হাসান একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। প্রতিদিন তিনি সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। এটি কোনো শখের বিষয় নয়; প্রয়োজনের তাগিদে সাইকেল চালান। এরকম অনেকেই প্রতিদিন সাইকেল চালানোর মাধ্যমে অর্থ সাশ্রয় করে চলছেন, যা অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে নানাভাবে; পরিবেশে দূষণ ও যানজট কমছে। তারপরও সাইকেল চালানোর জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেই; নেই আলাদা সাইকেল লেনও।
দেশে প্রতিবছর কত সাইকেল বিক্রি হয়? সাইকেল আমদানিকারক ও নির্মাতাদের সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাইসাইকেলের স্থানীয় বাজার ১ হাজার ৮০০ কোটি থেকে দুই হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হচ্ছে ৪০ শতাংশ বাইসাইকেল। সাইকেল একটি নিরাপদ বাহন হলেও ঢাকার রাস্তায় যারা এটি চালান তাদের জীবনের ঝুঁকি থাকে। সাইকেলচালকদের জন্য কোনো ধরনের লেন নেই পার্কিং-এর ব্যবস্থা নেই। উপরন্তু মানুষ মনে করেন, এটি একটি গরিবের বাহন।
অপরদিকে মোটরসাইকেল এখন সর্বত্র। দেশের একটি ইংরেজি পত্রিকার তথ্য বলছে, দেশের মোট বিক্রির হওয়া মোটরসাইকেলের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে উচ্চগতির; অর্থাৎ ১৫০ সিসি। মোটরসাইকেলের প্রসার ঘটাতে সরকার অনেক নীতিসহায়তা দিয়েছে; যার মাঝে অন্যতম হলো ২০১৮ সালের মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা। এর লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এই শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। অপরদিকে আমরা যদি বাইসাইকেল শিল্পের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, আমাদের বাংলাদেশ এই খাতে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইকেল রপ্তানি করছে। অথচ এই খাতের জন্য কোনো বিশেষ নীতিমালা নেই। বিগত সরকার মোটরসাইকেল উৎপাদন এগিয়ে নিতে অনেক কর সুবিধাও দিয়েছে।
আর বাইসাইকেলশিল্প নানামুখী সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের করা এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে উৎপাদিত সাইকেলের অধিকাংশ খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় আর ওই সব যন্ত্রের ওপর অনেক কর আরোপ করা আছে; যার ফলে উৎপাদিত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি গত অর্থবছরে ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়েছে; যার কারণে দেশে সাইকেলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। শুধু তাই নয়, সিপিডির করা সে গবেষণা আরও বলছে, এই শিল্পের জন্য অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে ওয়েল্ডিং গ্যাস। সে গ্যাস আমদানি করতে হলে দুই স্তরের অনুমতি নিতে হয়; যা এই শিল্পের জন্য অনেক বড় বাধা হিসেবে কাজ করে।
এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার করা গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকার মোট যাতায়াতের ৭৬ শতাংশ হয়ে থাকে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারের মধ্যে। ঢাকার রাস্তার গড় প্রশস্ততা ৮ থেকে ২০ ফুটের মাঝে। এরকম একটি শহরে স্থান সংকুলানের কারণে যানজট কমাতে ও যাতায়াতের গতিশীলতা ধরে রাখতে বাইসাইকেল হতে পারত একটি ভালো সমাধান। ঢাকার মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল নয়; বাইসাইকেল বেশি গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে তার উল্টো।
এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। বাইসাইকেলকে যাতায়াতের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সরকার যদি কিছু নীতিসহায়তা দেয় তাহলে দেশের মানুষ অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে এ বাহনটি ব্যবহার করতে পারবে। আশার কথা হলো, ঢাকা উত্তরের প্রশাসক সম্প্রতি একটি ঘোষণা দিয়েছেন, ঢাকার মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে সাইকেল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এরকম আরও কিছু পদক্ষেপ যেমন– সাইকেল তৈরির জন্য যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হয় তার ওপরে আরোপিত কর এবং মূল্য সংযোজন কর কমানো। এ সব পদক্ষেপের ফলে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিক্রি উভয় বাড়বে। পাশাপাশি ঢাকা শহরসহ সব স্থানে একটি বাইসাইকেল নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে। সেই নেটওয়ার্ক অনুযায়ী লেন বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন বাইসাইকেল চালকরা নিরাপদে চলতে পারেন।
তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া: আবদুল আউয়াল মিন্টু
এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ বুধবার ফেনীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।
আজ দুপুরে ফেনী শহরের একটি মিলনায়তনে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন মিন্টু। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করতে চাই, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। দেশে এখন যে অবস্থা ফেব্রুয়ারি আগেই নির্বাচন হতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটা ডেট পেন্ডিং আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হলে তার অধীনে ৯০ দিনে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, দেশে যদি এক যুগ, দুই যুগ ধরে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তবে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জানমালের উন্নয়ন হবে না। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না।
আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। ১৯ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাচ্ছি, দ্রুত নির্বাচনটি হোক।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে ফেনীর অতীত ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।’
পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনীর মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ রেহানা আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।