বাংলাদেশ–লাগোয়া ধুবড়িতে ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ আসামের মুখ্যমন্ত্রীর
Published: 14th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ–লাগোয়া পশ্চিম আসামের ধুবড়ি জেলায় ‘দুষ্কৃতকারীদের’ দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, ধুবড়ি জেলায় রাতে দেখামাত্র গুলি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারাই পাথর ছুড়বে, তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হবে।
ধুবড়ি জেলায় একটি হনুমান মন্দিরের কাছে গত রোববার প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। এ নিয়ে সেখানে বেশ উত্তেজনা দেখা দেয়। জনতা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পরিস্থিতি দেখতে গতকাল শুক্রবার ধুবড়ি জেলায় যান মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা।
এর আগে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ধুবড়িতে একটি বিশেষ গোষ্ঠী মন্দিরের ক্ষতি করতে চাইছে। সেই লক্ষ্যে তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
শুক্রবার ধুবড়ি সফর শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আসামের রাজধানী গৌহাটিতে পৌঁছে দুষ্কৃতকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেবেন।
মন্দিরে মাংস রাখার ঘটনাকে ‘বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করে বিশ্বশর্মা দাবি করেন, ঈদের আগের দিন, ‘নবীন বাংলা’ নামে একটি দল ধুবড়িকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে পোস্টার লাগিয়েছে। একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধুবড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জেলায় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স ও আধা–সামরিক বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং যেসব অপরাধীর নামে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী আসামের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গের চক্রও আসামে সক্রিয় হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বকরি ঈদের সময় কিছু লোক গরুর মাংস খায়। এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার গবাদিপশু আনা হয়েছে। ধুবড়িতে একটি “গরুর মাফিয়া চক্র” গড়ে উঠেছে। এরা উৎসবের ঠিক আগে হাজার হাজার পশু সংগ্রহ করেছে।’
কথিত এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বশর্মা।
এই হিন্দুত্ববাদী মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর ঈদের দিন আমি ধুবড়ি আসব ও পরদিনও থাকব। আমরা সম্প্রদায়ের একটি অংশকে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অনুমতি দিতে পারি না।’
আসামের বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নির্বাচনের বাকি ৯ থেকে ১০ মাস। আসামে নির্বাচনের আগে বিষয়টিকে একটি ইস্যু হিসেবে দেখছে সব পক্ষই।
কিছু বিরোধী রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেছেন, বিজেপি নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রায় এক বছর আগে থেকে নির্দিষ্টভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র ব শ বশর ম আস ম র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিল কানাডা
ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পর এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার ঘোষণা দিল কানাডা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তার দেশ। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্ক কার্নি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে গণতান্ত্রিক সংস্কারের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আগামী বছর নির্বাচন আয়োজন এবং সেখানে হামাসের অংশগ্রহণ থাকবে না।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার একদিন আগে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দেয়, যদি ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে না আসে এবং অন্যান্য কিছু শর্ত পূরণ না করে তারাও সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এক সপ্তাহ আগে ফ্রান্সও এমন পরিকল্পনার কথা জানায়।
এদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডার এ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে ‘হামাসকে পুরস্কার দেওয়ার সামিল’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টি এরইমধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কানাডার বিরোধী দল এক বিবৃতিতে জানায়, “৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার পরপরই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ভুল বার্তা পাঠাবে।”
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মাধ্যমে দুই-রাষ্ট্র সমাধানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম। আমাদের চোখের সামনেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
“গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা সহনীয় নয় এবং তা দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘোষণার আগে তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
মার্ক কার্নির এ ঘোষণার সমালোচনা করে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে বলে, কানাডার এই পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
কানাডার এই ঘোষণার পেছনে অভ্যন্তরীণ চাপও ছিল। মঙ্গলবার দেশটির প্রায় ২০০ সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এক খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান, যেন তিনি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেন। চিঠিতে বলা হয়, গাজায় ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অনাহার এবং পশ্চিম তীরে সহিংসতা দেখে মনে হচ্ছে, কানাডা তার নীতিগত অবস্থান প্রতিদিনই হারাচ্ছে।
বুধাবর সংবাদ সম্মেলনে মার্ক কার্নির কাছে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের ঘোষণায় তিনি প্রভাবিত হয়েছেন কি না কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ করেছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, “কানাডা তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেয়।”
ঢাকা/ইভা