বিনিয়োগানুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে
Published: 3rd, June 2025 GMT
রোববার রাজধানীর মাল্টিপারপাস হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী যে চীন-বাংলাদেশ ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্মেলন হয়, তার গুরুত্বকে খাটো করে দেখা যায় না। বাংলাদেশের কোনো বাণিজ্যিক সম্মেলনে ১০০ কোম্পানির ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণ এই প্রথম।
সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ে যে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য দেন, তা নিশ্চয়ই দুই দেশের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে। সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চীনা বিনিয়োগকারীদের এখানে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্যপ্রযুক্তিশিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। যেকোনো দেশের ব্যবসায়ীরা এসব খাতে বিনিয়োগ করলে যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। চীনা বিনিয়োগকারীরা এঁদের কাজে লাগাতে পারেন।
সফররত চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও কৃষি, পাট, সামুদ্রিক মাছ ধরাসহ গবেষণার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায় সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তুত। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী এই বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের একটি বিষয় চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায়নি। পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহরে যেখানে সন্ধ্যার পর শহর নীরব হয়ে যায়, সেখানে ঢাকা শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত কর্মচাঞ্চল্য থাকে। তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। তবে যেকোনো উন্নয়নকামী দেশের মতো বাংলাদেশ কেবল ভোক্তাবাজার হতে চায় না, উৎপাদনেও এগিয়ে থাকতে চায়। সে জন্য এখানে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে।
চীনা মন্ত্রী চাষের জমি উন্নয়ন, পানি সংরক্ষণ ও আধুনিক চারা রোপণ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রযুক্তিতে চীন যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তা থেকেও আমরা উপকৃত হতে পারি। ব্যবসা–বাণিজ্যের উন্নতির জন্য গবেষণা অপরিহার্য, যদিও বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে আগ্রহ কম।
চীন থেকে আমরা যেই পরিমাণ পণ্য আমদানি করি, তার তুলনায় সেখানে রপ্তানি হয় খুবই কম। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়লে বহির্বিশ্বে আমাদের রপ্তানিও অনেক বাড়বে। চীন প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের পাট আমদানি করে, যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ। গবেষণা ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে পারলে এর পরিমাণ আরও বাড়ানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিনিয়োগের খরাকালে চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে এসে সম্মেলন করা তাঁদের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু চীনা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য যে অবকাঠামোগত সুবিধা ও নীতি পরিকল্পনা প্রয়োজন, সেটা কতটা বহাল আছে, তা–ও খতিয়ে দেখা জরুরি। এর আগেও অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীকে এভাবে সম্মেলনে ডেকে আনা হয়েছে। দেশের বাইরে গিয়েও সরকারপ্রধানেরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি।
বিনিয়োগ তখনই বাড়বে, যখন আমরা একটা বিনিয়োগানুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারব। সে ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি বলে মনে করি। বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান সমস্যা এখন অনিশ্চয়তা। যেকোনো মূল্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ণ জ যমন ত র ব যবস য় অন ক ব মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিল কানাডা
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিল কানাডা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তার দেশ। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্ক কার্নি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আগামী বছর নির্বাচন আয়োজন এবং সেখানে হামাসের অংশগ্রহণ থাকবে না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার একদিন আগে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দেয়, যদি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে না আসে এবং অন্যান্য কিছু শর্ত পূরণ না করে তারাও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এক সপ্তাহ আগে ফ্রান্সও এমন পরিকল্পনার কথা জানায়।
এদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডার এ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে ‘হামাসকে পুরস্কার দেওয়ার সামিল’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি এরইমধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কানাডার বিরোধী দল এক বিবৃতিতে জানায়, “৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার পরপরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা পাঠাবে।”
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মাধ্যমে দুই-রাষ্ট্র সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। আমাদের চোখের সামনেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
“গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা সহনীয় নয় এবং তা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘোষণার আগে তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
মার্ক কার্নির এ ঘোষণার সমালোচনা করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে বলে, কানাডার এই পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কানাডার এই ঘোষণার পেছনে অভ্যন্তরীণ চাপও ছিল। মঙ্গলবার দেশটির প্রায় ২০০ সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এক খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান, যেন তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেন। চিঠিতে বলা হয়, গাজায় ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং পশ্চিম তীরে সহিংসতা দেখে মনে হচ্ছে, কানাডা তার নীতিগত অবস্থান প্রতিদিনই হারাচ্ছে।
বুধাবর সংবাদ সম্মেলনে মার্ক কার্নির কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ঘোষণায় তিনি প্রভাবিত হয়েছেন কি না কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করেছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, “কানাডা তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেয়।”
ঢাকা/ইভা