বিয়ের পর স্ত্রী সোনমকে নিয়ে মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা রাজা রঘুবংশী। গত ২৩ মে থেকে তাঁদের আর খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না।

নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর একটি গিরিখাতে রাজার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়, তখনো নিখোঁজ সোনম। পুলিশ সোনমের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যায়। রাজার মৃতদেহ উদ্ধারের প্রায় এক সপ্তাহ পর উত্তর প্রদেশের গাজীপুরে সোনমের খোঁজ মেলে।

সোনম জীবিত উদ্ধার হওয়ার পর রাজার মৃত্যু ঘিরে রহস্য আরও গভীর হয়।

মেঘালয় পুলিশের বিশ্বাস, সোনমের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে এবং এর জেরেই রাজাকে খুন করা হয়েছে। সোনমের বয়স ২৪ এবং রাজার বয়স ২৯ বছর।

মেঘালয় পুলিশের ধারণা, প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে মিলে সোনম পরিকল্পনা করে স্বামী রাজাকে হত্যা করেছেন এবং চাপের মুখে ৮ জুন আত্মসমর্পণ করেছেন। দুজনকেই পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজের সম্পর্কে পুলিশের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। নিহত রাজার ভাই বিপুল রঘুবংশী বলেছেন, সোনমের কর্মচারী ছিলেন রাজ। তাঁরা দুজন ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলতেন।

তবে বিপুল নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি কখনো রাজ কুশওয়াহাকে দেখেননি। তিনি শুধু তাঁর নাম শুনেছেন।

ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোনম সরাসরি জড়িত কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনো অভিযোগ করেননি বিপুল। তিনি শুধু বলেছেন, যদি রাজ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকেন, তবে সোনমও জড়িত থাকতে পারেন।

রাজা স্ত্রীকে নিয়ে শুরুতে গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির দর্শনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন বিপুল। হঠাৎ পরিকল্পনা বদলে তাঁরা কীভাবে পাশের মেঘালয় রাজ্যে পৌঁছালেন, তা নিয়ে তাঁদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে।

বিপুল বলেন, ‘আমরা জানি না, দুজনের মধ্যে কে মেঘালয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। তারা ফেরার কোনো অগ্রিম টিকিটও নেয়নি।’

৮ জুন রাতে সোনম গাজীপুরে পৌঁছান এবং নিজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও তাঁর পরিবার বলেছে, ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

সোনমের বেঁচে থাকা নিয়েও রাজার পরিবারের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজার আরেক ভাই শচীন বলেন, সোনমের বেঁচে থাকা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে রাজাকে কারা হত্যা করল?

রাজা ও সোনমের বিয়ে হয় গত ১১ মে। এ দম্পতি ২০ মে মধুচন্দ্রিমায় যান—এক দিন পর শিলংয়ে পৌঁছান। সেখানে ২৩ মে একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে তাঁরা নিখোঁজ হন।

২ জুন রাজার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মৃতদেহের সুরতহালে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার প্রমাণ মেলে—৮ জুনের আগ পর্যন্ত সোনমের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

৮ জুন রাতে সোনম গাজীপুরে পৌঁছান এবং নিজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও তাঁর পরিবার বলেছে, ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

বিয়ে নিয়ে তারা খুশি ছিল। আমি কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখিনি। পুলিশ এমনকি আমার ভাইয়ের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আমাদের দেখতে পর্যন্ত দেয়নি.

..আমরা চাই মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং সিবিআই এ মামলার তদন্ত করুকবিপুল রঘুবংশী, নিহত রাজার ভাই

উত্তর প্রদেশ পুলিশ বলেছে, নন্দগঞ্জের একটি ধাবায় সোনমকে উদ্‌ভ্রান্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে সময় তিনি জ্বরে ভুগছিলেন।

তবে মেঘালয়ের পুলিশ বলেছে, সোনম নিজেই পুলিশ স্টেশনে এসে আত্মসমর্পণ করেছেন।

সোনমের পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বলেছে, তিনি তাঁর স্বামীকে হত্যা করতে পারেন না। সোনমের বাবা দেবী সিং বলেছেন, ‘সে এটা করতে পারে না। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করেছে। আমার মেয়ে গত রাতে গাজীপুরে একটি ধাবায় আসে এবং তার ভাইকে ফোন করে। পুলিশ ধাবায় গিয়ে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’

দেবী সিং মেঘালয় পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে নিয়ে বানোয়াট গল্প তৈরির অভিযোগ করে এ ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করেছেন। নিহত রাজার পরিবারও একই দাবি করেছে।

বিপুল রঘুবংশী বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে তারা খুশি ছিল। আমি কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখিনি। পুলিশ এমনকি আমার ভাইয়ের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও আমাদের দেয়নি...আমরা চাই মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং সিবিআই এই মামলার তদন্ত করুক।’

নিহত রাজার মা উমা রঘুবংশী ছেলের বউ সোনমের প্রশংসা করেছেন। উমা বলেছেন, সোনম ভালো স্বভাবের মেয়ে এবং যদি তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা উচিত হবে না।

তবে শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণিত হয় যে সোনমই খুনের সঙ্গে জড়িত, তাহলে তিনি হত্যাকারীর ফাঁসির সাজা দাবি করেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হত র জ র র পর ব র বল ছ ন হত য ক কর ছ ন য গ কর তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ