Samakal:
2025-07-29@20:21:40 GMT

যত গর্জিল তত বর্ষিল না

Published: 3rd, June 2025 GMT

যত গর্জিল তত বর্ষিল না

সোমবার অপরাহ্ণে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবৎসরের জন্য যেই জাতীয় বাজেট পেশ করিয়াছেন, উহাকে অনেকে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টারূপে দেখিলেও বাস্তবে জনপ্রত্যাশা পূরণে কতটুকু সক্ষম হইবে– সেই প্রশ্নও জোরালোভাবে উঠিয়াছে। সাধারণত প্রতি অর্থবৎসরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি যেইখানে দস্তুর, সেইখানে আলোচ্য বাজেটে বিদায়ী অর্থবৎসরে বরাদ্দকৃত ৭ লক্ষ ৯৭ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা প্রায় ১ শতাংশ কম ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে ৭ লক্ষ ৯০ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা কিঞ্চিৎ কম। ইহাকেই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টা বলা হইতেছে। উপরন্তু অর্থ উপদেষ্টা অতীতের প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হইতে এইবার সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণার দিকে সরিয়া যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন। ইহার নমুনারূপে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত কতিপয় ভাতা বৃদ্ধির কথা বলা হইতেছে। কিন্তু বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ কিন্তু জিডিপির ৪-৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবৎসর অপেক্ষা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অঙ্কটা মোট বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যাহা অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অপেক্ষা অনেক কম। কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করিয়াছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে কতিপয় ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হইলেও জিডিপি বিবেচনায় সুরক্ষা জালে ব্যয় বাস্তবে হ্রাস পাইয়াছে। টিসিবির পারিবারিক কার্ড কর্মসূচি হইতে বাদ পড়া ৪৩ লক্ষ পরিবার বিষয়ে যদ্রূপ কোনো বক্তব্য বাজেটে নাই, তদ্রূপ সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীর তালিকা হইতে বাদ পড়াদের লইয়াও কিছু বলা হয় নাই।

শিল্পের কাঁচামালে অগ্রিম কর হ্রাস, কৃষি কার্যক্রম হইতে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে কর অব্যাহতি দান নিঃসন্দেহে উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু সামগ্রিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা স্পষ্ট নহে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ শিল্প খাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার শিকার হইয়া গত ৯ মাসে কলকারখানা বন্ধ, তৎসহিত সামগ্রিক ব্যবসায় ক্ষেত্রে যেই স্থবিরতা চলিতেছে, উহা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার উপর ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়াছে। উক্ত অবস্থা হইতে কী প্রকারে উত্তরণ ঘটিবে, বাজেটে তাহা স্পষ্ট নহে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অদ্যাবধি গৃহীত বিবিধ কর্মসূচিও এই ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখিতেছে। অর্থনীতির এই সকল সংকটের কারণে রাজস্ব আহরণও যে প্রবল ধাক্কা খাইয়াছে, তাহার সমাধানও বাজেটে নাই, যদিও আগামী অর্থবৎসরে রাজস্ব আয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হইয়াছে। ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং পাচারকৃত সম্পদের বৃহদাংশ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হইলেও তদুপায় সম্পর্কে উচ্চারণ নাই বাজেটে। সর্বোপরি বিগত সরকারের ন্যায় এই সরকারও অবৈধ অর্থ বৈধ করিবার বিতর্কিত পথ উন্মুক্ত রাখিয়াছে, যদিও এই সরকারেরই বিভিন্ন ব্যক্তি বিগত সময়ে উক্ত বিষয়ে সর্বাধিক সমালোচনামুখর ছিলেন।

আক্ষেপের বিষয়, ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে অদ্যাবধি সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির মুখে বিশেষত অর্থনীতির খোলনলচে পরিবর্তন বিষয়ে যেই সকল গর্জন শোনা গিয়াছে, প্রস্তাবিত বাজেটে উহার কিয়দংশও বর্ষিত হয় নাই। তবে আমরা মনে করি, সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবসমূহ চূড়ান্ত হইলে নিশ্চয় আগামী অর্থবৎসরের বাজেট অনেকাংশে জনমনে আশার সঞ্চার ঘটাইতে সক্ষম হইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট সরক র র স রক ষ বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তের আহ্বান সিপিজের

খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক মিলন ত্রিপুরার ওপর হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার সিপিজের এক টুইটে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মিলন ত্রিপুরা ১৭ জুলাই একটি বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন ও ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ