Samakal:
2025-11-03@00:30:49 GMT

যত গর্জিল তত বর্ষিল না

Published: 3rd, June 2025 GMT

যত গর্জিল তত বর্ষিল না

সোমবার অপরাহ্ণে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবৎসরের জন্য যেই জাতীয় বাজেট পেশ করিয়াছেন, উহাকে অনেকে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টারূপে দেখিলেও বাস্তবে জনপ্রত্যাশা পূরণে কতটুকু সক্ষম হইবে– সেই প্রশ্নও জোরালোভাবে উঠিয়াছে। সাধারণত প্রতি অর্থবৎসরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি যেইখানে দস্তুর, সেইখানে আলোচ্য বাজেটে বিদায়ী অর্থবৎসরে বরাদ্দকৃত ৭ লক্ষ ৯৭ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা প্রায় ১ শতাংশ কম ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে ৭ লক্ষ ৯০ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা কিঞ্চিৎ কম। ইহাকেই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টা বলা হইতেছে। উপরন্তু অর্থ উপদেষ্টা অতীতের প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হইতে এইবার সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণার দিকে সরিয়া যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন। ইহার নমুনারূপে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত কতিপয় ভাতা বৃদ্ধির কথা বলা হইতেছে। কিন্তু বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ কিন্তু জিডিপির ৪-৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবৎসর অপেক্ষা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অঙ্কটা মোট বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যাহা অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অপেক্ষা অনেক কম। কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করিয়াছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে কতিপয় ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হইলেও জিডিপি বিবেচনায় সুরক্ষা জালে ব্যয় বাস্তবে হ্রাস পাইয়াছে। টিসিবির পারিবারিক কার্ড কর্মসূচি হইতে বাদ পড়া ৪৩ লক্ষ পরিবার বিষয়ে যদ্রূপ কোনো বক্তব্য বাজেটে নাই, তদ্রূপ সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীর তালিকা হইতে বাদ পড়াদের লইয়াও কিছু বলা হয় নাই।

শিল্পের কাঁচামালে অগ্রিম কর হ্রাস, কৃষি কার্যক্রম হইতে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে কর অব্যাহতি দান নিঃসন্দেহে উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু সামগ্রিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা স্পষ্ট নহে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ শিল্প খাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার শিকার হইয়া গত ৯ মাসে কলকারখানা বন্ধ, তৎসহিত সামগ্রিক ব্যবসায় ক্ষেত্রে যেই স্থবিরতা চলিতেছে, উহা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার উপর ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়াছে। উক্ত অবস্থা হইতে কী প্রকারে উত্তরণ ঘটিবে, বাজেটে তাহা স্পষ্ট নহে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অদ্যাবধি গৃহীত বিবিধ কর্মসূচিও এই ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখিতেছে। অর্থনীতির এই সকল সংকটের কারণে রাজস্ব আহরণও যে প্রবল ধাক্কা খাইয়াছে, তাহার সমাধানও বাজেটে নাই, যদিও আগামী অর্থবৎসরে রাজস্ব আয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হইয়াছে। ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং পাচারকৃত সম্পদের বৃহদাংশ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হইলেও তদুপায় সম্পর্কে উচ্চারণ নাই বাজেটে। সর্বোপরি বিগত সরকারের ন্যায় এই সরকারও অবৈধ অর্থ বৈধ করিবার বিতর্কিত পথ উন্মুক্ত রাখিয়াছে, যদিও এই সরকারেরই বিভিন্ন ব্যক্তি বিগত সময়ে উক্ত বিষয়ে সর্বাধিক সমালোচনামুখর ছিলেন।

আক্ষেপের বিষয়, ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে অদ্যাবধি সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির মুখে বিশেষত অর্থনীতির খোলনলচে পরিবর্তন বিষয়ে যেই সকল গর্জন শোনা গিয়াছে, প্রস্তাবিত বাজেটে উহার কিয়দংশও বর্ষিত হয় নাই। তবে আমরা মনে করি, সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবসমূহ চূড়ান্ত হইলে নিশ্চয় আগামী অর্থবৎসরের বাজেট অনেকাংশে জনমনে আশার সঞ্চার ঘটাইতে সক্ষম হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট সরক র র স রক ষ বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ