Samakal:
2025-09-17@21:23:40 GMT

‘লবণরেখা’ অনতিক্রম্য নহে

Published: 12th, June 2025 GMT

‘লবণরেখা’ অনতিক্রম্য নহে

কোরবানির পশুর চামড়া লইয়া এই বৎসরও মৌসুমি ব্যবসায়ীগণ যেইভাবে বিপাকে পড়িয়াছেন, উহা হতাশাব্যঞ্জক। বুধবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে যথার্থই বলা হইয়াছে, কাঁচা চামড়া ঘিরিয়া বেদনাদায়ক বাস্তবতা হইয়া উঠিয়াছে ‘লবণরেখা’। কারণ লবণ যুক্তকারী চামড়া ব্যবসায়ীগণ সরকারি প্রণোদনাসহ বিবিধ সহায়তা পাইলেও সংকটে পড়েন লবণমুক্ত চামড়া সংগ্রাহক মৌসুমি ব্যবসায়ীগণ। তৎসহিত কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারী মাদ্রাসা ও এতিমখানার ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলিও প্রত্যাশিত দর হইতে বঞ্চিত হয়। প্রায় এক যুগ ধরিয়া চামড়া খাত যেই সংকট মোকাবিলা করিতেছে, এইবার সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করিলেও তদবস্থা হইতে উত্তরণ না ঘটা উদ্বেগজনক। 

সাম্প্রতিক বৎসরগুলির ন্যায় এইবার কোরবানির পূর্বেই সরকার চামড়ার দর ধার্য করিয়াছিল। বাস্তবে ধার্যকৃত দরে চামড়া বিক্রয় না হইবার কারণে সমস্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তদুপরি ইহাও কহতব্য, সরকার মূলত লবণযুক্ত চামড়ার দরই নির্ধারণ করিয়া দিয়াছে।
মধ্য পর্যায়ের ব্যবসায়ীগণ কাঁচা চামড়া ক্রয় করিয়া লবণ প্রয়োগান্তে ট্যানারিতে বিক্রয় করিয়া থাকেন। সরকারের চামড়া ব্যবস্থাপনা যেইখানে কেবল তাহাদের স্বার্থ বিবেচনা করে, সেইখানে মৌসুমি ব্যবসায়ীগণের দিকে কে দৃষ্টিপাত করিবে? আমরা মনে করি, সাধারণ কোরবানিদাতা হইতে পাড়া-মহল্লার মৌসুমি ক্রেতা এবং মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংগৃহীত চামড়াও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা উচিত। কারণ লবণহীন চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে যুক্ত এই গোষ্ঠীই বৃহৎ এবং প্রাথমিক উৎস। তাহারাই মহল্লায় গিয়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করিয়া থাকে।

আমরা মনে করি, কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণের বিষয়টি নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। চামড়ার সকল পর্যায়ের অংশীজনকে সরকারি প্রণোদনায় আনিতে হইলে কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারীদিগকেও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এইবার চামড়া সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে লবণ বিতরণ করিয়াছে, যাহা সাধুবাদযোগ্য। ভবিষ্যতে উহার পরিসর বৃদ্ধি করিলে মৌসুমি ব্যবসায়ীগণের জন্য স্বস্তিদায়ক হইবে। কোরবানির পশুর চামড়া দরিদ্রের অধিকার হইলেও আমাদের অব্যবস্থাপনা ও চামড়া খাতের মান সংকটে তাহারা প্রতি বৎসর বঞ্চিত হইয়া আসিতেছে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, বাংলাদেশ কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবেশী দেশ হইতে যদ্রূপ গরু আমদানির পথ বন্ধ হইয়াছে, তদ্রূপ কাঁচা চামড়া পাচার না হওয়াও স্বস্তির বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হইলেও সত্য, বেশ কয়েক বৎসর ধরিয়া পশুতে দেশীয় সক্ষমতা অর্জন বিষয়ে সুবিধা ভোগ করিলেও চামড়ার বাজার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আমরা গড়িয়া তুলিতে পারি নাই। এমনকি প্রত্যাশিত দাম না পাইয়া কোরবানির পশুর চামড়া ভাগাড়ে ফেলিবার অঘটনও ঘটিয়াছে। এই সংকট হইতে উত্তরণে চামড়া কারবারিদের দিকে দৃষ্টি দিতেই হইবে।

আমাদের চামড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পাইলেও যেইভাবে উহার রপ্তানি ক্রমহ্রাসমান, তাহাও কম উদ্বেগজনক নহে। এমনকি চামড়াজাত পণ্য তৈরির দেশীয় চাহিদা পূরণে চামড়া আমদানি করিতে হয়। যথেষ্ট দেশীয় চামড়া থাকা সত্ত্বেও আমদানি করিবার কারণ হইল আমাদের চামড়াশিল্প আন্তর্জাতিক মান ও বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করিতে পারে নাই। চামড়ার হৃতগৌরব ফেরাইতে প্রথমত এলডব্লিউজি সনদ অর্জন করিতে হইবে। তজ্জন্য জরুরি ভিত্তিতে সাভারে অবস্থিত ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য শোধনাগার বাস্তবায়নের বিকল্প নাই। রাজধানীর হাজারীবাগ হইতে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পরও দুরবস্থা দূরীভূত হয় নাই, তদ্বিষয়ে মনোযোগ বৃদ্ধি করিতে হইবে। চামড়া মূল্যবান হইলেও এবং দেশ-বিদেশে ইহার ব্যাপক চাহিদার পরও কোরবানির পশুর চামড়াবিষয়ক সংকট প্রলম্বিত হইতে পারে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় গণ ক রব ন র প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ