রাজধানীর ২২ পশুর হাট ক্রেতার অপেক্ষায়
Published: 2nd, June 2025 GMT
গরু ব্যাপারী মাহতাব লিমন পাবনার আতাইকুলা থেকে ট্রাকে চেপে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটে। বললেন, ‘ভোররাতে গরু নিয়া হাটে এসেছি। দুপুর পর্যন্ত তেমন ক্রেতা আসেননি। দু্-একজন এলেও গরু দেখে চলে গেছেন।’
মাহতাব লিমনের কথাতে স্পষ্ট, কোরবানি ঈদের আর ক’দিন দিন থাকলেও রাজধানীর পশুর হাটে এখনও ক্রেতার আনাগোনা নেই। খামারি, ব্যাপারী আর ইজারাদাররা হাটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও শুরু হয়নি তেমন কেনাবেচা। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে অস্থায়ী পশুর হাটে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা। এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় গাবতলী আর সারুলিয়ার দুটি স্থায়ীসহ মোট ২২টি পশুর হাট বসেছে।
গতকাল সোমবার অন্তত তিনটি বড় পশুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকবোঝাই পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। খামারি আর হাটের ইজারাদাররা আশা করছেন, কাল বুধবার সরকারি অফিসের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন রাত থেকেই জমে উঠতে পারে হাট। আর খামারিদের প্রত্যাশা, শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু হাটে না ঢুকলে এবার ভালো দাম পাবেন তারা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পশু নিয়ে হাটে থাকা-খাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হলেও এ নিয়ে অভিযোগ নেই তাদের।
উত্তর শাহজাহানপুরের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কিছু লোকজনও হাটে আসছেন। এর মধ্যে দুয়েকটা গরু বিক্রিও হয়েছে।
মেরুল বাড্ডার শাহনেওয়াজ সুমন বলেন, ‘একটি খামারে আগেই গরু কিনে রেখেছি। তবু হাটে এসেছি গরু দেখতে। মেরুল বাড্ডা হাটেও গিয়েছি। আজ এসেছি শাহজাহানপুরে, এর পর কমলাপুর হাটে যাব।’ আল মাহমুদুল হাসান বাসাবো থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে হাটে এসে একটি গরু ও একটি ছাগল কিনেছেন। মাহমুদুল বলেন, ‘শাহজাহানপুরের হাট বাড়ির কাছে। পরিবেশ ভালো, ভালো গরু ওঠে। এখন পর্যন্ত বাজার ভালোই আছে। দাম খুব বেশি মনে হচ্ছে না।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে গরু নিয়ে আসা রাশেদুল হাসান বলেন, ‘১৪টি গরু আনছিলাম; দুটি বিক্রি হয়ছে। এইবার ভারত থেকে গরু আসবে না বলে শুনছি। এইডা নিয়া ব্যাপারীরা একটু টেনশনে আছে। অনেকে গরু কিনে নাই, যে গতবার ১০টা কিনছে, হে এইবার পাঁচটাও কিনে নাই।’
হাটের ইজারাদার আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ‘হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। কিছু ক্রেতাও আছে। তবে মূল বিক্রি শুরু হবে ঈদের দুই দিন আগে।’
পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলী মিলন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন হাটে গরু এসেছে কম। তবে রোববার থেকে আসা শুরু হয়েছে। এই হাটে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, ফরিদপুর এলাকার গরু নদীপথেও আসছে। আজও ব্যাপারীরা গরু নিয়ে আসছেন। আমাদের হাটে মঙ্গলবার থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।’
ঢাকার প্রধান হাট গাবতলীতেও আসতে শুরু করেছে পশু। তবে সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশুতে হাট ভরে গেছে। গরুর পাশাপাশি উট, মহিষ, ভেড়াও এসেছে। গাবতলী হাটে এদিন কিছু গরু বিক্রি হয়েছে।
মিরপুরের পীরেরবাগ থেকে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন গাবতলী হাট থেকে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেশি গরু কিনতে এসেছি। বাজেটের মধ্যে একটা গরু পছন্দ হয়েছে। এ কারণে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে বিশাল আকৃতির কয়েকটি গরু গাবতলী হাটে তুলেছেন উজ্জ্বল হোসেন। ধূসর কালো রঙের একটি গরুর দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা। তবে এখনও ক্রেতা পাননি তিনি। উজ্জ্বল জানান, পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের এই গরুর ওজন ৮ থেকে ১০ মণ।
ওই হাটের ঝিনাইদহ থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এলাকায় এবার গরু কম। গো-খাদ্যের দাম বেশি বলে কৃষক গরু পালনের দিকে মনোযোগ দেয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গর র ইজ র দ র ন বল ন গ বতল আসছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ