নৌপথে ঈদযাত্রায় শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নজরদারি
Published: 4th, June 2025 GMT
ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের নদীবন্দরগুলোতে ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বুধবার (৪ জুন) থেকে ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল, ভোলা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন ঘাটে বাড়তে শুরু করেছে যাত্রীর চাপ। ঈদের আনন্দে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা না ঘটে, সেই লক্ষ্যে সরকার নিয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও তদারকি ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাম্প্রতিক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানানো হয়, এবারের ঈদযাত্রায় নৌপথে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ, মাঝ নদীতে যাত্রী ওঠানো, লঞ্চের ছাদে যাত্রী পরিবহন এবং জুয়া খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভাড়া নিয়ে অনিয়ম হলে রুট পারমিট বাতিল ও মোবাইল কোর্টে জরিমানা হবে বলেও স্পষ্ট জানানো হয়েছে।
ভাড়ায় অনিয়মে জরিমানা ও পারমিট বাতিল
ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নৈমিত্তিক হলেও এবার তা ঠেকাতে কঠোর মনোভাব নিয়েছে সরকার। প্রতিটি লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা স্পষ্টভাবে প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। কেউ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিলে তাৎক্ষণিক মোবাইল কোর্টে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন:
ঈদযাত্রায় প্রস্তুত পাটুরিয়া-আরিচা নৌরুট
সদরঘাটে টিকিটে নেই টান, ৭০ শতাংশ কেবিন খালি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌ পরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এক টাকাও অতিরিক্ত আদায় বরদাশত করা হবে না। ভাড়ায় অনিয়ম ধরা পড়লে মালিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে জরিমানা এবং প্রয়োজনে রুট পারমিট বাতিল করা হবে।”
ফিটনেস সনদ ও মাঝনদীতে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ
এবার ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ ঈদযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। পাশাপাশি ঈদের আগের তিনদিন ও পরবর্তী সাতদিন নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। প্রতিবারের মতো এবারো মাঝনদীতে যাত্রী ওঠানোর প্রবণতা বন্ধে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন,“মাঝনদীতে যাত্রী ওঠা মানেই জীবনের ঝুঁকি। এবার কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল, জরিমানা এবং লাইসেন্স বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টহলে আনসার, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশ
নৌবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার আনসার, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টহল দল মোতায়েন থাকবে।
ঢাকার সদরঘাট, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, নারায়ণগঞ্জ, বরিশালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটকে ‘উচ্চ নজরদারির এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ঘাটে থাকবে অতিরিক্ত টহল, মোবাইল কোর্ট এবং ফায়ার সার্ভিসের ভাসমান ইউনিট।
প্রতিটি লঞ্চে ন্যূনতম চারজন আনসার সদস্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। ঘাট এলাকায় স্টাফদের সুনির্দিষ্ট পোশাক ও আইডি কার্ড পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ইজারাদারদের কঠোর বার্তা
নৌযাত্রীদের হয়রানি ঠেকাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের বার্তা হলো- অতিরিক্ত চার্জ বা ফি নেওয়া যাবে না। নির্ধারিত কর্মীদের ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র পরিধান বাধ্যতামূলক।
লঞ্চে ছাদে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ, জুয়া খেলার ওপর জিরো টলারেন্স
লঞ্চের ছাদে যাত্রী ওঠানো নিষিদ্ধ, জুয়া খেলার ওপর জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হবে। লঞ্চের ছাদে যাত্রী তোলা এবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ছাদে ওঠার সিঁড়িগুলো খুলে ফেলতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীপথে চলাচলকারী যেকোনো লঞ্চে জুয়া খেলার আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
মাস্টার, ড্রাইভারসহ লঞ্চের প্রত্যেক কর্মীকে নাম ট্যাগসহ ইউনিফর্ম পরা বাধ্যতামূলক।
সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ফেরিঘাটে প্রস্তুত ৪৬টি ফেরি
ঈদের সময় জরুরি পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে পাটুরিয়া, আরিচা, চাঁদপুর, ভোলা, লাহারহাট, চিলমারী ও ধাওয়াপাড়া ঘাটে সর্বমোট ৪৬টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসময় সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ, কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পচনশীল পণ্যের যানবাহন চলতে পারবে। চাঁদপুর থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের জন্য থাকছে ছয়টি বেসরকারি লঞ্চ এবং দুইটি সরকারি স্টিমার।
নতুন রুট চালু ও রাজধানীর রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ
সম্প্রতি চিলমারী-রৌমারী রুটে ড্রেজিং শেষে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। এছাড়া ঈদের যানজট কমাতে ৩০ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কোনো বাস দাঁড় করালে রেকার দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।
আবহাওয়া ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা
ঈদের সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় আবহাওয়া অধিদপ্তরকে নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেকোনো অনিয়ম, হয়রানি বা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যাত্রীরা সরাসরি জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ কিংবা নৌ পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহফুজুর আলম বলেন, ঈদ যেন আনন্দ বয়ে আনে, দুর্ঘটনা নয় এই লক্ষ্যেই সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীকে মানবিকতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পথ ঈদ ঈদয ত র য় প রস ত ত ব যবস থ সদরঘ ট পর বহন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সড়ক, ট্রেনে ভিড় থাকলেও লঞ্চে যাত্রী কম
স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। লম্বা ছুটি থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কম। যথাসময়ে ছাড়ছে রেল ও সড়কপথের গণপরিবহন। এসব গণপরিবহনে যাত্রীর সংকট না দেখা গেলেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। লঞ্চে মানুষের ভিড় ছিল কম। আগাম টিকিটেও নেই প্রত্যাশিত সাড়া। অধিকাংশ কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ ব্যবস্থা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল সোমবার ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যথাসময়ে ছেড়ে গেছে ট্রেন। সকাল থেকেই যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরাও। তারা বলছেন, এবার স্টেশনে প্রবেশপথে কয়েক দফা চেকিং হয়েছে। ফলে টিকিটবিহীন কেউ ঢুকতে পারছে না। এ ছাড়া সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে না, পোহাতে হচ্ছে না ভোগান্তিও।
এদিকে রাজধানীবাসীর ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি সতর্কতাসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিটবিহীন কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না রেলস্টেশনে। এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ব্যাপকভাবে চেকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হকার ও ভবঘুরেদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বিশেষ একটি টিম কাজ করছে।
এ ছাড়া বাস টার্মিনালগুলোতেও যাত্রীর চাপ কম। এতে করে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদের দুই দিন আগে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা। যাত্রীরা বলছেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হননি তারা। বেশি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে না।
ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। নাড়ির টানে ঘরমুখো মানুষের উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। আগাম টিকিট বিক্রিতেও নেই প্রত্যাশিত সাড়া। লঞ্চগুলোর অন্তত ৭০ শতাংশ কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়নি। সব মিলিয়ে টার্মিনালে যেন ঈদের ব্যস্ততা এখনও ধরা দেয়নি। সদরঘাট থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী যায় বরিশাল রুটে। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে যাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। ফলে নৌপথে যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার বেশির ভাগ লঞ্চেই সেই চিরচেনা চিত্র অনুপস্থিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈরী আবহাওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হবে, যা চলবে ১০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু যাত্রী সেভাবে না থাকায় সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।
লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, ৩০ শতাংশ কেবিনের টিকিটও বিক্রি হয়নি। আগে এই সময় কেবিন পাওয়া যেত না। এবার লোকজন আসছেই না। পদ্মা সেতুর পর আমরা এখন ভাগ্যের ওপর নির্ভর করি। আবহাওয়া খারাপ, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভালো নয়। এ জন্য অনেকে গ্রামে যেতে চাচ্ছেন না।
পারাবত লঞ্চের মালিক মোহাম্মদ হাবিব বলেন, সাধারণত ঈদের আগের দু’দিন যাত্রীর চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। গার্মেন্ট ছুটি শুরু হলে শেষ মুহূর্তে কিছু যাত্রী বাড়তে পারে।