শেষ পর্যন্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজউক, তাদের পরিদর্শক কাজী আমীর খশরুর মালিকানায় ৩৬টি ফ্ল্যাটের থাকার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠিত হয়েছে। গত ১৮ মে ‘ঢাকায় রাজউকের এক কর্মচারীর ৩৬ ফ্ল্যাট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজউকের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী আমীর খশরু ১ হাজার ৪৮০ টাকার বেতন স্কেলে চাকরি শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তাঁর বেতন ৫০ হাজার টাকায় পৌঁছালেও সম্পত্তি পৌঁছেছে শতকোটি টাকায়। প্রতিবেদক মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছেন, নামে-বেনামে তিনি এসব ফ্ল্যাট নিজের নামে করে নিয়েছেন। বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্প, পশ্চিম শেওড়াপাড়া, উত্তরা, পূর্বাচলে তাঁর এসব ফ্ল্যাটের অবস্থান। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা উন্নয়নের বুলিতে প্রায় ডুবু ডুবু ছিলাম। চারদিকে কেবল উন্নয়নের ছড়াছড়ি। এই ঘটনা প্রমাণ করে, আদতে উন্নয়নটা কার হয়েছিল।

সমকালের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আমীর খশরু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রভাব তৈরি করেছেন। ১৯৯৩ সালে রাজউকে যোগদান করে বিএনপিপন্থি শ্রমিক ইউনিয়নে সক্রিয় ছিলেন। পরে সভাপতির পদও বাগিয়ে নেন। ওই সময় রাজউকে ছিল তাঁর একচেটিয়া প্রভাব। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যানকে চাপ দিয়ে ইন্সপেক্টর পদে বসার অভিযোগই উঠেছে।

আওয়ামী লীগ আমলে আমার পারিবারিক অভিজ্ঞতা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। আমার শ্বশুর ও চাচিশাশুড়ি দু’জনে পূর্বাচলে দুটি প্লট কিনেছিলেন। পরে সরকার নামমাত্র টাকা দিয়ে প্লট দুটি নিয়ে নেয় এবং সেখানে ফ্ল্যাট গড়ে তোলে। সরকারের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর রাজউকের এক কর্মকর্তা ফোন দিয়ে আমার শ্বশুরকে ডেকে নেন এবং ৫ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে ফ্ল্যাটের বন্দোবস্ত হবে বলে জানায়। এতে আমার শ্বশুর সরাসরি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন– তিনি ঘুষের বিনিময়ে এই ফ্ল্যাট নেবেন না। সম্ভব হলে সঠিক নিয়ম মেনে নিজের অধিকার বুঝে নেবেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো। রাজউকের চেয়ারম্যানকে ফোনে সংক্ষেপে বিষয়টি জানালে তিনি কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বলেন। 

আমার পরিবার কেবল এমন ঘটনার শিকার হয়নি। রাজউকও একমাত্র সংস্থা নয়, যেখানে এমন অনিয়ম রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের আনাচে-কানাচে দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রয়েছে। আরও বড় বড় খশরু আমাদের চোখের আড়ালে বিভিন্ন পদে বসে আছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বহু জায়গায় অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
গত পাঁচ দশক আমরা রাষ্ট্রকাঠামো এমনভাবে দাঁড় করিয়েছি, যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দাবি সংস্কার নিশ্চিত করা পাহাড়সম পাথর নড়ানোর কাজে পরিণত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এসব দাবি পূরণ করা সহজসাধ্য নয়, তবে অসম্ভবও নয়। 

মন্দের ভালো, রাজউক অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্তে কমিটি গঠন করেছে। আশা করি, প্রদ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কারের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা প্রতিবছর কিংবা প্রতি দশকে আসে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই উচিত এই সংস্কারের সুযোগ গ্রহণ করা। জনগণমাত্রই অধিকতর ভালো গ্রহণ করতে উন্মুখ। 

ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত র জউক র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যানসারে আক্রান্ত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো

ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর শরীরে ত্বকের ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। বমি ও নিম্ন রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি।

আরো পড়ুন:

৬ বছর পর ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ প্লে-অফে বলিভিয়া

মারাকানায় ব্রাজিলের বড় জয়

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার একদিন পর তার ত্বকের ক্যানসারের প্রাথমিক ধাপ ধরা পড়ে।

বুধবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তার ত্বকের পরীক্ষা করে ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ শনাক্ত হয়েছে।এটি ত্বকের মাঝারি মাত্রার ক্যানসার, যা সবচেয়ে হালকা ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ধাপের মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে।

চিকিৎসকরা বলেছেন যে, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ৭০ বছর বয়সী বলসোনারো গত মঙ্গলবার বমি এবং নিম্ন রক্তচাপের কারণে ব্রাসিলিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে ক্যানসারের বিষয়টি গত রবিবারের পরীক্ষায় ধরা পড়ে, যখন তার বুক ও হাতে থাকা ক্ষতস্থানের টিস্যু অপসারণ করা হয়েছিল।

তার অনকোলজিস্ট ক্লাউদিও বিয়ারোলিনি জানিয়েছেন, বলসোনারোর ক্যানসার ‘ইন সিটু’ ধাপে রয়েছে, অর্থাৎ অস্বাভাবিক কোষগুলো এখনো ছড়িয়ে পড়েনি। অস্ত্রোপচারই এর চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট হবে। বর্তমানে বলসোনারোর শরীরে সেলাই ও ব্যান্ডেজ রয়েছে, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় ফিরেছেন, যেখানে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন।

বলসোনারো ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই গৃহবন্দি ছিলেন। সম্প্রতি তাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি আলেকজান্দ্রে দে মোরেসের নির্দেশ অনুযায়ী, গৃহবন্দিত্বে থাকলেও চিকিৎসা জরুরি হলে তিনি বাসার বাইরে যেতে পারেন। তবে প্রতিবারই তার আইনজীবীদের আদালতে চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।

বলসোনারোর সমর্থকরা তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতিকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে তিনি কারাগারে না গিয়ে বাড়িতেই সাজা ভোগ করতে পারেন। তাদের দাবি, কারাগারে নিলে তার শারীরিক জটিলতা বা দুর্ব্যবহারের ঝুঁকি বাড়বে।

তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সিনেটর ফ্লাভিও বলসোনারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, “আমার বাবা আগেও কঠিন লড়াই লড়ে জয়ী হয়েছেন। এবারও ভিন্ন কিছু হবে না।”

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ