ঈদের সকাল মানেই একখণ্ড আনন্দ, একফোঁটা রঙিন ঘ্রাণ, প্রিয়জনের মুখে হাসির ঝলক। কিন্তু কিছু ঘর থাকে, যেখানকার সকাল আসে নীরবতায় মোড়া; যেখানে ঈদ মানেই অতীতের দিকে ফিরে তাকানো—সেই মানুষটির জন্য, যিনি ছিলেন পরিবারের প্রাণ।

ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি কৌতুক অভিনেতা দিলদার ছিলেন এমনই একজন। তিনি শুধু পর্দায় নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষণেই ছিলেন হাসির এক নিরন্তর ঝরনা। আজ তিনি নেই, কিন্তু তার স্মৃতিগুলো ঈদের সকালে এখনো পরিবারের প্রতিটি কোণে বেদনার মতো গড়িয়ে পড়ে।

২০০৩ সালের এক বিষণ্ন দিনে চিরতরে বিদায় নেন দিলদার। মৃত্যুর এত বছর পরেও ঈদ আসলেই তার পরিবারের হৃদয়ে নতুন করে বাজে শূন্যতার সুর। যেন ঈদ সকাল মানেই—একটা চেয়ার ফাঁকা, একটা হাসি অনুপস্থিত।

আরো পড়ুন:

ঈদের দ্বিতীয় দিন ছোট পর্দার নাটক-টেলিফিল্ম

তাণ্ডব: সমসাময়িক সময়ে সর্ববৃহৎ রিলিজ

কন্যা জিনিয়া আফরোজ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের ঈদের আনন্দের সবটুকু আব্বার ঘিরেই ছিল। তিনি চলে যাওয়ার পর সেই আনন্দ আর খুঁজে পাই না। বিয়ের পরও আমি বাবার বাড়িতেই ঈদ করি—কারণ আব্বা চাইতেন মেয়েরা আর নাতিরা তার সঙ্গে থাকুক। আজ সবাই আছে, শুধু তিনি নেই।”

স্মৃতির পাতায় এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে এক মধুর অথচ কষ্টকর ঈদের সকাল। তিনি বলেন, “আমার ছেলের বয়স তখন মাত্র তিন মাস। বাবা তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিয়ে কোলে করে ঈদগাহে নিয়ে যান। আমরা ভয়ে ছিলাম, কিন্তু বাবা ছিলেন আনন্দে মাতোয়ারা। নাতি তার সঙ্গে ঈদগাহে যাচ্ছে—এই অনুভবটাই ছিল তার ঈদের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”

শুধু তাই নয়, ঈদে কোরবানির গরুর পিঠে নাতিদের বসিয়ে ছবি তোলাও ছিল দিলদারের প্রিয় কাজ। জিনিয়া বলেন, “আব্বা এটা খুব উপভোগ করতেন। আমাদের ঈদ মানেই ছিল হাসি, হইচই আর নানা কাণ্ড। কিন্তু এখন, ছবি আছে, মানুষটা নেই।”

অনেক তারকা ঈদের ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যেতেন। কিন্তু দিলদার কখনও বাইরে ঈদ করতে চাননি। “তিনি বলতেন, ঈদ মানে হলো পরিবারের সঙ্গে থাকা, ঘরের ভেতর সেই সাদামাটা হাসির উচ্ছ্বাসটা উপভোগ করা।”

একদিন যিনি হাসাতেন সারা দেশ, আজ তার পরিবার ঈদের সকালে হাসতে ভুলে গেছে। দিলদার নেই—তবু আছে তার রেখে যাওয়া চিরসবুজ স্মৃতি, আভিজাত্যপূর্ণ সরলতা, আর নিঃসন্দেহে বাংলার ঈদের ইতিহাসে লেখা এক স্বর্ণাক্ষরের নাম।

ঢাকা/রাহাত/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র র ঈদ র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায় বাসদ

নির্বাচনের তারিখ পুনর্বিবেচনা করে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যেই ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। দলটি বলেছে, অধিকাংশ দলের মতামত উপেক্ষা করে একটি দলকে সন্তুষ্ট করতে এপ্রিলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

রোববার (৮ জুন) বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় এই বিবৃতি দেওয়া হয়।  

এই বিবৃতিতে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এক পর্যায়ে তিনি আগামী বছর এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন। আমাদের দল বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং দেশের প্রায় ৫০টির অধিক রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রধান উপদেষ্টা তার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার এবং জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা বারবার বলেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলো যখন চাইবে তখনই নির্বাচন হবে। অথচ তিনি দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করে এককভাবে এপ্রিল মাসে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করলেন। 

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা মনে করি, এটা অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জনমনে প্রশ্ন তৈরি করেছে। ১০ মাসের ঘটনা পরম্পরায় কোন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে কিনা সে সন্দেহ খারিজ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া এপ্রিল মাসে নির্বাচন হলে আবহাওয়া পরিস্থিতি, এসএসসি ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষা, ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১ মাস রোজা, তীব্র গরম, বোরো ধান কাটার মৌসুম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম না টেনে বাড়তে দেওয়া ইত্যাদি নানা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কি না সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতেই নির্বাচন হওয়া যথার্থ ছিল বলে অধিকাংশ দল ও সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণদাবি উপেক্ষা করে নির্বাচনের যেনতেন একটা সময় যেভাবে ঘোষণা করা হয়েছে তাতে ঐ সময়ে নির্বাচন হয়তো সম্ভব হবে না জেনেই করা হয়েছে যাতে ইউনুস সরকারের ক্ষমতা বা মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এতে তার নিজের ও দেশি-বিদেশি লুটেরার স্বার্থ হাসিল করা সহজ হবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ