ঢাকার কলাবাগান এলাকায় ‘স্নেহছায়া’ নামের একটা ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় একদম সিঁড়ির নিচে একটা জীর্ণ নড়বড়ে চৌকিতে ময়লা মশারি ফেলে ঘুমায় দেলোয়ার। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করা দেলোয়ার এই বাড়ির একের ভেতর চার—কেয়ারটেকার, পিয়ন, দারোয়ান ও ইনফরমার। এমনিতেই সে চঞ্চল আমুদে স্বভাবের কুড়ি–একুশ বছরের শ্যামলবরন একজন তরুণ, চিকনচাকন ছোটখাটো গড়ন তার, মাথায় কোঁকড়া চুল, মুখের সামনের পাটির দাঁতগুলো সামান্য উঁচু। দাঁতের কারণে তাকে সর্বদাই দেখায় সদা সুখী ও হাস্যমুখী।
মাসদুয়েক আগে ‘স্নেহছায়া’ বাড়ির ছয়তলায় তিন রুমের বাসা ভাড়া নেওয়ার সময়ই দেলোয়ারের সঙ্গে আমাদের প্রথম পরিচয়। অগ্রিম দিয়ে বাসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করার পর সে চিরাচরিত হাস্যমুখে বলল, ‘রাত ১১টায় কিন্তু কেঁচিগেটের তালা বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িওয়ালা খালাম্মা চাবি নিয়া দোতলায় রাইখা দেয়। চিল্লায়া কানলেও তখন কেউ দরজা খুলে দিবে না। ওনার কড়া নিষেধ আছে।’
আমিন কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘তাইলে তো বিরাট অসুবিধা, এই বাসায় থাকা যাবে না। আপনের আপা সাংবাদিক, উনি তো মাঝে মাঝেই রাত বারোটার পর বাসায় ফেরেন। ওনাকে দরজার বাইরে রেখে ঘরে একা একা ঘুমানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। খালাম্মার সাথে আলাপ করতে হবে।’
‘আরে স্যার, খালাম্মার কাছে যাইতে হবে না। এই দেলোয়ার থাকতে ভরসা নাই। আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে।’ চোখ টিপে বলল সে, ‘আপনে খালি আওয়াজ দিবেন, আমি চট কইরা উইঠা গেট খুইলা দিব।’
দেলোয়ারের এই বন্দোবস্তে আমরা সাময়িক আশ্বস্ত হয়ে নতুন বাসায় উঠে পড়লাম। দেখা গেল দেলোয়ার এই বাড়ির সবার জন্যই ‘মুশকিল আসান’ টাইপের চরিত্র। প্রত্যেকেরই ছোটখাটো ফাইফরমাশ খাটে সে, পানির লাইন বা ইলেকট্রিসিটির সমস্যা হলে ত্বরিতগতিতে সেসব ঠিক করার ব্যবস্থা নেয় এবং সত্যি সত্যিই যেসব দিনে কাজ শেষে আমার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, সেসব দিনে গেটের সামনে এসে এক ডাক দিতেই দেলোয়ার ঘুম ঘুম চোখে মশারির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে চুপচাপ কলাপসিবল গেটের তালা খুলে দেয়।
মাঝে মাঝে রাতের বেলা আমিন নিচে এসে আমার ফেরার জন্য অপেক্ষা করে, তখন দেলোয়ার ওর দিকে একটা টুল এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘স্যার, বসেন। আজকে আমার ঘুম আসতেছে না।’
আমিন খুশি মনেই বসে। দেলোয়ার তখন নিজে থেকেই বলে, ‘স্যার, বেশি দিন আর কেয়ারটেকারের কাজ করব না। অপেক্ষায় আছি। টরেটক্কা একটা লাগলেই এই কাজ ছেড়ে দিব।’
‘কিসের টরেটক্কা?’
দেলোয়ার তার চৌকিতে পাতা পাতলা তোশকের নিচ থেকে দুটো লটারির টিকিট বের করে আনে।
‘এই যে টিকেট কিনছি। প্রথম পুরস্কার পাঁচ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কার তিন লাখ। একবার লাগলেই আমারে আর পায় কে! গ্রামে গিয়া একটা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করব। পুরানা টিনের ঘরটা মেরামত করব, ছোট বোনটাকে বিয়া দিব।’
দেলোয়ারের চোখে–মুখে তার রংবেরঙের স্বপ্নগুলো তারাবাতির মতো ঝিলিক দিতে থাকে। আমিন বলে, ‘তুমি বিয়া করবা না? পছন্দের কেউ নাই তোমার?’
‘করব স্যার। একজন আছে। আশেপাশেই থাকে। লাভ ইজ হেভেন, হেভেন ইজ লাভ। স্বর্গ থেকে আসে প্রেম, স্বর্গে চলে যায়।’
আমিন দেলোয়ারের কথা শুনে হাসে, ‘হেভেনে গেছ কখনো? লাভ হেভেন না হেল, বুঝলা কেমনে?’
দেলোয়ার লাজুক ভঙ্গিতে বলে, ‘বোঝা যায়, স্যার। দেখবেন, মনে খুশি লাগে!’
এমন সময় হয়তো আমার অফিসের গাড়ি গেটের সামনে বেরসিকের মতো হর্ন বাজায়। ফলে প্রেমের গল্পটা সেখানেই থেমে যায়।
আরেক দিন আমার জন্য অপেক্ষারত আমিনের কাছে এসে দেলোয়ার ফিসফিস করে বলে, ‘বিল্ডিংয়ে একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটছে স্যার, শুনবেন?’
আমরা সবাই জানি, এই দালানের কোথায় কী ঘটল না ঘটল, তার সবই দেলোয়ারের নখদর্পণে। ওর চিল চক্ষু এড়িয়ে কোথাও উল্টোপাল্টা কিছু ঘটার জো নেই। সময় কাটাতে আমিন দেলোয়ারের গল্প শোনে। সেই গল্প আমিনের কাছ থেকে আবার আমি শুনি এবং এখন আপনাদের শোনাই।
দেলোয়ারের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, এই বিল্ডিংয়ের ছয়তলায় একটা রহস্যময় পরিবার ভাড়া এসেছে। এক বয়স্ক মা, সঙ্গে তাঁর দারুণ রূপসী চার মেয়ে। চার তরুণীই আবার একই বয়সী, যেন যমজ চার বোন।
‘এমন তো হতেই পারে! এতে রহস্যের কী আছে?’
আছে। কারণ, দেলোয়ার খেয়াল করেছে, প্রায় প্রতিদিন দুপুর বা সন্ধ্যায় একটা কালো গাড়ি এসে নিচে থামে। গাড়ি থেকে কোট–টাই পরা ফিটফাট বড়লোক ধরনের মানুষ নেমে আসে। কয়েক ঘণ্টা ওই ফ্ল্যাটে কাটিয়ে তারা চলে যায়। দেলোয়ার আরও লক্ষ করেছে, যারা এখানে আসে তারা মাথা নিচু করে, এদিকে–ওদিকে তাকিয়ে, পারলে মুখ ঢেকে ওপরে আসা–যাওয়া করে।
কেউ কেউ আবার হাতে করে মিষ্টির প্যাকেটও নিয়ে আসে।
এই বিল্ডিংয়ের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব যেহেতু দেলোয়ারের, তাই সে ব্যাপারটা বাড়িওয়ালি খালাম্মাকে জানায়। দেলোয়ারের পর্যবেক্ষণ শুনে খালাম্মা একদিন ওকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরবেলা সরেজমিনে যাচাই করতে ছয়তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হন। কলবেল দেওয়ার অনেকক্ষণ পর বাড়ির বয়স্কা সদস্য মুখে অমায়িক হাসি নিয়ে দরজা খোলেন।
খালাম্মা ঘরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের দামি সোফায় গাঁট হয়ে বসে গম্ভীর মুখে জানতে চাইলেন, ‘আপনার মেয়েরা কোথায়?’
দেলোয়ার খালাম্মার পিছু পিছু ঘরে ঢুকে এক কোনায় দাঁড়িয়েছিল। ভদ্রমহিলা তার দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে মধুর কণ্ঠে বলে, ‘দেলোয়ার তুমি বসো, বাবা।’
তারপর বাড়িওয়ালি খালাম্মার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কে কথা বলে?’
‘আছে। আমার মেয়েরা পাশের ঘরে কোরআন শরিফ পড়তেছে।’
‘রাখি, পাখি, সুখী, লিপি এই দিকে আসো.
এদিকে চার মেয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেছে। দেলোয়ারের মনে হলো, চারটা মেয়েই অপূর্ব সুন্দর। চোখ ফেরানো যায় না, কাকে ফেলে কাকে দেখি অবস্থা!
ভদ্রমহিলা তার মেয়েদের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলেন, ‘যাও মেয়েরা, মেহমানদের জন্য চা-নাশতা নিয়ে আসো।’
বাড়িওয়ালি খালাম্মা এবার কঠোর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার আয়ের উৎস কী? মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে কীভাবে চলেন?’
এমন কাঠখোট্টা প্রশ্নে মহিলা একটুও ঘাবড়ালেন না। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘আমার স্বামী অনেক ল্যান্ড প্রপার্টি রেখে গেছেন, আপা। মাশা আল্লাহ, সারা জীবন বসে খেলেও শেষ হবে না। উনি বহু বছর বিদেশে ছিলেন তো, আমাদের কোনো দিকেই অভাব রাখেন নাই। শুধু এমন হঠাৎ করে চলে গেলেন! ...’
মহিলা শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন।
‘আচ্ছা। না, মানে, আপনার বাসায় প্রায়ই নানা ধরনের মানুষ আসে...’
‘ওমা! আসবে না? আমি একা একজন বিধবা মেয়ে মানুষ, ঢাকা শহরে থাকি! আত্মীয়স্বজন খোঁজখবর নিতে আসবে না, কী বলেন এইটা?’
ইতিমধ্যে রাখি, পাখি, সুখী, লিপি হাতে হাতে চায়ের সঙ্গে হরেক রকম নাশতা এনে টেবিল ভরে ফেলেছে।
মহিলা বলল, ‘আপা চা নেন। দেলোয়ার তুমিও নেও। আর হ্যাঁ, আমাদের আত্মীয়স্বজন একটু বেশি। কারণ, আমাদের মধ্যে মায়া–মমতা বেশি! এখন আপনারা যদি সেটা মানতে না পারেন...’
অভিমানে মহিলার গলা বুজে আসে।
খালাম্মা তাড়াতাড়ি বললেন, ‘না, সেটা না। মানে কীভাবে যে বলি! আপনি অল্পবয়সী মেয়েদের নিয়ে থাকেন তো...’
‘দেখেন, যাদের মনে কলুষতা, তারা সুন্দর জিনিসকেও অসুন্দর করে দেখে। পবিত্রতার মধ্যেও দোষ খুঁজে পায়। যা–ই হোক, আপনাদের মনে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তো আমাদের এই বাড়ি ছেড়ে দেওয়াই ভালো।’
ওই ঘটনার পরের মাসেই পরিবারটি বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
যাওয়ার আগে ওই চার মেয়ের মা দেলোয়ারের পকেটে এক হাজার টাকা গুঁজে দেয় আর তীব্র কণ্ঠে বলে, ‘তোমার মিথ্যা রিপোর্টের জন্যই আমাদের এই বাসাটা ছাড়তে হলো! আমি পীর বংশের মেয়ে! সারা জীবন তোমাকে অভিশাপ দিয়ে যাব আমি! তোমার কখনোই ভালো হবে না!’
মহিলার এই কথায় দেলোয়ারের খুব মন খারাপ হয়!
‘স্যার, আমি কি তবে কাজটা অন্যায় করলাম? তাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দিলাম! এমন একটা অভিশাপ যদি সত্যিই গায়ে লাইগ্যা যায়!’
তার সদাপ্রসন্ন চেহারার ওপর মাকড়সার জালের মতো বিষাদ ও অপরাধবোধের একটা হালকা ছায়া ম্লান হয়ে পড়ে থাকে।
‘উনার অভিশাপেই আমার লটারি লাগতেছে না! শিওর!’ দেলোয়ার একদিন বলে।
আমিন সান্ত্বনা দেয়। ‘ধুর! শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।’
সপ্তাহখানেক পর আরও ম্লান মুখে দেলোয়ার বলে, ‘স্যার আমার ভালোবাসা শেষ। মাই লাভ লস্ট। হেভেন আর নাই। মেয়েটারে ওর মা অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিছে...’
‘আহা! খুবই দুঃখজনক! তোমার জন্য খারাপ লাগছে!’ আমিন সহানুভূতি জানায়।
‘এসবই স্যার অভিশাপের ফল! আমি পাপ করে ফেলছি স্যার! কীভাবে মুক্তি পাব জানি না।’
দেলোয়ারের কণ্ঠে নির্জলা হতাশা।
‘আচ্ছা! এক কাজ করো, তুমি খোঁজ নেও, ওনারা কোথায় গেছে। তারপর গিয়ে মাফ চেয়ে আসো।’ আমিন বুদ্ধি দেয়।
কয়েক দিন পর দেলোয়ার উৎফুল্ল হয়ে জানায়, ‘স্যার, খবর পেয়ে গেছি। ওনারা বর্তমানে কাঁঠালবাগান আছেন। ৩৭ নম্বর নূর ভিলা।’
‘বাহ্! বেশ! কেমনে খোঁজ পাইলা?’
‘কেয়ারটেকার নেটওয়ার্ক স্যার। খুব শক্তিশালী।’
‘তাইলে তো ভালোই হইল। যাও, একদিন গিয়া দেখা করো।’
এর মধ্যে আমি আমার অফিস বদল করি। এক চ্যানেল থেকে অন্য চ্যানেলে যোগ দিই। এই বাসা থেকে অফিস দূরে হয়ে যায় বলে আমরা নতুন বাসা খুঁজতে থাকি। এক ছুটির দিনে হঠাৎ বাসায় বেল বাজে। দরজা খুলে দেখি দেলোয়ার দাঁড়িয়ে আছে। একটু উদ্ভ্রান্ত। বিপর্যস্ত। সে আমিনকে কিছু বলতে চায়।
‘কী ব্যাপার দেলোয়ার, লটারি পেয়ে গেছ নাকি?’
দেলোয়ারের দিশাহারা চেহারা দেখে আমিন প্রশ্ন করে।
‘স্যার, আমি তো কাঁঠালবাগান গেছিলাম। আপনি বলছিলেন, ওই যে ওনাদের সঙ্গে দেখা করতে।’
‘আচ্ছা, আচ্ছা, কী হলো? উনি মাফ করছেন?’
‘না স্যার! গিয়া শুনি তাজ্জব ব্যাপার! ওনারা নাই। কেউ বলে মহিলা কাউকে কিছু না জানায়া রাতের অন্ধকারে হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। এক্কেবারে বাতাসে মিলায়া যাওয়ার মতো। আবার কেউ কেউ বলে, কালকে গভীর রাতে চার মেয়েসহ ওই মহিলাকে পুলিশ নাকি ধইরা নিয়া গেছে!’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র এই ব র জন য আম দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
সব সুযোগ–সুবিধা কবে চালু হবে
বিগত সরকারের আমলে রেল খাতে উন্নয়নের নামে বিপুল ব্যয়ে অহেতুক অনেক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সেটি প্রকাশ পায়। দেড় বছর আগে উদ্বোধন হওয়া কক্সবাজার রেলস্টেশনে রাখা হয়েছে যাত্রীদের জন্য অনেক সুযোগ–সুবিধা, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেসবের কিছুই চালু করা হয়নি। যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত হওয়া ছাড়াও পড়ে থেকে থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক জিনিসপত্র। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছয়তলার রেলস্টেশনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। মূল প্রকল্পে থাকলেও স্টেশনের এক ডজনের বেশি যাত্রী পরিষেবা চালু হয়নি। ছয়তলা ভবনের নিচতলায় তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী-সেতু, দ্বিতীয় তলায় শপিং মল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয়—কিছুই চালু হয়নি। ঝিনুকের আদলে তৈরি ফোয়ারায় নেই পানির বিচ্ছুরণ, সেদিকের প্রবেশপথটিও বন্ধ।
উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, রাতের ট্রেনে পর্যটকেরা রেলস্টেশনে পৌঁছে লকারে লাগেজ কিংবা মালামাল রেখে সমুদ্রসৈকত, দর্শনীয় স্থানে ঘুরেফিরে রাতের ট্রেনে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবেন। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি। যাত্রীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হলেও সেগুলো এখনো কেন ফেলে রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। এতে যাত্রীরা সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন, দুর্ভোগেরও শিকার হচ্ছেন। শুধু তা–ই নয়, সরকার আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তা ছাড়া জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাওয়ায় স্টেশনটির ক্ষতিসাধনও হচ্ছে। ফলে দেশের প্রথম ও একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা হলেও আদতে সেটি নামেই থেকে গেছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বলছে, আইকনিক রেলস্টেশনের সব কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। রেলস্টেশন তৈরির পর এক বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণাবেক্ষণের সময়সীমা থাকে। ভবনের কোথাও সমস্যা দেখা দিলে তা ঠিক করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে তারা রেলস্টেশনটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।
দৈনিক ১০ জোড়া ট্রেন চলাচলের চাহিদাসম্পন্ন কক্সবাজারে এখন চলছে দুই জোড়া। মালবাহী ট্রেন চালু না হওয়ায় কক্সবাজারে উৎপাদিত লবণ, মাছ, পান–সুপারি এবং টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। তাতে সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন, সব ধরনের সুযোগ–সুবিধাসহ সত্যিকার অর্থে আইকনিক রেলস্টেশনটি চালু করা হবে কবে। আমরা আশা করব, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে রেলস্টেশনটি বুঝে নেওয়ার আগে প্রতিটি সুযোগ–সুবিধা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, তা যাচাই–বাছাই করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব অবহেলা গ্রহণযোগ্য হবে না।