রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাজেট দিয়েছে সরকার: বিএনপি
Published: 4th, June 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে গতানুগতিক বাজেট প্রক্রিয়া সংস্কার করারও দাবি জানিয়েছে দলটি।
বুধবার (৪ জুন) বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা জানান। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন যেহেতু সংসদ বা গণতান্ত্রিক কোন সরকার নাই- আমরা আশা করে ছিলাম অন্তবর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে এবং সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট ঘোষণা করবে। কিন্তু সরকার তা করেনি। বাজেট ঘোষণাটা পুরোপুরি গতানুগতিক।
আরো পড়ুন:
খুলনার রাজনীতিতে লবীর প্রত্যাবর্তন, ক্ষুব্ধ তৃণমূল
শপথের ব্যবস্থা না করলে নিজেই শপথ নিয়ে চেয়ার দখল করব: ইশরাক
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংলাপ হলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ব্যয় বরাদ্দে বাস্তবসম্মত পুনর্বিন্যাস হত। নতুন চিন্তার প্রতিফলন ঘটত। স্বৈরাচারী সরকারের সীমাহীন জন-বান্ধবহীন নীতি-কাঠামো উদ্ভূত দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতিজনিত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয় নির্বাহের সংকট থেকে মুক্তির দিক নির্দেশনা থাকত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি প্রায় ডবল ডিজিট, তা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫% করার কথা বলা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত মনে হয়না। দারিদ্র বৃদ্ধির হারে লাগাম টানা যেত। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ২৭ লাখের বেশি মানুষ আগের চেয়ে বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ নারী। মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে থাকায় প্রকৃত আয় কমেছে।
বাজেট প্রতিক্রিয়া বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বরাদ্দ কমানো উদ্বেগজনক। কৃষিতে দেয়া হয়েছে বাজেটের মাত্র ৫ দশমিক ৯%, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৩% এবং শিক্ষায় ১৪%। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কলেজ ও স্কুলগুলোকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা যেত। আমাদের সময় ইনশাআল্লাহ শিক্ষার এ সকল ক্ষেত্রকে পূর্ণাঙ্গ কর মওকুফের আওতায় আনা হবে। এতে তরুণ সমাজের শিক্ষা-আকাঙক্ষা পূরণ হত। সামাজিক সমতা ও মেধাভিত্তিক সমাজ নির্মাণে সহায়ক হত।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতাগুলোর সমাধানে সুস্পষ্ট রূপরেখার প্রয়োজন ছিল। প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল- বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথ-নকশা উপস্থাপন। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্প কারখানা স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার দরকার ছিল। জরুরি ছিল ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি বিভিন্ন খাতে সহায়তার মাধ্যমে আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির। বিশাল সুদের হারের সাথে অতিরিক্ত কর ও শুল্ক শিল্পে বড় চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, উৎপাদনশীল খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কর্মসংস্থানও কমতে পারে। মধ্যম ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির ওপর আর্থিক চাপ বাড়লে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। দারিদ্র্য বিমোচনের অগ্রগতিও থমকে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতাও কাটেনি। পুজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ অবহেলিতই থেকে গেলেন। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নাজুক। খেলাপি ঋণ আদায়, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং করজাল সম্প্রসারণের মতো পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আহরণে নতুন ভিত্তি তৈরি হত। সরকার ব্যাংক খাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ঋণ করে ঋণ শোধ দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কর ফাঁকি প্রদানকারীদের পুরস্কৃত করছে। নিয়মিত করদাতাদের প্রতি এটি অবিচার। কর ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমতে পারে। আয়কর স্লাবে কর হারের পরিবর্তন অধিকাংশ করদাতাদের উপর আরও অভিঘাত ফেলবে। কর ফাঁকি ও জালিয়াতি রোধ এবং কর জাল সম্প্রসারণ না করে ভ্যাট বৃদ্ধির মাধ্যমে বরাবররের মতো করের বোঝা সাধারণ জনগণের কাঁধে চাপানো হয়েছে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জীবনযাত্রার মান কমছে। অপ্রয়োজনীয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অদক্ষ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ বা সংস্কারের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এসব প্রকল্পের অর্থনৈতিক ফলাফল পর্যালোচনা করা জরুরি। প্রয়োজনে রিভিউ বা রিনেগোসিয়েট করা যেতে পারে। এতে ব্যয় কমিয়ে জনকল্যাণে বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হবে।
বিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়ায়আরো উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মো.
ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র জন ত ক আর থ ক সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
কালুরঘাট সেতুতে একাধিক যানবাহনকে ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দিয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে। এ ঘটনায় শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ছয়জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেল সেতুর ওপর ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ওসি শহীদুল ইসলাম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ট্রেন চালক সিগনাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে সেতুতে উঠে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ায় সেতু ধসে পড়ে লাইনচ্যুত ট্রেন, নিহত ৭
ময়মনসিংহে ধসে পড়েছে গহুর মোল্লার ব্রিজ, যোগাযোগ বন্ধ
নিহতরা হলেন- সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক তুষার (৩২) ও যাত্রী মেহেরিমা নুর আয়শা (২)। অপর নিহতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে আসে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালুরঘাট সেতুর অদূরে পৌঁছায় ট্রেনটি। এ সময় রেলের সিগন্যালম্যান সব যানবাহন থামিয়ে দেন। তবে, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হওয়ায় কয়েকটি যানবাহন সেতুর ওপর আটকে থাকে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সেতুতে উঠার আগেই ট্রেন থামাতে লাইনম্যানসহ অনেকেই সংকেত দেন। ট্রেন চালক সংকেত অমান্য করেন।
ট্রেনটি সেতুতে উঠে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও কয়েকটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশার চালক তুষার ও যাত্রী মেহেরিমা নুর আয়শাসহ তিনজন মারা যান। অন্তত ৬ জন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জালানিহাট স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড মো. মাহবুব বলেন, “আমি সিগন্যাল অমান্য হওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পেরে নিজেই সেতুর মুখে গিয়ে ট্রেন থামাতে লাল পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দেই। তবুও ট্রেন চালক সেটি উপেক্ষা করেন।”
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম বলেন, “রাত পৌনে ১১টার দিকে আমরা খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করি।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, “কালুরঘাট সেতুতে একটি ট্রেন বিভিন্ন যানবাহনকে ধাক্কা দেয়। পাঁচজনকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।”
রেলওয়ে জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, “পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছেড়ে আসে। রাত ১০টা ১০ মিনিটে এটি কালুরঘাট রেলসেতুর অদূরে পৌঁছায়। ওই সময় সেতুর ওপরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেলে যানজট তৈরি হয়। আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দেই। গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সিগন্যাল দেন। ট্রেন চালক সিগন্যাল মানেননি।”
তিনি আরো বলেন, ‘কালুরঘাট ব্রিজটি ডেড স্টেপেজ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম। চালক তা মানেননি।”
শত বছরের পুরনো কালুরঘাট রেল সেতুটি সংকীর্ণ হওয়ায় উভয় দিক থেকে একইসঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ট্রেন আসার পূর্বে উভয় দিক থেকে যানবাহন পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রেন না আসলেও স্বাভাবিক সময়ে একদিক বন্ধ রেখে অপর একদিক থেকে যানবাহন চলাচল করাতে হয়।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ