বিপিএলের কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে কত পাওনা, কত দেনা বিসিবির
Published: 3rd, June 2025 GMT
বিপিএলের টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এবার কোন দলের সঙ্গে কত দেনা–পাওনা, তার হিসাব দিয়েছে তারা। আজ রাতে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব নিয়ে ৩১ মের বোর্ড সভার সিদ্ধান্তগুলোর কথা জানিয়েছে বিসিবি। আগেই জানানো হয়েছে, বিপিএলের প্লে–অফে খেলা চার দল টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ হিসেবে ৫৫ লাখ ও বাকি চারটি ৪৫ লাখ টাকা পাবে।
সর্বশেষ আসরের দল চিটাগাং কিংসের দেনা–পাওনার হিসাবটা একটু জটিল—সব মিলিয়ে বিসিবির কাছ থেকে প্রাইজমানি ও টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ মিলিয়ে রানার্স আপ হওয়া দলটির পাওয়ার কথা ২ কোটি ৫ লাখ টাকা। তবে টুর্নামেন্টের সময়ই এক দফায় চিটাগংয়ের খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ৮৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও হোটেল বিল বাবদ ১৫ লাখ টাকা দেয় বিসিবি।
ওই টাকা বাদ দিয়ে বিসিবির কাছে চিটাগং কিংসের পাওয়ার কথা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি বাবদ ১৫ লাখ ও খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের আরও ৫২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা বকেয়া তাদের। সব হিসাব বাদ দিলে বিসিবির কাছ থেকে ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা পাবে তারা।
প্রাইজমানি ও টিকিট বিক্রির টাকা বাবদ বিসিবির কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা রংপুর রাইডার্সের। তবে তাদের কাছে আবার ফ্র্যাঞ্চাইজি ফির ৫০ লাখ টাকা পাওনা বিসিবির। তা বাদ দিয়ে এখন তারা পাবে ৪৫ লাখ টাকা।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের টিকিট বিক্রির ৪৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল বিসিবির কাছ থেকে। তবে তারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি বাবদ ১৫ লাখ টাকা দেয়নি, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকও বাকি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দেনা–পাওনার হিসাব শেষে এখনো তাদের বকেয়া ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিপিএলের গত আসরে সবচেয়ে সমালোচিত দল দুর্বার রাজশাহী টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে তাদের খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বাবদ বাকি রয়েছে ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এই টাকা বাদ দিলে বিসিবি উল্টো রাজশাহীর কাছে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওনা হয়। এই দুই দলের ড্রাফটের ক্রিকেটারদের টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো না দিলে বিসিবিই মিটিয়ে দেবে বলে জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রাইজমানি ও টিকিট বিক্রি বাবদ বিসিবির কাছে খুলনা টাইগার্সের পাওনা ছিল ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজ ফি বাবদ তাদের কাছ থেকে বিসিবি ২৫ লাখ টাকা পায়, খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক তাদের বাকি ৪৮ লাখ টাকা। সব বাদ দিয়ে এখন বিসিবির কাছ থেকে ৪২ লাখ টাকা পাবে খুলনা। এ ছাড়া বিসিবির কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ঢাকা ক্যাপিটালসের খেলোয়াড়দের সমান অর্থের পারিশ্রমিক বাকি থাকায় এখন তারা আর কোনো টাকা পাবে না, বকেয়াও নেই।
বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দল ফরচুন বরিশাল তাদের সব খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক দিয়ে দিয়েছে। প্রাইজমানি বাবদ ইতিমধ্যেই বিসিবির কাছ থেকে আড়াই কোটি টাকা পেয়েছে তারা। এখন টিকিট বিক্রির লভ্যাংশের ৫৫ লাখ টাকা পাবে বরিশাল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ ৪৫ ল খ ট ক প র ইজম ন ব প এল র ১৫ ল খ
এছাড়াও পড়ুন:
সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টসের সাবেক প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, সালমান রহমান ও তাঁর ছেলেকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি দেড় শ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংক গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ও বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের অর্থ উত্তোলন-সংক্রান্ত নানা অনিয়মের জন্য এসব ব্যক্তিকে জরিমানার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৯৬৫তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসব সিদ্ধান্তের কথা আজ বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে বিএসইসি। সংস্থাটি জানায়, আড়াই হাজার কোটি টাকার শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডটি ২০২৩ সালের ৪ জুন বিএসইসির কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। আর ওই বছরের ১২ জুলাই কমিশনের পক্ষ থেকে সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয় শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের নামে। অথচ কোম্পানিটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ২০২৩ সালের ২ মার্চ। নিবন্ধনের মাত্র এক মাস পরই ১১ এপ্রিল শ্রীপুর টাউনশিপের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর আবেদন করা হয়।
বিএসইসি আরও জানায়, বন্ডটির জামিনদার বা গ্যারান্টার ছিল আইএফআইসি ব্যাংক। পরামর্শক ও অ্যারেঞ্জার ছিল মার্চেন্ট ব্যাংক আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস। ট্রাস্টি ছিল সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স, নিরীক্ষক ছিল এমজে আবেদিন অ্যান্ড কোং এবং ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ছিল এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড। আইএফআইসি ব্যাংক এই বন্ড ইস্যু না করলেও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নাম ব্যবহার করে। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়েছিল। পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে তাদের প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এই বন্ড ইস্যুতে অনিয়মের জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা জরিমানা ও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ব্যাংকটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা ও পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টসের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে তাঁর বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
একই ঘটনায় ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর বাইরে শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির ওই সভায় বেক্সিমকোর ৩ হাজার কোটি টাকার পাঁচ বছর মেয়াদি অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে কোম্পানিটিকে বিধিবহির্ভূতভাবে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় শিবলী রুবাইয়াতকে আজীবন এবং শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
আজীবন অবাঞ্ছিত হওয়া ব্যক্তিরা শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট কী কী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন বা পারবেন না, তার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এ সিদ্ধান্ত কীভাবে কার্যকর করা হবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা ঘোষণা করা হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কমিশনের পক্ষ থেকে আলাদা নির্দেশনা জারি করা হবে। সে অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আইনি ভিত্তি ও সক্ষমতা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেই। ফলে শেষ পর্যন্ত এসব সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে, এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেগুলো বাস্তবে সহজে প্রয়োগযোগ্য এবং ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জের মধ্যে না পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় বাস্তবভিত্তিক। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন নয়, যা কার্যকর করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘোষণার কথা আমরা শুনেছি। কিন্তু পুঁজিবাজার ও সিকিউরিটিজ আইনে এ ধরনের ভাষা ও শাস্তির মানে কী, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। এমনকি এর অর্থও আমি বুঝতে অক্ষম।’