‘আন্দোলনে গিয়া পুলিশের গুলিতে মইরা গেল, এহন আমাগো ঈদ-চান নাই’
Published: 7th, June 2025 GMT
‘প্রতিবার ঈদ আইলে আমার ছেলেডা ঢাকা থেইকা বাড়ি আসত। আমাগো সবার জন্য কাপড়চোপড় আনত। মায়ের হাতের সেমাই-খিচুড়ি খাইতে খুব পছন্দ ওর। আন্দোলনে গিয়া পুলিশের গুলিতে মইরা গেল সে। তাঁর লাশটা এহনো খুঁইজা পাইলাম না। হুনছি, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন অইছে। তাঁর মরণের পর আমাগো সব শেষ। ছেলে নাই, এহন আমাগো ঈদ-চাঁনও নাই।’
কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সবুজ ব্যাপারী। তিনি গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত পারভেজের (২৩) বাবা। গত জুলাইয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন পারভেজ (২৩)। আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এসব কষ্ট ও হতাশার কথা জানান সবুজ ব্যাপারী।
পারভেজের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পূর্ব ফতেপুর ইউনিয়নের বারহাতিয়া গ্রামে। তিনি রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি আসবাবের দোকানে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। কাজের সুবাদে সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পারভেজ বড়। সবুজ ব্যাপারী আগে লঞ্চে শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন গ্রামে ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
গত বছরের ১৯ জুলাই দুপুরে পারভেজের এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যেরা জানতে পারেন যে তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেও তাঁর মরদেহটি পাননি। সেখান থেকে জানানো হয়, পারভেজের লাশটি শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর কবর এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আক্ষেপ করে সবুজ ব্যাপারী জানান, ছেলের লাশটিও দেখতে পারলেন না। তাঁর আয়েই সংসারের পাশাপাশি ছোট দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলত। এখন সব শেষ।
ঈদ এলেও পারভেজের পরিবারের কারও মনে কোনো আনন্দ নেই বলে জানান সবুজ ব্যাপারী। তাঁর ভাষ্য, ঈদের সময় বাড়িতে ফিরে বাজার পারভেজই করতেন। ঈদের দিন সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করত। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সবকিছুই স্মৃতি। ছেলেকে ছাড়া তাঁদের ঈদের আনন্দই মাটি। ছেলে বেঁচে নেই, ঈদ-চান দিয়ে কী হবে। ছেলেকে ছাড়া ঈদের সেমাই মুখে তুলবেন কীভাবে?
পারভেজের কলেজপড়ুয়া বোন ঝুমুর আক্তার বলেন, ‘ভাই ছাড়া ঈদ কল্পনাও করতে পারি না। আগে ঈদের সব আনন্দ ছিল ভাইকে কেন্দ্র করেই। এখন ভাই নাই, আমাগো ঈদও নাই। সব ফিকে, সব মাটি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব জ ব য প র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আন্দোলনে গিয়া পুলিশের গুলিতে মইরা গেল, এহন আমাগো ঈদ-চান নাই’
‘প্রতিবার ঈদ আইলে আমার ছেলেডা ঢাকা থেইকা বাড়ি আসত। আমাগো সবার জন্য কাপড়চোপড় আনত। মায়ের হাতের সেমাই-খিচুড়ি খাইতে খুব পছন্দ ওর। আন্দোলনে গিয়া পুলিশের গুলিতে মইরা গেল সে। তাঁর লাশটা এহনো খুঁইজা পাইলাম না। হুনছি, বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন অইছে। তাঁর মরণের পর আমাগো সব শেষ। ছেলে নাই, এহন আমাগো ঈদ-চাঁনও নাই।’
কান্নাভেজা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সবুজ ব্যাপারী। তিনি গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত পারভেজের (২৩) বাবা। গত জুলাইয়ে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন পারভেজ (২৩)। আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এসব কষ্ট ও হতাশার কথা জানান সবুজ ব্যাপারী।
পারভেজের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার পূর্ব ফতেপুর ইউনিয়নের বারহাতিয়া গ্রামে। তিনি রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় একটি আসবাবের দোকানে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। কাজের সুবাদে সেখানে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে পারভেজ বড়। সবুজ ব্যাপারী আগে লঞ্চে শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন গ্রামে ছোট্ট চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
গত বছরের ১৯ জুলাই দুপুরে পারভেজের এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যেরা জানতে পারেন যে তিনি পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেও তাঁর মরদেহটি পাননি। সেখান থেকে জানানো হয়, পারভেজের লাশটি শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর কবর এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আক্ষেপ করে সবুজ ব্যাপারী জানান, ছেলের লাশটিও দেখতে পারলেন না। তাঁর আয়েই সংসারের পাশাপাশি ছোট দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলত। এখন সব শেষ।
ঈদ এলেও পারভেজের পরিবারের কারও মনে কোনো আনন্দ নেই বলে জানান সবুজ ব্যাপারী। তাঁর ভাষ্য, ঈদের সময় বাড়িতে ফিরে বাজার পারভেজই করতেন। ঈদের দিন সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করত। তাঁর মৃত্যুর পর এখন সবকিছুই স্মৃতি। ছেলেকে ছাড়া তাঁদের ঈদের আনন্দই মাটি। ছেলে বেঁচে নেই, ঈদ-চান দিয়ে কী হবে। ছেলেকে ছাড়া ঈদের সেমাই মুখে তুলবেন কীভাবে?
পারভেজের কলেজপড়ুয়া বোন ঝুমুর আক্তার বলেন, ‘ভাই ছাড়া ঈদ কল্পনাও করতে পারি না। আগে ঈদের সব আনন্দ ছিল ভাইকে কেন্দ্র করেই। এখন ভাই নাই, আমাগো ঈদও নাই। সব ফিকে, সব মাটি।’