সোমবার অপরাহ্ণে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবৎসরের জন্য যেই জাতীয় বাজেট পেশ করিয়াছেন, উহাকে অনেকে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টারূপে দেখিলেও বাস্তবে জনপ্রত্যাশা পূরণে কতটুকু সক্ষম হইবে– সেই প্রশ্নও জোরালোভাবে উঠিয়াছে। সাধারণত প্রতি অর্থবৎসরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি যেইখানে দস্তুর, সেইখানে আলোচ্য বাজেটে বিদায়ী অর্থবৎসরে বরাদ্দকৃত ৭ লক্ষ ৯৭ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা প্রায় ১ শতাংশ কম ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধার্য করা হইয়াছে ৭ লক্ষ ৯০ সহস্র কোটি টাকা অপেক্ষা কিঞ্চিৎ কম। ইহাকেই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টা বলা হইতেছে। উপরন্তু অর্থ উপদেষ্টা অতীতের প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হইতে এইবার সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণার দিকে সরিয়া যাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন। ইহার নমুনারূপে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সুরক্ষার অন্তর্ভুক্ত কতিপয় ভাতা বৃদ্ধির কথা বলা হইতেছে। কিন্তু বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ কিন্তু জিডিপির ৪-৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবৎসর অপেক্ষা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেশি। অঙ্কটা মোট বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যাহা অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অপেক্ষা অনেক কম। কমিশন স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বা জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করিয়াছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে কতিপয় ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হইলেও জিডিপি বিবেচনায় সুরক্ষা জালে ব্যয় বাস্তবে হ্রাস পাইয়াছে। টিসিবির পারিবারিক কার্ড কর্মসূচি হইতে বাদ পড়া ৪৩ লক্ষ পরিবার বিষয়ে যদ্রূপ কোনো বক্তব্য বাজেটে নাই, তদ্রূপ সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীর তালিকা হইতে বাদ পড়াদের লইয়াও কিছু বলা হয় নাই।
শিল্পের কাঁচামালে অগ্রিম কর হ্রাস, কৃষি কার্যক্রম হইতে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে কর অব্যাহতি দান নিঃসন্দেহে উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু সামগ্রিক কর্মসংস্থান বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা স্পষ্ট নহে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ শিল্প খাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার শিকার হইয়া গত ৯ মাসে কলকারখানা বন্ধ, তৎসহিত সামগ্রিক ব্যবসায় ক্ষেত্রে যেই স্থবিরতা চলিতেছে, উহা বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার উপর ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলিয়াছে। উক্ত অবস্থা হইতে কী প্রকারে উত্তরণ ঘটিবে, বাজেটে তাহা স্পষ্ট নহে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অদ্যাবধি গৃহীত বিবিধ কর্মসূচিও এই ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখিতেছে। অর্থনীতির এই সকল সংকটের কারণে রাজস্ব আহরণও যে প্রবল ধাক্কা খাইয়াছে, তাহার সমাধানও বাজেটে নাই, যদিও আগামী অর্থবৎসরে রাজস্ব আয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হইয়াছে। ব্যাংক খাতের সংস্কার এবং পাচারকৃত সম্পদের বৃহদাংশ পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হইলেও তদুপায় সম্পর্কে উচ্চারণ নাই বাজেটে। সর্বোপরি বিগত সরকারের ন্যায় এই সরকারও অবৈধ অর্থ বৈধ করিবার বিতর্কিত পথ উন্মুক্ত রাখিয়াছে, যদিও এই সরকারেরই বিভিন্ন ব্যক্তি বিগত সময়ে উক্ত বিষয়ে সর্বাধিক সমালোচনামুখর ছিলেন।
আক্ষেপের বিষয়, ক্ষমতা গ্রহণের পর হইতে অদ্যাবধি সরকারের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির মুখে বিশেষত অর্থনীতির খোলনলচে পরিবর্তন বিষয়ে যেই সকল গর্জন শোনা গিয়াছে, প্রস্তাবিত বাজেটে উহার কিয়দংশও বর্ষিত হয় নাই। তবে আমরা মনে করি, সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবসমূহ চূড়ান্ত হইলে নিশ্চয় আগামী অর্থবৎসরের বাজেট অনেকাংশে জনমনে আশার সঞ্চার ঘটাইতে সক্ষম হইবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট সরক র র স রক ষ বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে