সেকালের ‘বকরি ঈদ’: সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে প্রতিধ্বনি
Published: 7th, June 2025 GMT
‘আসিয়াছে ফের দুনিয়ার বুকে
খুসির বকরি ঈদ
সারাটি রজনী কাসেমের আজ
আসেনি নয়নে নিদ।’
কবিতার পঙ্ক্তিতে (এম. করিম–এর ‘কার ঈদ’) এমনিভাবে প্রকাশ পেয়েছে বকরি ঈদের জন্য বাঙালি মুসলমানের উন্মুখ প্রতীক্ষা। ‘ঈদুজ্জোহা’, ‘ঈদ-উল-বকর’ বা ‘ঈদ-উল-আযহা’ তথা কোরবানির ঈদ সামাজিক ইতিহাসের পরতে পরতে ‘বকরি ঈদ’ নামে অভিহিত। ‘বকরিদ’ বা ‘বকর ঈদ’ নামেও পরিচিত এই ঈদ। পত্রিকা, সাময়িকী ও সরকারি নথিপত্রে ‘ঈদ-উল-আদহা’ নামেও আখ্যায়িত হয়েছে কোরবানির ঈদ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আরব বণিকেরা যখন এ দেশে আসতে শুরু করলেন তখন ঈদুল আজহার সময় তাঁরা বকরি (ছাগল) কোরবানি দিতেন বলে ‘ঈদুল আজহা’, ‘বকরি ঈদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত পায়।
জেমস টেলরের বিবরণ অনুযায়ী, ১৮৩৮ সালে ঢাকা শহরের বণিকদের মধ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন; মুসলমান ও খ্রিষ্টান ছিলেন মাত্র চার-পাঁচজন করে। সে সময় আজকের মতো প্রতিটি ঘরে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য মুসলমান সমাজে ছিল না। অধ্যাপক আবদুল গফুর তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কালের কথা’য় লিখেছেন, ‘কোরবানির ঈদ বা অন্য কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া সাধারণত গরু বা বকরি জবাই করা হতো না। হাট–বাজারে গরু বা ছাগলের মাংসও এভাবে বিক্রি হতো না তখন। বাড়িতে মেহমান এলে সাধারণত মুরগী জবাই করেই তাদের আপ্যায়ন করা হতো।’
হিন্দু জমিদারপ্রধান এই অঞ্চলে গরু কোরবানি নিয়ে একটি বৈরী মনোভাব বিদ্যমান ছিল। ফলে মুসলমানদের প্রায়ই ছাগল (বকরি) কোরবানির দিকেই ঝুঁকতে হতো। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব তখন ততটা গুরুত্ব পেত না। তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১৮৯০ সালের ঢাকা প্রকাশ-এ ছাপা সরকারি ছুটির তালিকায়—যেখানে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান—এই তিন সম্প্রদায়ের জন্য ঘোষিত মোট ১৮ দিনের ছুটির মধ্যে মুসলমানদের ভাগে এসেছিল মাত্র ৩ দিন: মহররম উপলক্ষে দুই দিন এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক দিন।
সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশ পত্রিকা, ০২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯০.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম সলম ন ক রব ন রব ন র
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদুল আজহা শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়: প্রধান উপদেষ্টা
‘ঈদুল আজহা মানুষকে শান্তি, ত্যাগ ও সাম্য শেখায়’ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলিম জনগোষ্ঠীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জানাই শুভেচ্ছা এবং ঈদ মোবারক।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও চরম ত্যাগের অনুপম নিদর্শন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হন। এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সারা বিশ্বের মুসলমানরা ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ ও আত্মদানের এই সুমহান দৃষ্টান্ত কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।”
আরো পড়ুন:
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা
বাজার ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি
লুটপাট থেকে দেশের মানুষকে বের করে আনার চেষ্টা করছি: প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, “মুসলমানরা কোরবানিকৃত পশুর গোশত গরিব আত্মীয়স্বজন ও দুঃস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে সবাইকে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছড়িয়ে পড়ুক-এই হোক ঈদের চাওয়া।”
পবিত্র ঈদুল আজহার ত্যাগের শিক্ষা নিজেদের ভেতর ধারণ করার আহ্বান জানিয়ে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আসুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলি।”
ঈদুল আজহার এ দিনে প্রধান উপদেষ্টা মহান আল্লাহর কাছে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও উন্নতি প্রার্থনা করেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ