ঈদযাত্রা: উত্তরে গাড়ির চাপ, নেই যানজট, স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে মানুষ
Published: 5th, June 2025 GMT
এক দিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। নাড়ির টানে যাত্রাপথে সব ঝক্কি পিছে ফেলে লাখ লাখ মানুষ ইট-পাথরের শহর ছেড়ে শিকড়ে ফিরতে শুরু করেছে। সড়কপথে নিরাপদে বাড়ি পৌছে দিতে ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে দিন-রাত কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
যমুনা সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে এখন পর্যন্ত মহাসড়কের কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌভভাবে কাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন, কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই মানুষ যেন স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে; তারা সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
আরো পড়ুন:
রাজধানীর অলিগলিতে পশুখাদ্য ও কোরবানির সরঞ্জামের পসরা
বিআরটিসি বাসেও বাড়তি ভাড়া, ঈদের যাত্রীরা অখুশি
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত যমুনা সেতুর সংযোগ সড়কের সয়দাবাদ, কড্ডার মোড়, নলকা, পাঁচিলা ও হাটিকুমরুল গোল-চত্বর ঘুরে দেখা যায়, সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে টহল জোরদার রয়েছে।
সেনাবাহিনী ও র্যাবের যৌথ টহল মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এতে স্বস্তিদায়ক পরিবেশে এবারের ঈদযাত্রায় কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে মানুষ।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা সেতু সংযোগ মহাসড়ক। এই সড়কে প্রতিদিন উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের ২২ জেলার ১৮-২০ হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। ঈদের সময় এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে এসময় যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়তো মানুষ। কিন্তু ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেন ও যমুনা রেল সেতু চালু হওয়ায় চিরচেনা এই যানজট দূর হয়েছে।
এর সঙ্গে যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত ৩ জুন বিকালে হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জের পাবনাগামী লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকার চাপ অনেকটা কমে এসেছে।
ঢাকা থেকে পাবনাগামী সড়কের বাসচালক আশরাফ আলী বলেন, “এবার ঈদের ছুটি বেশি; সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন ছাড়াও সেনাবাহিনীর তৎপরতা বেশ বেড়েছে। এমন তৎপরতার কারণে আমরা রাতে নির্ভয়ে গাড়ি চালাতে পারছি। সেই সাথে উত্তরের পথে গাড়ির চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলছে।”
রাজশাহীগামী বাসের যাত্রী আব্দুল আলিম বলেন, “সকাল ৭টার দিকে মহাখালী থেকে রওনা হয়েছিলাম। সকাল সাড়ে ৯টা পার হলেও চৌরাস্তা পার হতে পারিনি। যানজটে বসে থেকে পিঠে, কোমরে ব্যথা হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় নলকা এলাকায় এসেছি। সেতুর পশ্চিমপাড়ে কোনো যানজট নেই।”
ট্রাক-চালক সুফিয়ান শেখ বলেন, “গতকাল রাত ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে মাল নিয়ে রওনা হয়েছিলাম। ভোরেই ঢাকায় ঢুকে পড়ছি, কিন্তু গাজীপুর পার হতে ৩ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। এত জ্যাম আগে দেখি নাই। তবে, ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে সড়কে স্বাভাবিক গতি নেই।”
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি গাজীপুরে চাকরি করি, বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে রওনা দিয়েছি। কিন্তু গাজীপুরের জ্যামে পড়েই মনে হয়েছিল কখন বাড়িতে যাবো; এ নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিছু কিছু গাড়ি এক জায়গায় দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাসের যাত্রীদের অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটেই সামনে এগোতেও দেখা গেছে।”
হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বলেন, “এবার ঈদে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও দুর্ভোগের কোনো শঙ্কা নেই। যানজট নিরসনে ৬ শতাধিক জেলা পুলিশ, ১০০ হাইওয়ে ও অর্ধশত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।”
তিনি আরো বলেন, “যমুনা সেতুর পূর্ব পাড়ে যানজটের কারণে পশ্চিম পাড়ে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে মহাসড়কে সকাল ১০টা থেকে যান চলাচলে একটু ধীরগতি দেখা দিয়েছে। তবে, যানজটনের কোনো শঙ্কা নেই।”
যমুনা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেতুর উভয় অংশে ৯টি করে মোট ১৮টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। যার চারটি বুথ শুধু মোটরসাইকেলের জন্য স্থাপন করা হয়েছে। পরিবার ও পরিজন নিয়ে কোনো যানজট ছাড়াই এবারও উত্তরের মানুষ স্বাস্তিতে বাড়ি ফিরছে।
হাটিকুমরুল ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন ইন্টারচেঞ্জের সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়ায় এবার ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক হচ্ছে। যানবাহনের চাপ থাকলেও কোনো যানজটের আশঙ্কা নেই। স্বস্তি নিয়েই ঘরে ফিরছে মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক হোসেন বলেন, ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে কর্মস্থল থেকে শিকড়ে ফিরছে মানুষ। এতে যমুনা সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে, কোথাও যানজট হওয়ার শঙ্কা নেই। তাছাড়া যানজট রোধে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ও মোটরসাইকেল টিম দায়িত্ব পালন করছে। স্বস্তিদায়ক পরিবেশে শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ ঈদয ত র য নজট র স বস ত হ ইওয় সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ায় মহিলা দলের নেত্রীকে মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে
চাহিদামতো ভিজিএফের স্লিপ না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়েছিলেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মালেকা বেগম। ওই ঘটনার জেরে মারধরের শিকার হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ভিজিএফের চাল নিতে আসা নারীদের হামলায় মালেকা বেগম আহত হয়েছেন।
এদিকে মালেকা বেগমের ওই অভিযোগের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ করেছেন এলাকার লোকজন। বিকেল চারটা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়।
গত মঙ্গলবার সকালে চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদে মালেকা বেগমকে মারধর করা হয়। পরে তিনি তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তিনি ইউপির সাবেক সদস্য। ওই ঘটনা সম্পর্কে মালেকা বেগম বলেন, ‘গত সোমবার ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিনের কাছে ঈদে বরাদ্দ ভিজিএফের ১০০টি স্লিপ চেয়েছিলাম। তিনি ৪০ জনের তালিকা দিতে বলেছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। তখন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম হাওলাদারের ভাই কালিমুল্লাহ ও ইউপির দফাদার মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল নারী তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। তাঁরা তাঁর ছবি ফেসবুকেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে বিএনপি নেতা ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ‘ওই দিন (মঙ্গলবার) নারীদের মধ্যে চাল বিতরণের কথা ছিল। তাঁরা এসে পরিষদে তালা মারা দেখেন এবং মালেকা বেগমকে তালা খুলে দিতে বলেন। এ সময় কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে মালেকা বেগম হতদরিদ্র নারীদের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেন। তখন তাঁরা তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় আমার পরিবারের বা বিএনপির কেউ জড়িত নন।’
চাঁচড়া ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিন বলেন, ‘তাঁদের ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৭৪ জন হতদরিদ্রের নামে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল এসেছে। মহিলা সভাপতি (মালেক বেগম) একাই ১০০টি স্লিপ দাবি করেন। তাঁকে বলেছিলাম, আইডি কার্ড জমা দেন, চেষ্টা করব। ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) সাড়ে ১০টার সময় পরিষদে গিয়ে জানতে পেরেছি তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত খান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’