ঈদ রাজনীতিতে নির্বাচনী আমেজ, গণসংযোগ
Published: 14th, June 2025 GMT
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নামেন মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। কারচুপির এই নির্বাচনে নওফেল বিজয়ী হন। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হন ডা.
ঈদুল আজহা ঘিরে সরগরম চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা একাধিক গরু-ছাগল কোরবানি দিয়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের আপ্যায়নের পাশাপাশি ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। ঈদ রাজনীতিতে সবার টার্গেটে ছিল আগামী নির্বাচন। তবে এবারের ঈদুল আজহায় রাজনীতি কিছুটা গ্রামমুখীই ছিল। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকাবাসীর মন কাড়তে আগেভাগে গ্রামে ছুটে যান।
বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের বেশির ভাগই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যান। অন্তর্বর্তী সরকার এপ্রিলের প্রথম ভাগে যে কোনো দিন নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য এবারের ঈদ ছিল অন্যরকম। অনেকে আগেভাগেই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীর খোঁজ-খবর নিয়ে কৌশলে গণসংযোগের কাজটিও সেরে ফেলছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হচ্ছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। নগরী ও জেলা দুটি অংশ নিয়ে গঠিত এ আসনে এই দুই বিএনপি নেতা একাধিক গরু-ছাগল কোরবানি দিয়ে এলাকাবাসীকে আপ্যায়ন করানোর পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে যান। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এই আসনে জামায়াত নেতা ডা. মোহাম্মদ আবু নাছেরকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে অনেক আগেই। ফলে তিনিও চষে বেড়াচ্ছেন গোটা নির্বাচনী এলাকা।
বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ অবশ্য সমকালকে বলেন, ‘নির্বাচন বলে কথা নয়, আমি প্রতিবছর ঈদে গরু-ছাগল কোরবানি দিয়ে আমার এলাকার লোকজনকে আপ্যায়ন করাই। এবারও তাই করেছি।’ বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, ‘নির্বাচনে মনোনয়নের বিষয়টি দলের হাইকমান্ডের ওপর নির্ভর করে। তবে নিয়মিতই আমি এলাকায় থাকি। এবারও এলাকায় আছি।’ জামায়াত নেতা ডা. আবু নাছের সমকালকে বলেন, ‘আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামের সঙ্গেই আমার নাড়ির টান। ঈদে গ্রামাঞ্চল সরগরম থাকে। এই সময় এলাকায় গেলে বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকে।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৯ কোকোয়ালি–বাকলিয় আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান মেসার্স ইলিয়াস ব্রাদার্স (এমইবি) গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুল আলম। এখনো পর্যন্ত রাজনীতির মাঠে শামসুল আলমের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) ও চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-ডবলমুরিং) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যান্য বছরের মতো এবারও নগরীর মেহেদীবাগস্থ বাসভবনে পারিবারিকভাবে ৬-৭টি গরু ছাগল জবাই করে কোরবানি করেন তিনি। কোরবানির দিন ছাড়ও আগে-পরে দুই নির্বাচনী এলাকার লোকজনে ঠাসা ছিল তার মেহেদীবাগের বাসা। চট্টগ্রাম-১০ (পাঁচলাইশ–ডবলমুরিং–পাহাড়তলী) আসনে সক্রিয় রয়েছেন প্রয়াত বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে সাঈদ আল নোমানও। এই আসনে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালীও।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একান্ত সচিব মো. সেলিম সমকালকে বলেন, ‘স্যার মেহেদেীবাগের বাসায় কোরবানি দিলেও গ্রামের বাড়ি কাট্টলীতেও কমবেশি আয়োজন রাখেন। এবার চট্টগ্রাম-১০ ও চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন তিনি।’ নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শাসুজ্জামান হেলালী সমকালকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনে আমাকে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ঈদে নির্বাচনী এলাকার লোকজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছি। লোকজনের কাছাকাছি হওয়া এটা একটা বড় সুযোগ।’
এভাবে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে বিএনপি-জামায়াতের পাশাপাশি অন্যান্য এলডিপি, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও কমবেশি সরব ছিলেন। সবার টার্গেটে ছিল আগামী নির্বাচন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত র ব এনপ র ব এনপ র স র জন ত ক গণস য গ ল কজন র ক রব ন এল ক য় ব কল য়
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়মুখী শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের মিছিলে পুলিশের বাধা, সাউন্ড গ্রেনেড, লাঠিচার্জ
নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা। মিছিলটি প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে ও লাঠিচার্জ করে। এতে রাজধানীর প্রেস ক্লাব এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আজ রোববার দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয়ের ৫ নম্বর ফটকের কাছে এ ঘটনা ঘটে। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা এনটিআরসিএর (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) আওতায় দ্রুত নিয়োগের দাবিতে প্রেস ক্লাব থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন। তবে সচিবালয় এলাকায় আগে থেকে সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ছিল বলে জানায় পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিছিলকারীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করে সচিবালয়ের ফটকের কাছাকাছি চলে গেলে পুলিশ তাদের থামার অনুরোধ করে। আন্দোলনকারীরা সেই অনুরোধ না মানলে পুলিশ প্রথমে পাঁচটি ও পরে আরও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে ফিরে অবস্থান নেন।
শাহবাগ থানার পেট্রোল অফিসার জয়নাল আবেদিন সমকালকে বলেন, সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। সচিবালয়ের দিকে এগোতে চাইলে মিছিলকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের ওপর লাঠিচার্জ কর হয়। এছাড়াও পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া এক নিবন্ধনধারী জানান, আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। অথচ সরকার বারবার তা উপেক্ষা করছে। এনটিআরসিএ ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে অথচ আমাদের ১৭তম ব্যাচের সমস্যার সমাধান করছে না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিতে চাই।
তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
১. ১৭তম ব্যাচের নিবন্ধিত প্রার্থীদের জন্য আপিল বিভাগের রায় অনুসারে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অন্তত একবার আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
২. ১৭তম ব্যাচের বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।
৩. আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং এনটিআরসিএর সুপারিশ অনুযায়ী দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখনও আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাব মোড়ে অবস্থান করছেন। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।