পরে মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বুধবার থেকে হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু হবে। চারটি প্রতিষ্ঠানের চক্ষুবিশেষজ্ঞরা আহতদের চোখ পরীক্ষা করে দেখবেন কার সমস্যা কতটুকু, কাকে কোথায় চিকিৎসা নিতে হবে।
বুধবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে হাসপাতালে প্রায় শতাধিক রোগীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাঁরা সকাল থেকে হাসপাতালে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসব রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বেশির ভাগ নতুন রোগী। কেউ কেউ ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গাইবান্ধা থেকে আসা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে একবার চোখের সমস্যা নিয়ে এখান থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সম্প্রতি চোখের যন্ত্রণা বেড়ে যাওয়ায় আজ আবার চিকিৎসার জন্য এসেছেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে ঈদ, তবুও আসতে বাধ্য হয়েছি। চোখের যন্ত্রণায় আর থাকতে পারছিলাম না। এই হাসপাতাল থেকে যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটা চোখের জন্য ভালো কাজ করে।’
আরেক রোগী ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি ভোলা থেকে এসেছেন। গত শনিবার হাসপাতালে এসে দেখতে পান, সব সেবা বন্ধ। এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে এসে চিকিৎসা চালু হয়েছে কি না দেখে যেতেন। আজ বুধবার এসে দেখতে পান, ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।
ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ কদিন ঢাকায় এক আত্মীয়ের মেসে ছিলাম। অনেক দূর থেকে এসেছি। চিকিৎসা ছাড়া চলে গেলে আবার আসতে হবে। তাই এত দিন চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করেছি।’