এক দিনে ঘুরে আসুন ঢাকার অদূরের এই দুই জমিদারবাড়ি
Published: 7th, June 2025 GMT
বৃষ্টি নামতে পারে এই আশঙ্কার মধ্যেই ঢাকা থেকে গাড়ি ছুটতে শুরু করল। শশীর অনুরোধে আসিফ ভাই গান ধরলেন, ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে…’।
আমি বসেছিলাম মাইক্রোবাসের সামনে চালকের পাশের সিটে। গানটা শুনতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা মুখ। মুহূর্তেই সব উচ্ছ্বাস যেন হারিয়ে গেল। গান থামলে কিংশুক ভাই পেছনের সিট থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, চুপচাপ কেন?’
তারপর গল্প, স্মৃতিচারণা, হাসি-মজা করতে করতে পৌঁছলাম তেওতা জমিদারবাড়ি।
জনশ্রুতি আছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এই জমিদারবাড়িতে বসেই ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ’ গানটি লিখেছিলেন নজরুল। শিবালয় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থাপন করা তথ্য বোর্ডেও নজরুলের সঙ্গে জমিদারবাড়ির সম্পর্কের বিষয়টি চোখে পড়ল। পঞ্চানন সেন নামের একজন জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। মূল ভবনটি লালদিঘি ভবন নামে পরিচিত।
তেওতা জমিদারবাড়ি.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সেকালের ‘বকরি ঈদ’: সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে প্রতিধ্বনি
‘আসিয়াছে ফের দুনিয়ার বুকে
খুসির বকরি ঈদ
সারাটি রজনী কাসেমের আজ
আসেনি নয়নে নিদ।’
কবিতার পঙ্ক্তিতে (এম. করিম–এর ‘কার ঈদ’) এমনিভাবে প্রকাশ পেয়েছে বকরি ঈদের জন্য বাঙালি মুসলমানের উন্মুখ প্রতীক্ষা। ‘ঈদুজ্জোহা’, ‘ঈদ-উল-বকর’ বা ‘ঈদ-উল-আযহা’ তথা কোরবানির ঈদ সামাজিক ইতিহাসের পরতে পরতে ‘বকরি ঈদ’ নামে অভিহিত। ‘বকরিদ’ বা ‘বকর ঈদ’ নামেও পরিচিত এই ঈদ। পত্রিকা, সাময়িকী ও সরকারি নথিপত্রে ‘ঈদ-উল-আদহা’ নামেও আখ্যায়িত হয়েছে কোরবানির ঈদ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আরব বণিকেরা যখন এ দেশে আসতে শুরু করলেন তখন ঈদুল আজহার সময় তাঁরা বকরি (ছাগল) কোরবানি দিতেন বলে ‘ঈদুল আজহা’, ‘বকরি ঈদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত পায়।
জেমস টেলরের বিবরণ অনুযায়ী, ১৮৩৮ সালে ঢাকা শহরের বণিকদের মধ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন; মুসলমান ও খ্রিষ্টান ছিলেন মাত্র চার-পাঁচজন করে। সে সময় আজকের মতো প্রতিটি ঘরে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য মুসলমান সমাজে ছিল না। অধ্যাপক আবদুল গফুর তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কালের কথা’য় লিখেছেন, ‘কোরবানির ঈদ বা অন্য কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া সাধারণত গরু বা বকরি জবাই করা হতো না। হাট–বাজারে গরু বা ছাগলের মাংসও এভাবে বিক্রি হতো না তখন। বাড়িতে মেহমান এলে সাধারণত মুরগী জবাই করেই তাদের আপ্যায়ন করা হতো।’
হিন্দু জমিদারপ্রধান এই অঞ্চলে গরু কোরবানি নিয়ে একটি বৈরী মনোভাব বিদ্যমান ছিল। ফলে মুসলমানদের প্রায়ই ছাগল (বকরি) কোরবানির দিকেই ঝুঁকতে হতো। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব তখন ততটা গুরুত্ব পেত না। তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১৮৯০ সালের ঢাকা প্রকাশ-এ ছাপা সরকারি ছুটির তালিকায়—যেখানে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান—এই তিন সম্প্রদায়ের জন্য ঘোষিত মোট ১৮ দিনের ছুটির মধ্যে মুসলমানদের ভাগে এসেছিল মাত্র ৩ দিন: মহররম উপলক্ষে দুই দিন এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক দিন।
সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশ পত্রিকা, ০২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯০