প্রস্তাবিত বাজেট: সুবিধা আমদানিকারকদের, বাধাগ্রস্ত হবে কসমেটিকস উৎপাদন-বিনিয়োগ
Published: 4th, June 2025 GMT
অন্তবর্তী সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার খাতে আমদানিকারদের সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন উৎপাদনকারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানিকৃত কসমেটিকস পণ্যের প্যাকেজিং শুল্ক মুক্ত হলেও দেশীয় উৎপাদনের কাচামাল হিসেবে প্যাকেজিং আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১২৮ শতাংশের মত। যা বৈষম্যমূলক। এমনকি সরাসরি কসমেটিকস আমদানির ক্ষেত্রে নানা কৌশল অবলম্বন করার হয়, তখন কিছুই করার থাকে না।
আমদানিকৃত পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু এতই কম যে তা বৈষম্যমূলক। কসমেটিকস পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুল্কায়েনের দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, আমদানি পর্যায়ে প্রকৃত ক্রয় মূল্য গোপন করে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্যে শুল্কায়নের ফলে আমদানিকৃত কালার কসমেটিকস পণ্য সামগ্রীর ল্যান্ডেড কষ্ট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কালার কসমেটিকস পণ্যের উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম হয়। যে কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কালার কসমেটিকস ও আমদানিকৃত কালার কসমেটিকস পণ্যের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অনুপস্থিত। তাই কালার কসমেটিকস পণ্য সামগ্রীর ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নেট ওয়েট এর পরিবর্তে গ্রস ওয়েট বিবেচনায় নিয়ে কাস্টমস শুল্কায়ন করা আবশ্যক বলে দাবি করেছেন তারা।
কালার কসমেটিকস পণ্য দেশে আমদানি পর্যায়ে শুল্কায়েনের ক্ষেত্রে যে নীতি প্রচলিত রয়েছে তা দেশীয় উৎপাদন ও শিল্প বিকাশে অন্যতম বাধা বলে মনে করছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) এর নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এএসবিএমইবি নেতৃবৃন্দ বলছেন, এ খাতে যথাযথ নীতি সহায়তা পেলে বিনিয়োগ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হবে।
অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৫-২০২৬ এ জারীকৃত কাস্টমস এস.
আন্তর্জাতিক বাজারে মোটামুটি গুনগতমান সম্পন্ন প্রতি পিস লিপস্টিকের প্রকৃত ক্রয় মূল্য ন্যূনতম ১ ডলার থেকে শুরু করে ১০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অথচ বাংলাদেশে যে কোন মানের লিপস্টিক কাস্টমস এস.আর.ও. নং ২২৬-আইন/২০২৫/৪৮ অনুসারে প্রতি কেজি (নেট ওয়েট) ২০ ডলারে শুল্কায়ন করা সম্ভব। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ৪০ ডলার করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারের নূন্যতম মূল্যের সাথে মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে স্থাপিত নতুন কালার কসমেটিকস শিল্প বিকাশের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে কালার কসমেটিকস পণ্য সামগ্রী আমদানি পর্যায়ে নূন্যতম শুল্কায়ন। যেহেতু ওই সকল পণ্যের শুল্কায়ন নেট ওয়েট বিবেচনায় নিয়ে করা হয় তাই পণ্যের ধারক বা মোড়ক এর মূল্য এবং ওজন শুল্কায়ন করার সময় বিবেচনা করা হয় না। অথচ যখন কোনো স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওই সকল পণ্যের ধারক বা কনটেইনার উপকরণ হিসেবে আমদানি করলে এইচএস কোড ৩৯২৩.১০.০০ অনুসারে ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি প্রদান করতে হয়। কাস্টমস শুল্কায়ন এ এই দ্বৈত নীতি দেশীয় শিল্প বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধক।
তারা বলেন, পণ্যের সঙ্গে একক ও অভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কসমেটিকস পণ্যের কনটেইনার শুল্কায়ন হয় এবং তা পণ্যের অংশ হিসেবেই ভোক্তার কাছে বিক্রি হয়। এসব পণ্য ধারক বা কনটেইনারের ওজনভিক্তিক মূল্য প্রধান আমদানি পণ্যের সঙ্গে যুক্ত করে মূল পণ্য শুল্কায়ন মূল্য নিরূপন করতে হবে।
এএসবিএমইবি’র সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, “বৈষম্যমূলক নীতির কারণেই মূলত দেশে এতদিন কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। সম্ভাবনাময় এই ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে অপরদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। তাছাড়া, দেশে উৎপাদন বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার অবচয় রোধ করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতির চাকা আরো জোরদার করা সম্ভব হবে।”
তিনি বলেন, “দেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কসমেটিকস পণ্য মধ্যপ্রাচ্য, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমদানির বিকল্প ও বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা জরুরি। বিদ্যমান বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত করলে এই খাতে বিনিয়োগ করতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।”
ঢাকা/হাসান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন য নতম ট য র ফ আমদ ন ক ত ক প রস ত ব ত ক স টমস বলছ ন সরক র দশম ক উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সচিবালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা এ ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে কর্মচারীরা সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিল নিয়ে তারা সচিবালয় চত্বর প্রদক্ষিণ করে ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদাম তলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
আরো পড়ুন:
সচিবালয়ে আন্দোলন
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা, ১ জুন থেকে কর্মবিরতি থাকছে না
বুধবার সচিবালয় চলবে স্বাভাবিক নিয়মে
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “গতকাল সোমবার দেওয়া বাজেটে মহার্ঘ ভাতার কোনো ঘোষণা নেই। সেটা না করে উল্টো আমাদের ওপর কালো আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনারা যদি মনে করেন আন্দোলন থেমে গেছে, বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। আমরা এমন কর্মসূচি দেব আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।”
তিনি বলেন, “অধ্যাদেশ বাতিল বা আমাদের সঙ্গে যদি কোনো আপস না করা হয়, আমরা শুধু কর্মবিরতি না অবস্থান কর্মসূচিও দিতে পারি। আমরা সারাদেশে এ কর্মসূচি ছড়িয়ে দেব। আমরা সব সরকারি সেক্টর স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখি। সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সহযোগিতার জন্য এমন কর্মসূচি দিচ্ছি না। আপনারা আমাদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন।”
“আমরা আগামী ১৫ জুনের মধ্যে যদি কোনো ভালো সংবাদ না পাই তা হলে ওইদিন বসে কঠোর কর্মসূচি দেব। আমরা বলতে বাধ্য হব- আপস নয়, সংগ্রাম”, যোগ করেন ফোরামের এই কো চেয়ারম্যান।
ঐক্য ফোরামে কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, “বুধবার (৪ জুন) যেহেতু ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস, তাই আমাদের কোনো কর্মসূচি থাকবে না। আগামী ১৬ জুন আপনারা সবাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। ওই দিন সকাল ১১টায় কেউ যাতে কর্মস্থলে না থাকেন। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে সমস্বরে বলব- অবৈধ কালো আইন, মানি না মানবো না।”
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের মহাসচিব মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, আপনারা মনে কইরেন না কর্মচারীরা বোকা। আপনাদের কাছে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা আর পূরণ হলো না। আপনারা চাচ্ছেন, আপনাদের সঙ্গে সংঘর্ষ। ইনশাআল্লাহ যদি বেঁচে থাকি, ঈদের পরে সংঘর্ষ করেও যদি হয়, তারপরও কালো আইন বাতিল করব।”
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে কর্মচারীরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে; এমন বিধান রেখে গত ২৫ মে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মাসুদ