মাহেন্দ্র হিসেবে পরিচিত তিন চাকার যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন পিয়াস। তিনি নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করেন রাজবাড়ী-পাংশা রুটে। এই রুটটি দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের অংশ। পিয়াসের ধারণা, আসছে ঈদযাত্রায় এই মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগাতে পারে কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর রেলগেটের কাছে ৮০ মিটার ভাঙাচোরা অংশ। এ ছাড়া এ মহাসড়কের বেশ কিছু জায়গায় ছোট-বড় খানাখন্দ রয়েছে।
সরেজমিন রোববার মহাসড়কের রাজবাড়ী সদরের বড়পুল থেকে কালুখালী পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু জায়গায় খানাখন্দ। বাস, মাহেন্দ্র, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। এর মধ্যে গরুবাহী ট্রাকই বেশি। চালকরা এসব ট্রাক বেপরোয়াভাবে ওভারটেক করছিলেন। চার লেনের পুরো অংশেই বেশির ভাগ সময় যানবাহনগুলোকে একমুখী হয়ে যেতে দেখা গেছে।
এ সময় কথা হয় পিয়াসের সঙ্গে। তিনি বলেন, চাঁদপুর রেলগেটের কাছে ৮০ মিটার ভাঙাচোরা অংশে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখানে একপাশে ঢালাই চলছে, অন্যপাশের খানাখন্দে
ভরা অংশ দিয়ে তাদের যাতায়াত করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। ঈদ সামনে রেখে এখানে গাড়ির চাপ বাড়বে। এতে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, এই মহাসড়কটি ছয় মাস ধরে বেহাল। অথচ এক মাস আগে মেরামতকাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আরও আগে কাজ শুরু করলে এতদিনে শেষ হয়ে যেত। সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। তখন আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়িগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদপুরের ভাঙাচোড়া ৮০ মিটার লম্বা অংশে সিমেন্ট ঢালাই করছে। দেড় কোটি টাকার কাজটি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিবিএল। চার লেন মহাসড়কের একপাশে
ঢালাই করা হয়েছে। ওই অংশে পানি ও কচুরিপানা দেওয়া, তাই যান চলাচল বন্ধ। দড়ির ওপর লাল কাপড় টানানো হয়েছে। অপর পাশে যেখান
দিয়ে যানবাহন চলছে, সেখানকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। রাস্তার পাশে মাটিকাদা জমে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, কয়েক দিনে এ মহাসড়কে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শনিবার সোনাপুর মোড়ে গরুবাহী ট্রাক উল্টে দু’জন নিহত হন। আগের দিন চাঁদপুর সেতু এলাকায় প্রাণ যায় আরেক ব্যবসায়ীর।
ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচলকারী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসের চালক অসিত বিশ্বাস বলেন, ঈদের আগে কাজটি শেষ হলে ভালো হতো। ভাঙা অংশের কারণে তাদের বসে থাকতে হয়। প্রচণ্ড গরমে যাত্রীরা বিরক্ত হন, সময় নষ্ট হয়। ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে এ সমস্যা তীব্র হবে।
রাজবাড়ী ডা.
রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোক্তার হোসেন বলেন, চাঁদপুর রেলক্রসিং এলাকার সংস্কার কাজের অগ্রগতি নেই। রাস্তার একপাশ দিয়ে যানবাহন চলছে। ঈদের সময় মহাসড়কে চাপ বেশি পড়ে। অনেক যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছে। এখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। বৃষ্টি হলে এ শঙ্কা বেড়ে যায়। রাস্তার পাশে কাদামাটি। মাঝেমধ্যে চাকা আটকে যায়।
গান্ধীমারা হাইওয়ে থানার ওসি হারুন অর রশীদ বলেন, বৃষ্টি হলে মহাসড়কে দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের চন্দনী বাজার, সোনাপুর মোড়, হেনা মোড়, নয়নের মোড় এলাকাগুলো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এসব স্থানে রোডসাইন থাকলেও চালকরা সেগুলো দেখেন না। ঈদ রেখে দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে নির্ধারিত গতি মেনে চলতে চালকদের বার্তা দিয়েছেন। অতিরিক্ত গতিতে যান চালানোর জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে। ডাকাতি ঠেকাতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে তাদের টিম। কালুখালীর ভাঙা অংশে পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে রাখা হয়েছে।
চলতি বছরের ২৫ মার্চ রাস্তাটি মেরামতের চুক্তি হয়েছে জানিয়ে রাজবাড়ী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজস খান বলেন, জুন মাসে তাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। এ কারণে সময়মতো করা যায়নি। তাঁর ভাষ্য, এই মহাসড়কের কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর রেলক্রসিংয়ে কাছে ভারী যানবাহন এসে ব্রেক করে থামে। এ জন্য রাস্তায় চাপ পড়ে। এ কারণে রাস্তা ভেঙে গেছে। প্রতিবছরই রাস্তা নষ্ট হয় বলে বিটুমিনের বদলে সিমেন্ট ঢালাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখান দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে সময় লাগবে। ঈদের আগে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় মেরামতকাজ বন্ধ রেখেছেন। ঈদের পর অপর পাশেও ঢালাই করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ৮০ ম ট র ঢ ল ই কর দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’