ঈদ স্মৃতি: নাঈমের রান্না পায়া, শাবনাজের মায়া
Published: 8th, June 2025 GMT
এক সময় ছিল, ঈদের সিনেমার মানেই ছিল হলজুড়ে হুল্লোড়, পত্রিকায় হিট হেডলাইন, আর দর্শকের মনে প্রিয় নাম নাঈম-শাবনাজ। নব্বইয়ের দশকে এই জুটি এসেই যেন বদলে দিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার ব্যাকড্রপ। প্রেম, গান, একশন—সব কিছুতেই তারা ছিলেন দর্শকের চোখের মণি। আর ঈদ পূর্ণতা পেত তাদের সিনেমা দিয়েই। আজ হয়তো তারা অভিনয় থেকে অনেক দূরে, তবে স্মৃতির মঞ্চে এখনও তারা সুপারহিট!
ঈদের সিনেমা মুক্তি মানেই কেবল রিলিজ না, ছিল একেবারে উৎসবের প্রস্তুতি! শাবনাজ নিজেই স্মৃতিচারণ করলেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগের রাতেই আমাদের টেনশন শুরু হতো! আমরা, নাঈম, সাদেক বাচ্চু ভাই, পরিচালকসহ পুরো দল লেট নাইটে গাড়ি নিয়ে বের হতাম। এক হলে ঢুকি, ব্যানার দেখি; অন্য হলে গিয়ে দেখি আমাদের পোস্টার কেমন লাগছে! সত্যি বলতে, ঈদের আগের রাতের সেই উত্তেজনা কাজ করতো।”
ঈদের দিন সকাল হতেই নতুন এক টেনশনের শুরু—প্রথম শো কেমন যাবে? দর্শক কেমন নেবে? আর দুপুর গড়াতে না গড়াতেই হাসিমুখ, হাতভর্তি ফুল, আর ভক্তদের ভালোবাসায় ভরে যেত দিনটা।
আরো পড়ুন:
লজ্জার অভিজ্ঞতা জানালেন জেমি লিভার
শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ বাজিমাৎ করলেন নিশো-সিয়াম!
“শোয়ের পর দর্শক আসতো আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। তখন সেলফি না, অটোগ্রাফ ছিল বড় ব্যাপার! ফুল নিয়ে আসতো, খুশিতে অটোগ্রাফ নিতো। এখন সেসব কিছু সস্তা হয়ে গেছে। এখন তো সবাই শুধু ফোন বের করে ভিডিও করে আর সেলফি তোলে!”—হাসতে হাসতে বলেন শাবনাজ।
শুধু বড়পর্দা নয়, তাদের জনপ্রিয়তা পৌঁছে গিয়েছিল চকলেটের মোড়ক আর আইসক্রিম প্যাকেটেও! শাবনাজ বলেন, “আমার শাশুড়ির কাছেও নাঈম-আমার ছবিওয়ালা ভিউকার্ড জমা করা ছিল। তখন এসব পেয়ে খুব আনন্দ হতো। এখন এসব যেন শুধুই গল্প হয়ে গেছে.
প্রশ্ন ছিল, বিয়ের পর প্রথম ঈদ কোথায়? উত্তরে এল এক ঝলমলে গ্রামীণ গল্প— শাবনাজ বলেন, “টাঙ্গাইলে ঈদ করেছিলাম। গ্রামের সবাই আমাকে দেখতে এসেছিল! আমি নিজে রান্না করেছিলাম সেদিন। যদিও রান্নার অভিজ্ঞতা খুব একটা ছিল না, তাও চেষ্টা করেছিলাম। আর একটা কথা না বললেই নয়—আমি রান্না শিখেছি নাঈমের কাছ থেকেই। ওর হাতে গরুর পায়া... আহ! আমার না, পুরো পরিবারেরই স্পেশাল পছন্দ!”
আজ হয়তো তাদের পোস্টার দেখি না সিনেমা হলে, অটোগ্রাফ নেয়ার ভিড়ও দেখি না... কিন্তু নাঈম-শাবনাজ নামটা এখনও ঈদের ভাঁজে এক রকমের অনুভব হয়ে জেগে থাকে—মিষ্টি স্মৃতি, সিনেমার প্রেম আর হারিয়ে যাওয়া ঈদের ঘ্রাণ হয়ে।
ঢাকা/রাহাত/লিপি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ শ বন জ
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা