পিছু হটার পথ নেই, অন্তহীন যুদ্ধের ঝুঁকিতে ইসরায়েল
Published: 18th, June 2025 GMT
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান শক্ত হামলা অব্যাহত রেখেছে। দেশটি ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাঠাচ্ছে। এতে হতাহত হচ্ছে ইসরায়েলিরা। তেল আবিবেও এখন গাজার মতো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ইরানের এ অনড় অবস্থানে ইসরায়েলের সামনে যুদ্ধ থেকে বের হওয়ার পথ নেই। এ অবস্থায় সংঘাত অবসানের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। ফলে অন্তহীন এক যুদ্ধের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে ইসরায়েল। সিএনএনের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ইরানের ওপর ইসরায়েলের প্রথম ধাপের হামলায় ব্যাপক সাফল্য আসে। ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করতে সমর্থ হয় তারা। কিন্তু সপ্তাহ শেষে যুদ্ধের চিত্র খানিকটা বদলে গেছে। ইরানের তীব্র প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েল উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে কিনা, সেই চিন্তা এখন তাদের বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইরান না থামলে কিংবা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চুক্তি না হলে যুদ্ধ চালিয়েই যেতে হবে।
যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েল এখনও অপ্রতিরোধ্য। প্রথম ধাপে তারা বিনা বাধায় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানে। তবে ইরানের পাল্টা হামলায় ইতোমধ্যে কয়েক ডজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য নাগরিক। দুই পক্ষই নিরন্তর হামলা অব্যাহত রেখেছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে রক্ষায় সহায়তা দিলেও এখনও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল আরও আতঙ্কের মধ্যে পড়ে গেছে। তেহরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত ফল কী হবে, সে বিষয়টি এখন পুনর্মূল্যায়ন করতে হচ্ছে তাদের।
ইসরায়েলি একটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, নাগরিকরা মনে করেন, সামরিক নয়, যুদ্ধ শেষ হবে কূটনৈতিক পদক্ষেপে। তারা আশা করছে, চলমান সামরিক পদক্ষেপ ইরানকে ভবিষ্যতে পারমাণবিক আলোচনায় বসতে বাধ্য করবে। তারা পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নমনীয় হবে; ঠিক যেমনি গাজায় চাপের মুখে পড়েছে হামাস।
ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েল শুরু থেকে কয়েকটি লক্ষ্য সামনে রেখে হামলা করছে। নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা হলো, ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে পিছু হটানো। তা ছাড়া ইরানি সরকারের পরিবর্তন ঘটানোও যুদ্ধের একটা বড় লক্ষ্য। একইভাবে ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকি স্থায়ীভাবে অপসারণ করার লক্ষ্যও রয়েছে তেল আবিবের। এগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
ইসরায়েল যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে চায়। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পেতে চাইছে। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছে। কিন্তু ট্রাম্প এখনই মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধে জড়াতে অনীহা দেখিয়েছেন। সহিংসতা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সংঘাতে জড়ানো নয়, ওয়াশিংটন সংঘাতের অবসান ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
ট্রাম্প গত রোববার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলকে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত। যেমন আমি ভারত-পাকিস্তানকে করতে বলেছিলাম।’ কিন্তু কূটনৈতিক পদক্ষেপের চেয়ে ইসরায়েলের এখন সরাসরি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ বেশি দরকার। কারণ ইসরায়েল বুঝে গেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্থায়ী ক্ষতি করা খুবই কঠিন। উত্তর ইরানের ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনাটি খুবই সুরক্ষিত। এটি আধামাইল মাটির নিচে, পাহাড়ের তলদেশে অবস্থিত। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া ইসরায়েল এই স্থাপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
ইসরায়েলি কৌশলের আরও একটি ত্রুটি রয়েছে। তা হলো প্রতিটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা হলেও পুনরায় নির্মাণের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ইরানের হাতে রয়েছে। এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত ইরান যদি টিকে থাকতে পারে, তাহলে পারমাণবিক সক্ষমতায় দেশটি নতুন গতিশক্তি লাভ করবে। ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে তেহরান আরও বেশি টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করবে। এ বিষয়টিও নেতানিয়াহুকে ভাবিয়ে তুলেছে। এজন্য বারবার ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা বলছেন তিনি।
তবে ইসরায়েলের এ পরিকল্পনা বাস্তবে দেখা যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরকারবিরোধী অনেক ইরানি এখন ইসরায়েলকে আরও বেশি ঘৃণা করে। হামলা করায় তারা ইসরায়েলের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। এর পরও ইসরায়েল স্বপ্ন দেখছে, ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ জেগে উঠবে। তারা পারমাণবিক আলোচনায় ট্রাম্পের শর্ত মানতে সরকারকে বাধ্য করবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। এই অবস্থায় যুদ্ধের সমাপ্তি কত দূরে, তা জানা নেই কারও।
লেখক: ম্যাথিউ চান্স, সিএনএনের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র লক ষ য সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
ফল মেলা শুরু বৃহস্পতিবার
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী শুরু হচ্ছে জাতীয় ফল মেলা ২০২৫।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) থেকে ঢাকার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) চত্বরে মেলা শুরু হবে। যা চলবে আগামী ২১ জুন শনিবার পর্যন্ত। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মেলা উদ্বোধন করবেন।
জাতীয় ফল মেলায় এবারের প্রতিপাদ্য ‘‘দেশি ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই”। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে ও রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল কিনতে পারবেন।
সরকারি পর্যায়ে ২৬টি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৪৯টি মিলিয়ে মোট ৭৫টি প্রতিষ্ঠান এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। সারা দেশের ৬৪টি জেলার ৪৩১টি উপজেলায়ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতীয় ফল মেলা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কৃষিবিদি ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও বাণিজ্যিকীকরণে দেশি ফল: বর্তমান প্রেক্ষিত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/এএএম/ইভা