জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের কল্যাণে আলাদা একটি অধিদপ্তর গঠন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। মঙ্গলবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ ২০২৫’ শিরোনামে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়।

এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’। এই অধিদপ্তর সরকারি গেজেটে প্রকাশিত জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা ও ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) সংরক্ষণ করবে। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সরকারনির্ধারিত এককালীন ও মাসিক আর্থিক সহায়তা দেবে। শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কল্যাণে তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দেশি–বিদেশি সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এই অধিদপ্তর।

অধ্যাদেশে বলা হয়, এই অধিদপ্তরের সদর দপ্তর হবে ঢাকায়। সরকার প্রয়োজন মনে করলে ঢাকার বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অধিদপ্তরের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিযুক্ত করবে।

অধ্যাদেশটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গণ-অভ্যুত্থানসংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত করা হয়েছে। এটি এত দিন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি বিশেষ সেল হিসেবে কাজ করে আসছে। তারা শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করে আসছে। বিলুপ্ত সেলের যেকোনো কাজ বা কোনো ব্যবস্থা জারি করা কোনো আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি এই অধ্যাদেশের জারি বলে গণ্য হবে।

এতে বলা হয়েছে, অধিদপ্তরের একটি তহবিল থাকবে, যা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ এবং জুলাই যোদ্ধাকল্যাণ ও পুনর্বাসন তহবিল’ নামে অভিহিত হবে। এই তহবিলে সরকারের অনুদান সাহায্য ও মঞ্জুরির অর্থ জমা হবে। কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এই তহবিলে অনুদান দিতে পারবে। কোনো বিদেশি সরকারি সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থা এই তহবিলে অনুদান দিতে পারবে।

অধিদপ্তর জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। শহীদদের গণকবর ও সমাধি সংরক্ষণ এবং স্মৃতিফলক স্থাপন করতে পারবে।

অধ্যাদেশে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা যেকোনো শ্রেণির আহত জুলাই যোদ্ধা না হওয়া সত্ত্বেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করে বা বিভ্রান্তিকর কাগজপত্র দাখিল করে নিজেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য বা আহত জুলাই যোদ্ধা দাবি করে এই অধ্যাদেশ বা প্রণীত বিধি বা আদেশ বা নির্দেশের অধীনে কোনো চিকিৎসাসুবিধা বা আর্থিক সহায়তা বা পুনর্বাসনসুবিধা দাবি করেন বা গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন। কোনো ব্যক্তি উপধারা (১)–এ বর্ণিত অপরাধ সংঘটন করলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক ২ (দুই) লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উপধারা (১)–এ উল্লিখিত গৃহীত সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র কল য ণ ও আহত তহব ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ