কোরবানির পশুর চামড়া লইয়া এই বৎসরও মৌসুমি ব্যবসায়ীগণ যেইভাবে বিপাকে পড়িয়াছেন, উহা হতাশাব্যঞ্জক। বুধবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে যথার্থই বলা হইয়াছে, কাঁচা চামড়া ঘিরিয়া বেদনাদায়ক বাস্তবতা হইয়া উঠিয়াছে ‘লবণরেখা’। কারণ লবণ যুক্তকারী চামড়া ব্যবসায়ীগণ সরকারি প্রণোদনাসহ বিবিধ সহায়তা পাইলেও সংকটে পড়েন লবণমুক্ত চামড়া সংগ্রাহক মৌসুমি ব্যবসায়ীগণ। তৎসহিত কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারী মাদ্রাসা ও এতিমখানার ন্যায় প্রতিষ্ঠানগুলিও প্রত্যাশিত দর হইতে বঞ্চিত হয়। প্রায় এক যুগ ধরিয়া চামড়া খাত যেই সংকট মোকাবিলা করিতেছে, এইবার সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করিলেও তদবস্থা হইতে উত্তরণ না ঘটা উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিক বৎসরগুলির ন্যায় এইবার কোরবানির পূর্বেই সরকার চামড়ার দর ধার্য করিয়াছিল। বাস্তবে ধার্যকৃত দরে চামড়া বিক্রয় না হইবার কারণে সমস্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তদুপরি ইহাও কহতব্য, সরকার মূলত লবণযুক্ত চামড়ার দরই নির্ধারণ করিয়া দিয়াছে।
মধ্য পর্যায়ের ব্যবসায়ীগণ কাঁচা চামড়া ক্রয় করিয়া লবণ প্রয়োগান্তে ট্যানারিতে বিক্রয় করিয়া থাকেন। সরকারের চামড়া ব্যবস্থাপনা যেইখানে কেবল তাহাদের স্বার্থ বিবেচনা করে, সেইখানে মৌসুমি ব্যবসায়ীগণের দিকে কে দৃষ্টিপাত করিবে? আমরা মনে করি, সাধারণ কোরবানিদাতা হইতে পাড়া-মহল্লার মৌসুমি ক্রেতা এবং মাদ্রাসা ও এতিমখানার সংগৃহীত চামড়াও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা উচিত। কারণ লবণহীন চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে যুক্ত এই গোষ্ঠীই বৃহৎ এবং প্রাথমিক উৎস। তাহারাই মহল্লায় গিয়া কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করিয়া থাকে।
আমরা মনে করি, কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণের বিষয়টি নূতন করিয়া ভাবিতে হইবে। চামড়ার সকল পর্যায়ের অংশীজনকে সরকারি প্রণোদনায় আনিতে হইলে কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারীদিগকেও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। এইবার চামড়া সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে লবণ বিতরণ করিয়াছে, যাহা সাধুবাদযোগ্য। ভবিষ্যতে উহার পরিসর বৃদ্ধি করিলে মৌসুমি ব্যবসায়ীগণের জন্য স্বস্তিদায়ক হইবে। কোরবানির পশুর চামড়া দরিদ্রের অধিকার হইলেও আমাদের অব্যবস্থাপনা ও চামড়া খাতের মান সংকটে তাহারা প্রতি বৎসর বঞ্চিত হইয়া আসিতেছে।
স্মরণে রাখিতে হইবে, বাংলাদেশ কোরবানির পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিবেশী দেশ হইতে যদ্রূপ গরু আমদানির পথ বন্ধ হইয়াছে, তদ্রূপ কাঁচা চামড়া পাচার না হওয়াও স্বস্তির বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হইলেও সত্য, বেশ কয়েক বৎসর ধরিয়া পশুতে দেশীয় সক্ষমতা অর্জন বিষয়ে সুবিধা ভোগ করিলেও চামড়ার বাজার ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা আমরা গড়িয়া তুলিতে পারি নাই। এমনকি প্রত্যাশিত দাম না পাইয়া কোরবানির পশুর চামড়া ভাগাড়ে ফেলিবার অঘটনও ঘটিয়াছে। এই সংকট হইতে উত্তরণে চামড়া কারবারিদের দিকে দৃষ্টি দিতেই হইবে।
আমাদের চামড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পাইলেও যেইভাবে উহার রপ্তানি ক্রমহ্রাসমান, তাহাও কম উদ্বেগজনক নহে। এমনকি চামড়াজাত পণ্য তৈরির দেশীয় চাহিদা পূরণে চামড়া আমদানি করিতে হয়। যথেষ্ট দেশীয় চামড়া থাকা সত্ত্বেও আমদানি করিবার কারণ হইল আমাদের চামড়াশিল্প আন্তর্জাতিক মান ও বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করিতে পারে নাই। চামড়ার হৃতগৌরব ফেরাইতে প্রথমত এলডব্লিউজি সনদ অর্জন করিতে হইবে। তজ্জন্য জরুরি ভিত্তিতে সাভারে অবস্থিত ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য শোধনাগার বাস্তবায়নের বিকল্প নাই। রাজধানীর হাজারীবাগ হইতে সাভারে চামড়াশিল্প স্থানান্তরের পরও দুরবস্থা দূরীভূত হয় নাই, তদ্বিষয়ে মনোযোগ বৃদ্ধি করিতে হইবে। চামড়া মূল্যবান হইলেও এবং দেশ-বিদেশে ইহার ব্যাপক চাহিদার পরও কোরবানির পশুর চামড়াবিষয়ক সংকট প্রলম্বিত হইতে পারে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় গণ ক রব ন র প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’