রোববার রাজধানীর মাল্টিপারপাস হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী যে চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন হয়, তার গুরুত্বকে খাটো করে দেখা যায় না। বাংলাদেশের কোনো বাণিজ্যিক সম্মেলনে ১০০ কোম্পানির ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণ এই প্রথম।

সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ে যে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দেন, তা নিশ্চয়ই দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে। সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চীনা বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্যপ্রযুক্তিশিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। যেকোনো দেশের ব্যবসায়ীরা এসব খাতে বিনিয়োগ করলে যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। চীনা বিনিয়োগকারীরা এঁদের কাজে লাগাতে পারেন। 

সফররত চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মাছ ধরাসহ গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায় সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।

বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের একটি বিষয় চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায়নি। পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহরে যেখানে সন্ধ্যার পর শহর নীরব হয়ে যায়, সেখানে ঢাকা শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত কর্মচাঞ্চল্য থাকে। তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। তবে যেকোনো উন্নয়নকামী দেশের মতো বাংলাদেশ কেবল ভোক্তাবাজার হতে চায় না, উৎপাদনেও এগিয়ে থাকতে চায়। সে জন্য এখানে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে।

চীনা মন্ত্রী চাষের জমি উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক চারা রোপণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রযুক্তিতে চীন যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তা থেকেও আমরা উপকৃত হতে পারি। ব্যবসা–বাণিজ্যের উন্নতির জন্য গবেষণা অপরিহার্য, যদিও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে আগ্রহ কম। 

চীন থেকে আমরা যেই পরিমাণ পণ্য আমদানি করি, তার তুলনায় সেখানে রপ্তানি হয় খুবই কম। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়লে বহির্বিশ্বে আমাদের রপ্তানিও অনেক বাড়বে। চীন প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ। গবেষণা ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে পারলে এর পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। 

বিনিয়োগের খরাকালে চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে এসে সম্মেলন করা তাঁদের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামোগত সুবিধা ও নীতি পরিকল্পনা প্রয়োজন, সেটা কতটা বহাল আছে, তা–ও খতিয়ে দেখা জরুরি। এর আগেও অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীকে এভাবে সম্মেলনে ডেকে আনা হয়েছে। দেশের বাইরে গিয়েও সরকারপ্রধানেরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি।

বিনিয়োগ তখনই বাড়বে, যখন আমরা একটা বিনিয়োগানুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারব। সে ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি বলে মনে করি। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা এখন অনিশ্চয়তা। যেকোনো মূল্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ যমন ত র ব যবস য় অন ক ব মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ না থাকলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে নির্বাচন: গোয়েন লুইস

আওয়ামী লীগ না থাকলেও জনগণের অংশগ্রহণ সঠিকভাবে হলে আগামী নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে পারে বলে মনে করছেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস। তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘের কাছে অন্তর্ভুক্তি মানে হচ্ছে, প্রত্যেক বাংলাদেশি যেন মতামত দেওয়ার সুযোগ পায়। 

গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের ‘ডিক্যাব টকে’ এ কথা বলেন জাতিসংঘের এ প্রতিনিধি। ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগ না থাকা অবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করলে গোয়েন লুইস বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন মানে হচ্ছে, সমাজের প্রত্যেক অংশই যেন ভোট দিতে পারে। নারী, ১৮ বছর বয়সী, নৃতাত্ত্বিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়– অন্তর্ভুক্তিমূলক দিয়ে আমরা এটাই বোঝাই। তবে প্রত্যেকের যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবেশাধিকার ও সক্ষমতা থাকে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো মন্তব্য করছি না। জাতিসংঘ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত নয়। 

জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার সুপারিশের মধ্যেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে গোয়েন লুইস বলেন, আমরা সুপারিশ করেছি, কারণ সব দলের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মেরূকরণ এবং সম্ভাব্য সংঘাত এড়ানো যায়। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সরকারের সিদ্ধান্ত।

রাখাইনে করিডোরে জাতিসংঘের যুক্ততা 

নিয়ে তিনি বলেন, আন্তঃসীমান্ত সম্পর্ক উন্নয়ন, সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তা করার জন্য যে কোনো ধরনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এ বিষয়ে জাতিসংঘ সহায়তা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো মানবিক করিডোর নেই। আমরা করিডোর-সংক্রান্ত কোনো ধরনের আলোচনায়ও নেই।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক বলেন, করিডোর দুই সরকারের বিষয়। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারে।  

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় চালুর বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। সরকারের সংস্কার উদ‍্যোগে জাতিসংঘের সমর্থন অব‍্যাহত রাখার কথাও জানান এ কূটনীতিক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ