লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বের চেয়ে গিমিক (চমক সৃষ্টিকারী) বেশি মনে হচ্ছে। তিনিসহ বিএনপি নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যাবে। স্পষ্টতই দু’পক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনার মূল পার্থক্য হলো ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে। নির্বাচনের রোডম্যাপ সেখানে দ্বিতীয় বিবেচনার বিষয়।
অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নাগরিকদের প্রত্যাশা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা যেন চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে থাকে। যেমন সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে তিনটি পদে বহাল থাকতে পারবেন না– নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সংসদ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। এই সংস্কারে বিএনপি স্পষ্টতই সম্মত নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও ঘুরেফিরে পারিবারিক প্রভাবাধীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ যেমন শেখ পরিবার ছাড়া চলতে চায় না, তেমনি বিএনপিও জিয়া পরিবার ছাড়া চলতে চায় না। বিএনপি ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করছে– আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তারেক রহমানের হাতে যদি একক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে দেশ ও দল চালাতে পারবেন না। তাঁকে যদি প্রধানমন্ত্রী না করা যায় এবং দলের চেয়ারম্যানও না বানানো হয়, তাহলে বিএনপি বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এটাই বিএনপির প্রধান ভয়! এবং এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য।
বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন ও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বিএনপি কিছু মৌলিক সংস্কারে সম্মত নয় বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদের ব্যাপারেও দলটির নিজস্ব মত রয়েছে। তাদের মতের সঙ্গে এনসিপি একমত হবে বলে মনে হয় না। এমনকি জামায়াতে ইসলামীও নাও মানতে পারে। জামায়াতও চাইছে, বিএনপিকে এক ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো যা ইচ্ছা তাই করতে না পারে। বস্তুত, অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কতটুকু মানবে, তা সামনে পরিষ্কার হবে।
বলা বাহুল্য, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে কেবল নির্বাচনী রোডম্যাপ নয়, সংস্কারের এজেন্ডাগুলোও আলোচনায় আসবে। অন্তত আমার মতে, আসা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে– লন্ডনে দুইজন ব্যক্তির আলোচনার মধ্যে কী এমন জাদু ঘটবে যে এক বৈঠকেই এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে!
এমন হতে পারে, বৈঠকে তারেক রহমান বিএনপির সাম্প্রতিক দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবেন। যেমন– নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা; অন্তত এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে। আমার ধারণা, অধ্যাপক ইউনূস দাবিগুলো শুনবেন, কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। ঢাকার আলোচনায় তিনি বিএনপির যেসব দাবি দৃশ্যত মানছেন না, লন্ডনে গিয়ে এক বৈঠকেই সেগুলো মেনে নেবেন, এমনটা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তারেক রহমান ঢাকায় ফিরলে বরং নিজেই সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত হতে পারবেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সংস্কার বা নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে দূরত্ব কমে আসতে পারে।
মোট কথা, লন্ডনের বৈঠকে দুই ব্যক্তির আলোচনায় বরফ গলে যাবে বলে আমার মনে হয় না। অনেকে বলছেন, এ বৈঠক না হওয়ার কারণে গত দশ মাসে কিছুই হয়নি– এটা একেবারেই অমূলক চিন্তা। বিএনপি কী চায়, কেন চায় দেশের জনগণ সেটা বোঝে। অন্তর্বর্তী সরকারও নিশ্চয় বোঝে। তাই তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে ড.
ড. মির্জা এম হাসান: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, গ্রেপ্তার ২
যশোরের ঝিকরগাছায় পবিত্র ঈদুল আজহার দিন ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল ১০ বছর বয়সী এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী। ওই দিন দুপুরে ফুফাতো ভাই তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে লাশটি বাড়ির পাশে একটি ডোবায় ফেলে দেন। পরে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে বলে নাটক সাজানো হয়। এ ঘটনায় ফুফাতো ভাই ও ফুফাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা পুলিশ। গ্রেপ্তার বাবা-ছেলে ঝিকরগাছার একটি গ্রামের বাসিন্দা। নিহত শিশুটি পাশের গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।
পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফুফাতো ভাই পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুরে ঘরের ভেতরে তাঁর বোন ঘুমাচ্ছিল। বাইরে ভুক্তভোগী শিশুটি দোলনায় দোল খাচ্ছিল। তাকে একা দেখে ফুফাতো ভাই জাপটে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে যান। পরে গলা ও মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে শ্বাসরোধে মারা যায় শিশুটি। তখন বাড়ির পাশের একটি পুকুরে তার লাশ ফেলে দেওয়া হয়। পরে বোনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বিষয়টি গোপন করতে শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে নাটক সাজান।
এদিকে বাড়ির লোকজন শিশুটিকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে খবর দেন। পরদিন সকালে ফুফু বাড়ির পশ্চিম পাশের ডোবায় লাশ দেখে চিৎকার করলে লোকজন ছুটে আসেন। পরে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে শিশুটির বাবা ঘটনাস্থলে যান এবং মেয়ের ঠোঁটে জখমের চিহ্ন দেখতে পারেন। এ ঘটনায় তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ বলেন, গ্রেপ্তার তরুণ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। গত বুধবার ওই তরুণ ও তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।