আগের বছরের তুলনায় এবারের ঈদুল আজহায় সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এসব ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। ঈদের আগে-পরে ১৫ দিনে ৩৭৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজার ১৮২ জন।

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এতে জানানো হয়, ঈদযাত্রার সময়ে রেলপথে ২৫ দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন মারা গেছেন। ৩১ মে থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪১৫ দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও এক হাজার ১৯৪ জন আহত হয়েছেন।

রমজানের ঈদ নির্বিঘ্ন হলেও এবারের ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ বিভাগের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহান। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো.

মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে চারদিন ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে হয়েছে। এবারের ঈদেও ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণে সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। ঈদযাত্রায় ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। ঈদযাত্রায় নিহতদের ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু। 

সমিতির পর্যবেক্ষণে দুর্ঘটনার জন্য ঈদের আগে কম ছুটি, সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল-ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলসহ ৯ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি বন্ধ করা, মহাসড়কে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণসহ ১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক আরমানা সাবিয়া হক, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক ম ত য ঈদয ত র ঈদয ত র য় দ র ঘটন য় কল য ণ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ