Samakal:
2025-09-18@06:22:16 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

Published: 12th, June 2025 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বের চেয়ে গিমিক (চমক সৃষ্টিকারী) বেশি মনে হচ্ছে। তিনিসহ বিএনপি নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যাবে। স্পষ্টতই দু’পক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনার মূল পার্থক্য হলো ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে। নির্বাচনের রোডম্যাপ সেখানে দ্বিতীয় বিবেচনার বিষয়। 

অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নাগরিকদের প্রত্যাশা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা যেন চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে থাকে। যেমন সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে তিনটি পদে বহাল থাকতে পারবেন না– নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সংসদ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। এই সংস্কারে বিএনপি স্পষ্টতই সম্মত নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও ঘুরেফিরে পারিবারিক প্রভাবাধীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ যেমন শেখ পরিবার ছাড়া চলতে চায় না, তেমনি বিএনপিও জিয়া পরিবার ছাড়া চলতে চায় না। বিএনপি ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করছে– আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তারেক রহমানের হাতে যদি একক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে দেশ ও দল চালাতে পারবেন না। তাঁকে যদি প্রধানমন্ত্রী না করা যায় এবং দলের চেয়ারম্যানও না বানানো হয়, তাহলে বিএনপি বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এটাই বিএনপির প্রধান ভয়! এবং এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। 

বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন ও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বিএনপি কিছু মৌলিক সংস্কারে সম্মত নয় বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদের ব্যাপারেও দলটির নিজস্ব মত রয়েছে। তাদের মতের সঙ্গে এনসিপি একমত হবে বলে মনে হয় না। এমনকি জামায়াতে ইসলামীও নাও মানতে পারে। জামায়াতও চাইছে, বিএনপিকে এক ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো যা ইচ্ছা তাই করতে না পারে। বস্তুত, অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কতটুকু মানবে, তা সামনে পরিষ্কার হবে।  

বলা বাহুল্য, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে কেবল নির্বাচনী রোডম্যাপ নয়, সংস্কারের এজেন্ডাগুলোও আলোচনায় আসবে। অন্তত আমার মতে, আসা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে– লন্ডনে দুইজন ব্যক্তির আলোচনার মধ্যে কী এমন জাদু ঘটবে যে এক বৈঠকেই এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে!

এমন হতে পারে, বৈঠকে তারেক রহমান বিএনপির সাম্প্রতিক দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবেন। যেমন– নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা; অন্তত এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে। আমার ধারণা, অধ্যাপক ইউনূস দাবিগুলো শুনবেন, কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। ঢাকার আলোচনায় তিনি বিএনপির যেসব দাবি দৃশ্যত মানছেন না, লন্ডনে গিয়ে এক বৈঠকেই সেগুলো মেনে নেবেন, এমনটা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তারেক রহমান ঢাকায় ফিরলে বরং নিজেই সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত হতে পারবেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সংস্কার বা নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে দূরত্ব কমে আসতে পারে।

মোট কথা, লন্ডনের বৈঠকে দুই ব্যক্তির আলোচনায় বরফ গলে যাবে বলে আমার মনে হয় না। অনেকে বলছেন, এ বৈঠক না হওয়ার কারণে গত দশ মাসে কিছুই হয়নি– এটা একেবারেই অমূলক চিন্তা। বিএনপি কী চায়, কেন চায় দেশের জনগণ সেটা বোঝে। অন্তর্বর্তী সরকারও নিশ্চয় বোঝে। তাই তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে কোনো প্রস্তাব দিলেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন– এটা আশা করাটাও বাড়াবাড়ি! 

ড. মির্জা এম হাসান: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ