গরু ব্যাপারী মাহতাব লিমন পাবনার আতাইকুলা থেকে ট্রাকে চেপে ১৪টি গরু নিয়ে এসেছেন রাজধানীর শাহজাহানপুর হাটে। বললেন, ‘ভোররাতে গরু নিয়া হাটে এসেছি। দুপুর পর্যন্ত তেমন ক্রেতা আসেননি। দু্-একজন এলেও গরু দেখে চলে গেছেন।’
মাহতাব লিমনের কথাতে স্পষ্ট, কোরবানি ঈদের আর ক’দিন দিন থাকলেও রাজধানীর পশুর হাটে এখনও ক্রেতার আনাগোনা নেই। খামারি, ব্যাপারী আর ইজারাদাররা হাটের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও শুরু হয়নি তেমন কেনাবেচা। তবে আজ মঙ্গলবার থেকে অস্থায়ী পশুর হাটে শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক বেচাকেনা। এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় গাবতলী আর সারুলিয়ার দুটি স্থায়ীসহ মোট ২২টি পশুর হাট বসেছে।

গতকাল সোমবার অন্তত তিনটি বড় পশুর হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাকবোঝাই পশু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। খামারি আর হাটের ইজারাদাররা আশা করছেন, কাল বুধবার সরকারি অফিসের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন রাত থেকেই জমে উঠতে পারে হাট। আর খামারিদের প্রত্যাশা, শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু হাটে না ঢুকলে এবার ভালো দাম পাবেন তারা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পশু নিয়ে হাটে থাকা-খাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হলেও এ নিয়ে অভিযোগ নেই তাদের।
উত্তর শাহজাহানপুরের অস্থায়ী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে করে কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন বিক্রেতারা। স্থানীয় কিছু লোকজনও হাটে আসছেন। এর মধ্যে দুয়েকটা গরু বিক্রিও হয়েছে। 

মেরুল বাড্ডার শাহনেওয়াজ সুমন বলেন, ‘একটি খামারে আগেই গরু কিনে রেখেছি। তবু হাটে এসেছি গরু দেখতে। মেরুল বাড্ডা হাটেও গিয়েছি। আজ এসেছি শাহজাহানপুরে, এর পর কমলাপুর হাটে যাব।’ আল মাহমুদুল হাসান বাসাবো থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে হাটে এসে একটি গরু ও একটি ছাগল কিনেছেন। মাহমুদুল বলেন, ‘শাহজাহানপুরের হাট বাড়ির কাছে। পরিবেশ ভালো, ভালো গরু ওঠে। এখন পর্যন্ত বাজার ভালোই আছে। দাম খুব বেশি মনে হচ্ছে না।’
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে গরু নিয়ে আসা রাশেদুল হাসান বলেন, ‘১৪টি গরু আনছিলাম; দুটি বিক্রি হয়ছে। এইবার ভারত থেকে গরু আসবে না বলে শুনছি। এইডা নিয়া ব্যাপারীরা একটু টেনশনে আছে। অনেকে গরু কিনে নাই, যে গতবার ১০টা কিনছে, হে এইবার পাঁচটাও কিনে নাই।’ 

হাটের ইজারাদার আনিসুর রহমান টিপু বলেন, ‘হাটে পশু আসতে শুরু করেছে। কিছু ক্রেতাও আছে। তবে মূল বিক্রি শুরু হবে ঈদের দুই দিন আগে।’
পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের ইজারাদার মোহাম্মদ আলী মিলন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন হাটে গরু এসেছে কম। তবে রোববার থেকে আসা শুরু হয়েছে। এই হাটে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, ফরিদপুর এলাকার গরু নদীপথেও আসছে। আজও ব্যাপারীরা গরু নিয়ে আসছেন। আমাদের হাটে মঙ্গলবার থেকে বেচাকেনা শুরু হবে।’
ঢাকার প্রধান হাট গাবতলীতেও আসতে শুরু করেছে পশু। তবে সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির পশুতে হাট ভরে গেছে। গরুর পাশাপাশি উট, মহিষ, ভেড়াও এসেছে। গাবতলী হাটে এদিন কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। 
মিরপুরের পীরেরবাগ থেকে আসা আবদুল্লাহ আল মামুন গাবতলী হাট থেকে একটি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেশি গরু কিনতে এসেছি। বাজেটের মধ্যে একটা গরু পছন্দ হয়েছে। এ কারণে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছি।’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে বিশাল আকৃতির কয়েকটি গরু গাবতলী হাটে তুলেছেন উজ্জ্বল হোসেন। ধূসর কালো রঙের একটি গরুর দাম হাঁকছেন ৩০ লাখ টাকা। তবে এখনও ক্রেতা পাননি তিনি। উজ্জ্বল জানান, পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের এই গরুর ওজন ৮ থেকে ১০ মণ।
ওই হাটের ঝিনাইদহ থেকে আসা ইমরান হোসেন বলেন, ‘এলাকায় এবার গরু কম। গো-খাদ্যের দাম বেশি বলে কৃষক গরু পালনের দিকে মনোযোগ দেয়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর র ইজ র দ র ন বল ন গ বতল আসছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও