ঈদযাত্রায় ডাকাতি ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পরিবহনে প্রতিটি স্টপেজ থেকে উঠানো সব যাত্রীর ছবি তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অফিস কক্ষের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা এবং বাস মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা বসেছিলাম। গতবার সবাই নির্বিঘ্নে ইদযাত্রা করতে পেরেছে। এটা আপনারাও প্রচার করেছেন। আমরা আশা করছি, এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন হবে। গতবার তারা যাওয়ার সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় নিয়েছিল, কিন্তু ফেরার পথে অল্প কিছু জায়গায় নির্ধারিত ভাড়া নেয়নি। এবার যেন আসা এবং যাওয়ার পথে সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হয় সেজন্য আমরা বসেছিলাম। মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া হবে না।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক সময় দেখেছি ঈদের মৌসুমে যে সমস্ত ড্রাইভার দক্ষ না তাদেরকেও বাস চালাতে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা তাদের অনুরোধ করেছি অদক্ষ ড্রাইভাররা কোনোভাবেই যেন বাস চালাতে না পারে। তাদের বাস চালাতে দিলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, অনেক সময় যাত্রীর ছদ্মবেশে অনেক ডাকাত বাসে ওঠে পড়ে। এ সমস্যা এড়াতে দূরপাল্লার সব পরিবহনে যাত্রীদের ছবি নেওয়া হবে। বাসের প্রথম স্টপেজ থেকে শেষে স্টপেজ পর্যন্ত যারা উঠবে সবার ছবি নিতে হবে। ধরেন, আমিন বাজারে যাত্রী উঠানো বন্ধ হবে, সেখানেই সব যাত্রীর ছবি তুলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে। কিছু বাস আছে সাভারেও যাত্রী ওঠায়। তাদেরকে সাভার থেকেও ছবি তুলতে হবে। প্রতিটি বাসে তিনজন করে লোক থাকে। যদি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তারা সাথে সাথেই মালিকপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র ঈদয ত র

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যাসের বদল কমাবে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহারের বিপদ

মাসান্তে মুদি সদাইপাতি করতে গিয়েছি চট্টগ্রামের পাহাড়তলি পাইকারি বাজারে। দোকানের চার-পাঁচজন কর্মী লিস্ট দেখে দেখে চাল, ডাল, চিনি, মসলা ওজন করে আলাদাভাবে এক বা একাধিক পলিথিনে ভরে সব পলিথিন একসঙ্গে আরেকটা বড় পলিব্যাগে করে ক্রেতাদের দিচ্ছিলেন। বাজারের সর্বত্রই একই চিত্র। এভাবে চোখের পলকে শুধু এক দোকানেই কয়েক শ এবং পুরো বাজারে মিনিটে হাজার হাজার পাতলা পলিব্যাগ বিক্রেতা থেকে ভোক্তার হাতে চলে যাচ্ছে। চিন্তা করুন, বাজার থেকে বাসায় পণ্য বয়ে আনার এই স্বল্প সময়ের জন্য এতগুলো পলিথিন ব্যবহৃত হচ্ছে, যেগুলো সাধারণত ব্যবহারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সেই ডাস্টবিন থেকে পৌর আবর্জনার ভাগাড়ে, রাস্তাঘাটে, কৃষিজমি, খাল-নদী, সাগর অর্থাৎ প্রকৃতির সর্বত্র এসব ছড়িয়ে পড়বে। এটাই হচ্ছে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বৈশিষ্ট্য।

সিঙ্গেল ইউজ বা একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক এমন ধরনের সামগ্রী, যেগুলো পুনর্ব্যবহার হয় না বা পুনর্ব্যবহার করার জন্য তৈরি করা হয় না। এ রকম ‘এক ব্যবহারী’ সামগ্রী হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিপ্রোপাইলিনের শপিং ব্যাগ (যা অনেকে কাপড়ের ভেবে ভুল করেন), পানি বা কোমল পানীয়ের বোতল, প্লাস্টিকের স্ট্র, চা-কফির কাপ ও ঢাকনা, খাবারের কনটেইনার, চামচ, ছুরি, মোড়ক বা প্যাকেজিং ইত্যাদি। ব্যবহারের সুবিধার জন্য সারা পৃথিবীতেই একসময় এগুলোর ব্যাপক প্রচলন হয়েছে। নিম্নমানের প্লাস্টিকে তৈরি হওয়ায় এগুলোতে খাবার খেলে ও ব্যবহার করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি ঘটে। এ ধরনের পণ্য ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয় বলে বেশি উৎপাদিত হয় এবং অন্যান্য প্লাস্টিকের মতোই অপচনশীল বিধায় এগুলো আবর্জনার ভাগাড়ে এবং পরিবেশে বাড়তি বোঝার মতো যোগ হচ্ছে। এসব কারণে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিককে এতটা বিপজ্জনক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখনো পর্যাপ্ত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি বলে বিশেষ করে নগরাঞ্চলসহ সবখানে দুর্গন্ধময় অস্বাস্থ্যকর আবর্জনার স্তূপ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে থাকা অপচনশীল প্লাস্টিক প্রধানত ‘একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক’ এই সমস্যাকে অনেক ব্যাপক ও তীব্র করেছে। আকারে ছোট, অত্যধিক ময়লা ও দূষিত হওয়ায় এবং অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে মিশে থাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সহজে রিসাইকেলযোগ্য নয়। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৮৭ হাজার টন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, যার ৯৬ শতাংশ সরাসরি পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু প্লাস্টিকের বোতল ও পুরু প্লাস্টিক রিসাইকেল হলেও প্রায় ৪৫ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য যায় সিটি করপোরেশনের ল্যান্ডফিলগুলোতে। বাদবাকি মাটিতে জমতে থাকে, খাল ও নদী হয়ে সাগরে পড়ে। এভাবে পৃথিবীব্যাপী মহাসাগরগুলোতে প্রতিবছর লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রবেশ করছে, যা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।

মাত্র কয়েক বছরে কীভাবে আমরা প্লাস্টিককে দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য করে ফেলেছি! প্রশ্নটা কয়েক প্রজন্ম ধরে কাগজের ঠোঙায় পাটের দড়ি পেঁচিয়ে বেচাকেনা করতেন, এমন একজন মুদিদোকানিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বললেন, প্লাস্টিকে খুব সুবিধা, কাগজের প্যাকেট এখনো আছে, দামও পলিথিনের সমান। কিন্তু সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আকর্ষণীয় আর আরামদায়ক বলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার পছন্দ।

বিখ্যাত একটা প্রবাদ আজকাল আমরা হয়তো ভুলতে বসেছি, ‘যত আরাম তত ব্যারাম।’ প্রতি পদক্ষেপে প্লাস্টিকের আরাম খুঁজতে গিয়ে আমরা নিজের অজান্তে আত্মঘাতী হয়ে উঠছি। শহরাঞ্চলে প্লাস্টিক বর্জ্যে জমে থাকা পানির কারণে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে। খাল-নালা ভরাট হয়ে বর্ষাকালে নগরে বন্যা ও জলাবদ্ধতা হয়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদী দূষণ এবং ভরাটের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য বিশেষভাবে দায়ী। বিগত কয়েক দশক যাবৎ চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলমান মারাত্মক জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবেও প্লাস্টিক বর্জ্যকে দায়ী করা হয়।

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানমতে, যেখানে সারা বিশ্বে মাথাপিছু গড় প্লাস্টিক ব্যবহার ৩৫ কেজি সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৫ কেজির (মহানগরীতে কয়েক গুণ বেশি) কম। আবার অন্যদিকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১০ নম্বরে। এই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণে আইনগুলোর দুর্বল বাস্তবায়ন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও কাঠামোগত অক্ষমতা। বাংলাদেশে ২০০২ সালে সব দেশের আগে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হয়। এরপরও প্লাস্টিক পণ্যের ওপর আরও কিছু শক্তিশালী আইন প্রণীত হয়েছে, তার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ২০২৪ সালের আগস্টে ১৭টি সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক সামগ্রী চিহ্নিত করণ ও পর্যায়ক্রমে এগুলো বন্ধ করার সম্পর্কিত পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত।

এ দেশে দুর্বল আইনের প্রয়োগ বা সীমিত তদারকির কারণে হয়তো সহজে আইনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিশ্বের একজন নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও মানবিক দায়বদ্ধতার কথা বিবেচনা করুন। ভাবুন তো, আপনি ও আমি একবার ব্যবহারের পর যে প্লাস্টিকগুলো ডাস্টবিনে ফেলছি, তার বেশির ভাগ কিন্তু আমাদের কয়েক কিলোমিটার চৌহদ্দির ভেতরেই ছড়িয়ে থাকে। প্রাথমিকভাবে এই আবর্জনা থেকে উদ্ভূত দুর্গন্ধ, ডেঙ্গু বা জলাবদ্ধতা সমস্যা সবার আগে ও সবচেয়ে বেশি আমাকে-আপনাকেই তো আক্রান্ত করে। এর অন্যান্য স্থায়ী অসুবিধার কথা বাদই দিলাম।

তাই বলছি, সচেতন নই বলেই আমাদের ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ওপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়া। ব্যক্তি, সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে পরিমাণ সচেতনতা গড়ে ওঠা দরকার ছিল আমাদের দেশে এখনো তা হয়নি। অন্যদিকে প্লাস্টিকের দাপটে প্রচলিত পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। সরবরাহস্বল্পতা ও অপর্যাপ্ততার জন্য এসব দামি পণ্যে পরিণত হওয়ায় প্লাস্টিকের বিকল্প খোঁজা আরেক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

প্লাস্টিকের ক্ষতি যথাসম্ভব কমাতে আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে হবে। একজন মানবিক ও সচেতন মানুষ হিসেবে আজ থেকেই যেসব চর্চা শুরু আপনি শুরু করতে পারেন—

১. প্লাস্টিকের ক্ষতি–সম্পর্কিত তথ্য নিজ পরিবার, বন্ধু-আড্ডা, আত্মীয়, প্রতিবেশী ও সহকর্মীদের মধ্যে আদান–প্রদান করা।

২. কোন কোন পণ্য সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক হিসেবে গণ্য, তার পূর্ণ তালিকা সংগ্রহ করা। প্লাস্টিক, পলিপ্রোপাইলিন ও স্টাইরোফোমের পণ্য এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যের মধ্যকার তফাত চেনা।

৩. দৈনন্দিন জীবনে পলিথিন শপিং ব্যাগ, প্লাস্টিকের চামচ, কাপ, প্লেট, ট্রে ও বোতলের পরিবর্তে কাপড়, কাগজ ও অন্যান্য পচনশীল বা রিসাইকেল ব্যাগ, কাচ, বাঁশ বা নিরাপদ ধাতব পাত্র ব্যবহার শুরু করা।

৪. ঘরোয়া আয়োজন, বিয়ে, জন্মদিন, মিটিং-সেমিনারে প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে কাচের গ্লাস জগ ব্যবহার করা।

৫. উদ্যোক্তা হলে নিজের পণ্যে প্লাস্টিক ব্যাগ ও অপ্রয়োজনীয় প্যাকেজিং বর্জন করা।

৬. বাসায় ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও অন্যান্য অপচনশীল বর্জ্য আলাদাভাবে ময়লা সংগ্রহকারীকে দেওয়া, যাতে রিসাইকেলের সম্ভাবনা বাড়ে।

৭. যেকোনো পণ্যের স্যাশে, মিনি প্যাক, ছোট বোতল না কিনে ‘বাল্ক অ্যামাউন্ট’ বা বড় বোতল বা প্যাকেটে কেনা।

৮. সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ না থাকলে বা ব্যাগ কেনার সুযোগ না থাকলে বাজার করা থেকে বিরত থাকা।

৯. বিক্রেতা প্লাস্টিক ব্যাগ দিতে চাইলে প্রত্যাখ্যান করে তাকে সচেতন করা।

১০. সেবামূলক কাজ হিসেবে ব্যবহৃত কাগজ ও কাপড় দিয়ে ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দান, গ্রহণ ও বিনা মূল্যে বিতরণ করা।

১১. প্লাস্টিকসহ সব রকম বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করা। কারণ, প্লাস্টিক পোড়ালে ডাইঅক্সিন, ফিউরান, কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয়, যা ক্যানসার, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, প্রজননগত দুর্বলতা, ফুসফুস ও লিভারের নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উদ্যোগগুলো নিতে হবে—

১. সরকারকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

২. জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য নিষিদ্ধ ১৭ ধরনের সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের পূর্ণ তালিকা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল, সুপারশপসহ সব জনসমাগম স্থানে প্রদর্শন করা।

৩. জাতীয় গণমাধ্যমে প্লাস্টিকের ক্ষতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রচারণা। প্লাস্টিক সামগ্রীর বিজ্ঞাপনে হুঁশিয়ারি সংযুক্ত করা; যেমনটা তামাকের সঙ্গে সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দেওয়া হয়।

৪. পাটজাত পণ্য, কাগজ, কাপড়, বাঁশ বা অন্যান্য পরিবেশবান্ধব পণ্যে ভর্তুকি বা কর ছাড় দেওয়া।

৫. প্লাস্টিক পণ্যের ওপর উৎসে কর আরোপ (যেমন প্লাস্টিক ট্যাক্স) করতে হবে।

৬. ৫০ মাইক্রনের কম পুরুত্বের প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ ও ৫০ মাইক্রনের চেয়ে পুরু ব্যাগের ওপর বাধ্যতামূলক ফি আরোপ করা।

৭. দেশের সব প্লাস্টিক উৎপাদন ও আমদানিকারকদের আইনে উল্লিখিত এক্সটেনডেড প্রোডিউসার রেসপনসিবিলিটির (ইপিআর) আওতায় এনে বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইক্লিংয়ে বাধ্য করা।

৮. সিটি করপোরেশন কর্তৃক সব রকম আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।

৯. প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক ও প্লাস্টিকের বিকল্পবিষয়ক জ্ঞান শিক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি করতে হবে।

১০. প্লাস্টিকসহ সব ধরনের বর্জ্য খালে পড়া বন্ধ করতে সিটি করপোরেশনের খাল ও নদীর পাশের আবর্জনা রাখা বন্ধ করতে হবে।

১১. সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, বর্জ্য পৃথক্‌করণের ব্যবস্থা চালু করা, রিসাইক্লিং হাব এবং প্লাস্টিক সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন

১২. এসএমই ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের অনুদান ও প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনে উৎসাহ ও অনুদান দিতে হবে।

১৩. নামীদামি চেইন রেস্টুরেন্ট ও ফ্যাশন হাউসগুলো সব রকম সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকে তৈরি গ্লাস, থালা, চামচ, ফুড কনটেইনার, প্যাকেজিং, শপিং ব্যাগ বর্জন করে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করলে এগুলো ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবে চালু হতে পারে।

১৪. জনপ্রিয় খেলোয়াড়, চিত্রতারকা ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিবেশবান্ধব পণ্যকে উৎসাহিত করে গণমাধ্যমে প্রচার করতে পারেন।

প্লাস্টিক পণ্যের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা, এটি পুরোপুরি রূপান্তর বা পচনের জন্য ৪০০-১০০০ বছর লাগে। এর মানে ১৯০৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকে যত প্লাস্টিক পৃথিবীতে উৎপন্ন হয়েছে, তার সব এখনো প্রকৃতিতে রয়ে গেছে। আসুন, সমগ্র মানবসভ্যতাকে প্লাস্টিকের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র—বিশ্বসম্প্রদায় একসঙ্গে বিপ্লব ঘটাই। এ কথা অনুধাবন করি, ‘একবার ব্যবহার, দীর্ঘকাল ক্ষতি—বন্ধ কর প্লাস্টিক, বাঁচাও পৃথিবী!’

তাসলিমা মুনা মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন থেকে পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে এমএসসি করেছেন

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ