ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান–লরি চলাচল বন্ধ থাকবে
Published: 3rd, June 2025 GMT
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪ থেকে ৬ জুন এবং ১২ থেকে ১৪ জুন মোট ৬ দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পশুবাহী যানবাহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি ও খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টসসামগ্রী, ওষুধ, সার ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো.
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা মহানগর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাত্রা করবেন। ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা মহানগর ত্যাগ করেন এবং প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেন। ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা এবং কোরবানির পশুর হাটসংলগ্ন যানবাহনের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমন অবস্থায় নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
রুট পারমিটবিহীন বাস কোনোক্রমেই চলাচল করতে পারবে না। আন্তজেলা বাসগুলোকে টার্মিনালের ভেতরে যাত্রী উঠিয়ে সরাসরি গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই টার্মিনালের বাইরে সড়কের ওপর বাস দাঁড় করানো যাবে না। অনুমোদিত কাউন্টার ব্যতীত রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো ও নামানো যাবে না।
ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তাগুলোয় কোনোভাবেই যানবাহন পার্ক করা যাবে না। লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন, যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত ও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে ৪, ৫ ও ৬ জুন শুধু ঢাকা মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী) সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। ওই রাস্তার আশুলিয়া-ধউর-কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করবে—এমন যানবাহন আশুলিয়া-ধউর-পঞ্চবটি হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে গাবতলী ও অন্য এলাকায় প্রবেশ করবে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারশন) সব ধরনের যানবাহন ৪, ৫ ও ৬ জুন ঢাকা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করবে। বিআরটি প্রবেশের লেন দিয়ে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটির ঢাকা অভিমুখী যানবাহনগুলো অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে নরমাল রাস্তায়, লেনে ঢাকায় আগমন করবে। ঢাকা শহরে ট্রাফিক জ্যাম কমানোর জন্য ঢাকা মেট্রো এলাকার বিআরটিসির বাসডিপোগুলোর বাস ঢাকা শহর অতিক্রম না করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঈদযাত্রায় সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য যানবাহনগুলোকে ৪, ৫ ও ৬ জুন নিম্নবর্ণিত সড়কগুলো পরিহার করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (বনানী টু আব্দুল্লাহপুর), ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড), মিরপুর রোড (শ্যামলী টু গাবতলী), ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু বাবুবাজার ব্রিজ), ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গা ব্রিজ), মোহাম্মদপুর বছিলা ক্রসিং থেকে বছিলা ব্রিজ সড়ক, আব্দুল্লাহপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক।
পশুর হাটের ইজারায় উল্লিখিত সীমানা ও স্কেচ ম্যাপের বাইরে সড়কের ওপর কোনোভাবেই কোরবানির পশু কেনাবেচা এবং লোড-আনলোড করা যাবে না।
কোরবানির পশু পরিবহনকারী যানবাহন আনলোড করার জন্য এবং বিক্রি করা পশু লোড করার জন্য হাটের ভেতর পৃথক পৃথক জায়গা খালি রাখতে হবে। যদি হাটে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, তবে নিকটবর্তী কোনো জায়গায় পৃথক পৃথক আনলোড এবং বিক্রীত পশু লোড করার স্থান নির্ধারণ নিশ্চিত করতে হবে।
সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কোরবানির পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনো হাটে পশু নেওয়া হবে—এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হাটের নামসংবলিত ব্যানার ট্রাকের সম্মুখে টাঙাতে হবে। হাইওয়ে বা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে কোনো পশুর হাট ইজারা প্রদান না করা।
যদি কোনো পশুর হাট ঢাকা মহানগরের ফিডার রোড, সরু রোডের পাশে ইজারা দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই সড়ক এবং হাটের মাঝে ছয় ফুট উঁচু প্রাচীর স্থাপন করতে হবে। সুবিধাজনক জায়গায় ‘এন্ট্রি’ ও পৃথক ‘এক্সিট’ রাখতে হবে।
পশুর হাটসংলগ্ন সড়কগুলোয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত পুলিশকে সহযোগিতার জন্য ইজারাদারেরা পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন।
পশুর হাটে গমনাগমনকারী রাস্তায় কোনোক্রমেই ক্রেতাদের গাড়ি, পশুবাহী ট্রাক ও পিকআপ পার্ক করা যাবে না। কেউ পার্ক করলে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে।
পশুর হাটের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা না করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সড়কের ওপরে যেখানে–সেখানে কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি করতে হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর জন্য উল্লিখিত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চালক, পশুর হাট–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নগরবাসীকে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবার সহযোগিতা কামনা করছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন য ব যবস থ প রব শ ল ড কর সড়ক র ব আরট
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।