এক দিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। নাড়ির টানে যাত্রাপথে সব ঝক্কি পিছে ফেলে লাখ লাখ মানুষ ইট-পাথরের শহর ছেড়ে শিকড়ে ফিরতে শুরু করেছে। সড়কপথে নিরাপদে বাড়ি পৌছে দিতে ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে দিন-রাত কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে এখন পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌভভাবে কাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ যেন স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে; তারা সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

আরো পড়ুন:

রাজধানীর অলিগলিতে পশুখাদ্য ও কোরবানির সরঞ্জামের পসরা

বিআরটিসি বাসেও বাড়তি ভাড়া, ঈদের যাত্রীরা অখুশি

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কের সয়দাবাদ, কড্ডার মোড়, নলকা, পাঁচিলা ও হাটিকুমরুল গোল-চত্বর ঘুরে দেখা যায়, সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে টহল জোরদার রয়েছে।

সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের যৌথ টহল মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এতে স্বস্তিদায়ক পরিবেশে এবারের ঈদযাত্রায় কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে মানুষ।

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা সেতু সংযোগ মহাসড়ক। এই সড়কে প্রতিদিন উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার  ১৮-২০ হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। ঈদের সময় এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে এসময় যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়তো মানুষ। কিন্তু ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেন ও যমুনা রেল সেতু চালু হওয়ায় চিরচেনা এই যানজট দূর হয়েছে।

এর সঙ্গে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত ৩ জুন বিকালে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের পাবনাগামী লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার চাপ অনেকটা কমে এসেছে।

ঢাকা থেকে পাবনাগামী সড়কের বাসচালক আশরাফ আলী বলেন, “এবার ঈদের ছুটি বেশি; সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন ছাড়াও সেনাবাহিনীর তৎপরতা বেশ বেড়েছে। এমন তৎপরতার কারণে আমরা রাতে নির্ভয়ে গাড়ি চালাতে পারছি। সেই সাথে উত্তরের পথে গাড়ির চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলছে।”

রাজশাহীগামী বাসের যাত্রী আব্দুল আলিম বলেন, “সকাল ৭টার দিকে মহাখালী থেকে রওনা হয়েছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টা পার হলেও চৌরাস্তা পার হতে পারিনি। যানজটে বসে থেকে পিঠে, কোমরে ব্যথা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় নলকা এলাকায় এসেছি। সেতুর পশ্চিমপাড়ে কোনো যানজট নেই।”

ট্রাক-চালক সুফিয়ান শেখ বলেন, “গতকাল রাত ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে মাল নিয়ে রওনা হয়েছিলাম। ভোরেই ঢাকায় ঢুকে পড়ছি, কিন্তু গাজীপুর পার হতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। এত জ্যাম আগে দেখি নাই। তবে, ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে সড়কে স্বাভাবিক গতি নেই।”

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি গাজীপুরে চাকরি করি, বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে রওনা দিয়েছি। কিন্তু গাজীপুরের জ্যামে পড়েই মনে হয়েছিল কখন বাড়িতে যাবো; এ নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিছু কিছু গাড়ি এক জায়গায় দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসের যাত্রীদের অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটেই সামনে এগোতেও দেখা গেছে।”

হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, “এবার ঈদে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও দুর্ভোগের কোনো শঙ্কা নেই। যানজট নিরসনে ৬ শতাধিক জেলা পুলিশ, ১০০ হাইওয়ে ও অর্ধশত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।”

তিনি আরো বলেন, “যমুনা সেতুর পূর্ব পাড়ে যানজটের কারণে পশ্চিম পাড়ে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে মহাসড়কে সকাল ১০টা থেকে যান চলাচলে একটু ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে, যানজটনের কোনো শঙ্কা নেই।”

যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে মোট ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। যার চারটি বুথ শুধু মোটরসাইকেলের জন্য স্থাপন করা হয়েছে। পরিবার ও পরিজন নিয়ে কোনো যানজট ছাড়াই এবারও উত্তরের মানুষ স্বাস্তিতে বাড়ি ফিরছে।

হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়ায় এবার ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। যানবাহনের চাপ থাকলেও কোনো যানজটের আশঙ্কা নেই। স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছে মানুষ।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন বলেন, ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল থেকে শিকড়ে ফিরছে মানুষ। এতে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে, কোথাও যানজট হওয়ার শঙ্কা নেই। তাছাড়া যানজট রোধে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেল টিম দায়িত্ব পালন করছে। স্বস্তিদায়ক পরিবেশে শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ ঈদয ত র য নজট র স বস ত হ ইওয় সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ