Samakal:
2025-11-03@00:26:41 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

Published: 12th, June 2025 GMT

এক বৈঠকেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি আমার কাছে গুরুত্বের চেয়ে গিমিক (চমক সৃষ্টিকারী) বেশি মনে হচ্ছে। তিনিসহ বিএনপি নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হোক। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কারের পর নির্বাচন দিতে এপ্রিল পর্যন্ত লেগে যাবে। স্পষ্টতই দু’পক্ষের মধ্যে চিন্তাভাবনার মূল পার্থক্য হলো ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে। নির্বাচনের রোডম্যাপ সেখানে দ্বিতীয় বিবেচনার বিষয়। 

অতীত অভিজ্ঞতার কারণে নাগরিকদের প্রত্যাশা হলো, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা যেন চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে থাকে। যেমন সংস্কার প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে তিনটি পদে বহাল থাকতে পারবেন না– নির্বাহী বিভাগের প্রধান, সংসদ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান। এই সংস্কারে বিএনপি স্পষ্টতই সম্মত নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও ঘুরেফিরে পারিবারিক প্রভাবাধীন রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ যেমন শেখ পরিবার ছাড়া চলতে চায় না, তেমনি বিএনপিও জিয়া পরিবার ছাড়া চলতে চায় না। বিএনপি ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করছে– আমরা যদি ক্ষমতায় আসি, তারেক রহমানের হাতে যদি একক ক্ষমতা না থাকে, তাহলে দেশ ও দল চালাতে পারবেন না। তাঁকে যদি প্রধানমন্ত্রী না করা যায় এবং দলের চেয়ারম্যানও না বানানো হয়, তাহলে বিএনপি বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এটাই বিএনপির প্রধান ভয়! এবং এটাই হচ্ছে বাস্তব সত্য। 

বিভিন্ন বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন ও প্রস্তাব জমা দিয়েছে। বিএনপি কিছু মৌলিক সংস্কারে সম্মত নয় বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি জুলাই সনদের ব্যাপারেও দলটির নিজস্ব মত রয়েছে। তাদের মতের সঙ্গে এনসিপি একমত হবে বলে মনে হয় না। এমনকি জামায়াতে ইসলামীও নাও মানতে পারে। জামায়াতও চাইছে, বিএনপিকে এক ধরনের শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো যা ইচ্ছা তাই করতে না পারে। বস্তুত, অন্তর্বর্তী সরকারও সংস্কার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কতটুকু মানবে, তা সামনে পরিষ্কার হবে।  

বলা বাহুল্য, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে কেবল নির্বাচনী রোডম্যাপ নয়, সংস্কারের এজেন্ডাগুলোও আলোচনায় আসবে। অন্তত আমার মতে, আসা উচিত। প্রশ্ন হচ্ছে– লন্ডনে দুইজন ব্যক্তির আলোচনার মধ্যে কী এমন জাদু ঘটবে যে এক বৈঠকেই এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে!

এমন হতে পারে, বৈঠকে তারেক রহমান বিএনপির সাম্প্রতিক দাবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি করবেন। যেমন– নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা; অন্তত এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে। আমার ধারণা, অধ্যাপক ইউনূস দাবিগুলো শুনবেন, কিন্তু বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন না। ঢাকার আলোচনায় তিনি বিএনপির যেসব দাবি দৃশ্যত মানছেন না, লন্ডনে গিয়ে এক বৈঠকেই সেগুলো মেনে নেবেন, এমনটা হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। তারেক রহমান ঢাকায় ফিরলে বরং নিজেই সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনায় যুক্ত হতে পারবেন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সংস্কার বা নির্বাচনী রোডম্যাপ বিষয়ে দূরত্ব কমে আসতে পারে।

মোট কথা, লন্ডনের বৈঠকে দুই ব্যক্তির আলোচনায় বরফ গলে যাবে বলে আমার মনে হয় না। অনেকে বলছেন, এ বৈঠক না হওয়ার কারণে গত দশ মাসে কিছুই হয়নি– এটা একেবারেই অমূলক চিন্তা। বিএনপি কী চায়, কেন চায় দেশের জনগণ সেটা বোঝে। অন্তর্বর্তী সরকারও নিশ্চয় বোঝে। তাই তারেক রহমান লন্ডন বৈঠকে ড.

মুহাম্মদ ইউনূসকে কোনো প্রস্তাব দিলেই তিনি রাজি হয়ে যাবেন– এটা আশা করাটাও বাড়াবাড়ি! 

ড. মির্জা এম হাসান: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ব এনপ র সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ