Samakal:
2025-07-30@10:26:47 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

Published: 12th, June 2025 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বের চেয়ে গিমিক (চমক সৃষ্টিকারী) বেশি মনে হচ্ছে। তিনিসহ বিএনপি নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যাবে। স্পষ্টতই দু’পক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনার মূল পার্থক্য হলো ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে। নির্বাচনের রোডম্যাপ সেখানে দ্বিতীয় বিবেচনার বিষয়। 

অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নাগরিকদের প্রত্যাশা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা যেন চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে থাকে। যেমন সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে তিনটি পদে বহাল থাকতে পারবেন না– নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সংসদ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। এই সংস্কারে বিএনপি স্পষ্টতই সম্মত নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও ঘুরেফিরে পারিবারিক প্রভাবাধীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ যেমন শেখ পরিবার ছাড়া চলতে চায় না, তেমনি বিএনপিও জিয়া পরিবার ছাড়া চলতে চায় না। বিএনপি ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করছে– আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তারেক রহমানের হাতে যদি একক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে দেশ ও দল চালাতে পারবেন না। তাঁকে যদি প্রধানমন্ত্রী না করা যায় এবং দলের চেয়ারম্যানও না বানানো হয়, তাহলে বিএনপি বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এটাই বিএনপির প্রধান ভয়! এবং এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। 

বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন ও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বিএনপি কিছু মৌলিক সংস্কারে সম্মত নয় বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদের ব্যাপারেও দলটির নিজস্ব মত রয়েছে। তাদের মতের সঙ্গে এনসিপি একমত হবে বলে মনে হয় না। এমনকি জামায়াতে ইসলামীও নাও মানতে পারে। জামায়াতও চাইছে, বিএনপিকে এক ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো যা ইচ্ছা তাই করতে না পারে। বস্তুত, অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কতটুকু মানবে, তা সামনে পরিষ্কার হবে।  

বলা বাহুল্য, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে কেবল নির্বাচনী রোডম্যাপ নয়, সংস্কারের এজেন্ডাগুলোও আলোচনায় আসবে। অন্তত আমার মতে, আসা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে– লন্ডনে দুইজন ব্যক্তির আলোচনার মধ্যে কী এমন জাদু ঘটবে যে এক বৈঠকেই এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে!

এমন হতে পারে, বৈঠকে তারেক রহমান বিএনপির সাম্প্রতিক দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবেন। যেমন– নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা; অন্তত এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে। আমার ধারণা, অধ্যাপক ইউনূস দাবিগুলো শুনবেন, কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। ঢাকার আলোচনায় তিনি বিএনপির যেসব দাবি দৃশ্যত মানছেন না, লন্ডনে গিয়ে এক বৈঠকেই সেগুলো মেনে নেবেন, এমনটা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তারেক রহমান ঢাকায় ফিরলে বরং নিজেই সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত হতে পারবেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সংস্কার বা নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে দূরত্ব কমে আসতে পারে।

মোট কথা, লন্ডনের বৈঠকে দুই ব্যক্তির আলোচনায় বরফ গলে যাবে বলে আমার মনে হয় না। অনেকে বলছেন, এ বৈঠক না হওয়ার কারণে গত দশ মাসে কিছুই হয়নি– এটা একেবারেই অমূলক চিন্তা। বিএনপি কী চায়, কেন চায় দেশের জনগণ সেটা বোঝে। অন্তর্বর্তী সরকারও নিশ্চয় বোঝে। তাই তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে কোনো প্রস্তাব দিলেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন– এটা আশা করাটাও বাড়াবাড়ি! 

ড. মির্জা এম হাসান: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

নির্জন পথে হরিণের মাংস নিয়ে ফিরছিলেন শিকারিরা, কোস্টগার্ড দেখে পালালেন

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ