বিয়ের এক মাসের মধ্যেই মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীকে কি নববধূ খুন করলেন
Published: 9th, June 2025 GMT
বিয়ের পর স্ত্রী সোনমকে নিয়ে মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা রাজা রঘুবংশী। গত ২৩ মে থেকে তাঁদের আর খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না।
নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর একটি গিরিখাতে রাজার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়, তখনো নিখোঁজ সোনম। পুলিশ সোনমের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যায়। রাজার মৃতদেহ উদ্ধারের প্রায় এক সপ্তাহ পর উত্তর প্রদেশের গাজীপুরে সোনমের খোঁজ মেলে।
সোনম জীবিত উদ্ধার হওয়ার পর রাজার মৃত্যু ঘিরে রহস্য আরও গভীর হয়।
মেঘালয় পুলিশের বিশ্বাস, সোনমের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আছে এবং এর জেরেই রাজাকে খুন করা হয়েছে। সোনমের বয়স ২৪ এবং রাজার বয়স ২৯ বছর।
মেঘালয় পুলিশের ধারণা, প্রেমিক রাজ কুশওয়াহার সঙ্গে মিলে সোনম পরিকল্পনা করে স্বামী রাজাকে হত্যা করেছেন এবং চাপের মুখে ৮ জুন আত্মসমর্পণ করেছেন। দুজনকেই পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজের সম্পর্কে পুলিশের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। নিহত রাজার ভাই বিপুল রঘুবংশী বলেছেন, সোনমের কর্মচারী ছিলেন রাজ। তাঁরা দুজন ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলতেন।
তবে বিপুল নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি কখনো রাজ কুশওয়াহাকে দেখেননি। তিনি শুধু তাঁর নাম শুনেছেন।
ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোনম সরাসরি জড়িত কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত কোনো অভিযোগ করেননি বিপুল। তিনি শুধু বলেছেন, যদি রাজ এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকেন, তবে সোনমও জড়িত থাকতে পারেন।
রাজা স্ত্রীকে নিয়ে শুরুতে গুয়াহাটির কামাখ্যা মন্দির দর্শনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন বিপুল। হঠাৎ পরিকল্পনা বদলে তাঁরা কীভাবে পাশের মেঘালয় রাজ্যে পৌঁছালেন, তা নিয়ে তাঁদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে।
বিপুল বলেন, ‘আমরা জানি না, দুজনের মধ্যে কে মেঘালয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। তারা ফেরার কোনো অগ্রিম টিকিটও নেয়নি।’
৮ জুন রাতে সোনম গাজীপুরে পৌঁছান এবং নিজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও তাঁর পরিবার বলেছে, ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।সোনমের বেঁচে থাকা নিয়েও রাজার পরিবারের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রাজার আরেক ভাই শচীন বলেন, সোনমের বেঁচে থাকা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে রাজাকে কারা হত্যা করল?
রাজা ও সোনমের বিয়ে হয় গত ১১ মে। এ দম্পতি ২০ মে মধুচন্দ্রিমায় যান—এক দিন পর শিলংয়ে পৌঁছান। সেখানে ২৩ মে একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে তাঁরা নিখোঁজ হন।
২ জুন রাজার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। মৃতদেহের সুরতহালে তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার প্রমাণ মেলে—৮ জুনের আগ পর্যন্ত সোনমের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
৮ জুন রাতে সোনম গাজীপুরে পৌঁছান এবং নিজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও তাঁর পরিবার বলেছে, ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
বিয়ে নিয়ে তারা খুশি ছিল। আমি কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখিনি। পুলিশ এমনকি আমার ভাইয়ের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আমাদের দেখতে পর্যন্ত দেয়নি...আমরা চাই মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং সিবিআই এ মামলার তদন্ত করুকবিপুল রঘুবংশী, নিহত রাজার ভাই
উত্তর প্রদেশ পুলিশ বলেছে, নন্দগঞ্জের একটি ধাবায় সোনমকে উদ্ভ্রান্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে সময় তিনি জ্বরে ভুগছিলেন।
তবে মেঘালয়ের পুলিশ বলেছে, সোনম নিজেই পুলিশ স্টেশনে এসে আত্মসমর্পণ করেছেন।
সোনমের পরিবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বলেছে, তিনি তাঁর স্বামীকে হত্যা করতে পারেন না। সোনমের বাবা দেবী সিং বলেছেন, ‘সে এটা করতে পারে না। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তারা বিয়ে করেছে। আমার মেয়ে গত রাতে গাজীপুরে একটি ধাবায় আসে এবং তার ভাইকে ফোন করে। পুলিশ ধাবায় গিয়ে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে।’
দেবী সিং মেঘালয় পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে নিয়ে বানোয়াট গল্প তৈরির অভিযোগ করে এ ঘটনায় সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করেছেন। নিহত রাজার পরিবারও একই দাবি করেছে।
বিপুল রঘুবংশী বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে তারা খুশি ছিল। আমি কখনো তাদের ঝগড়া করতে দেখিনি। পুলিশ এমনকি আমার ভাইয়ের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও আমাদের দেয়নি...আমরা চাই মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং সিবিআই এই মামলার তদন্ত করুক।’
নিহত রাজার মা উমা রঘুবংশী ছেলের বউ সোনমের প্রশংসা করেছেন। উমা বলেছেন, সোনম ভালো স্বভাবের মেয়ে এবং যদি তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা উচিত হবে না।
তবে শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণিত হয় যে সোনমই খুনের সঙ্গে জড়িত, তাহলে তিনি হত্যাকারীর ফাঁসির সাজা দাবি করেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হত র জ র র পর ব র বল ছ ন হত য ক কর ছ ন য গ কর তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে
তাঁর নামে পুলিশের খাতায় কোনো মামলা নেই। পুলিশও তাঁকে ধরেনি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার আসামি সেজে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর সাত দিন ধরে কারাগারে আছেন মো. রাকিব নামের এক যুবক। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্বেচ্ছায় প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে জেল খাটতে আসেন রাকিব।
এ যেন জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’-এর কাহিনি। এই চলচ্চিত্রের মূল চরিত্র শরাফত করিম আয়না (চঞ্চল চৌধুরী) জাহাজে বাবুর্চির কাজ করেন। মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসের জন্য হাওয়া হয়ে যান তিনি। কোথায় যান? আসলে এ সময় তিনি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের হয়ে টাকার বিনিময়ে জেল খাটেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব। যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩আদালতে একের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারকারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ।
আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো আসামির ওকালতনামা না দিতে বলা আছে। কেউ যাতে প্রতারণার সুযোগ না পান, আইনজীবীদের সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।