ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ বাড়ছে
Published: 18th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। বাড়তি দামের প্রভাব দেশেও পড়তে পারে। ইতিমধ্যে জাহাজে তেল পরিবহনের খরচ বাড়তে শুরু করেছে। ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দামে বড় উত্থান ঘটতে পারে। ব্যাহত হতে পারে আমদানি। তাই বিকল্প উৎস খুঁজছে সরকার।
যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের জ্বালানি তেল আমদানির একমাত্র সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তারা বলছে, পরিশোধিত জ্বালানি তেলের ২০ শতাংশ ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ৩০ শতাংশ পরিবহন করা হয় হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করে। এটি বন্ধের আশঙ্কা ধরেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে আরও অপেক্ষা করা হবে, এখন মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে না। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি। যুদ্ধ বেশি দিন চললে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।’
আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল সংঘাতে বেড়েছে তেলের দাম, বাড়তে পারে নিত্যপণ্যের দামও১৬ জুন ২০২৫দেশে দুই ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত। তবে একমাত্র জ্বালানি পরিশোধনাগারের সক্ষমতা অনুযায়ী বছরে ১৫ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত তেল আমদানির সুযোগ নেই। অপরিশোধিত হিসেবে সৌদি আরব থেকে অ্যারাবিয়ান লাইট ও আরব আমিরাত থেকে মারবান লাইট আমদানি করে বিপিসি। সাধারণত দুই মাস আগের গড় দাম ধরে বিল হিসাব করা হয়। অর্থাৎ জুনে সরবরাহ করা তেলের দাম নির্ধারিত হয় মার্চের গড় দাম ধরে। তাই এখনো দামে প্রভাব পড়েনি।
বিপিসি সূত্র বলছে, দুই দেশ থেকেই অপরিশোধিত তেল আসে হরমুজ প্রণালি হয়ে। গতকালও একটি জাহাজ রওনা করেছে। এতে জাহাজের পরিবহন খরচ কিছুটা বেড়েছে। যদিও আবুধাবি থেকে ভিন্ন পথে জাহাজ আসার সুযোগ আছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিকল্প পথে তেল আনলে খরচ আরও বাড়বে। মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প উৎস হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা আপাতত পর্যবেক্ষণ করছি। যুদ্ধ বেশি দিন চললে আমাদের ওপর একটা প্রভাব পড়বে।সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টাবিপিসির প্রতিবেদন বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে দাম নির্ধারণের ওপর প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালির মাধ্যমে তেল পরিবহনে ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে জাহাজ ভাড়া বাড়বে। জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৭ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ বেশি আমদানি করে ডিজেল, ফার্নেস, অকটেন, জেট ফুয়েলের মতো পরিশোধিত জ্বালানি তেল। এগুলোর কোনোটাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে না। আসে মূলত সিঙ্গাপুর ও তার আশপাশের কয়েকটি দেশ থেকে। বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল। দেশের একমাত্র শোধনাগারটি থেকে পাওয়া যায় ৬ লাখ টন ডিজেল, বাকিটা আমদানি করতে হয়।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেও এখনো তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তেলের মজুত ও সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। যুদ্ধ চলমান থাকলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে। আর ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার মতো বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করা হতে পারে।
আরও পড়ুনইসরায়েল–ইরান সংঘাত, বিশ্ববাজারে আজও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম১৬ জুন ২০২৫অস্থির হয়ে উঠছে বিশ্ববাজার২০২০ সালে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল) দাম ছিল গড়ে ৪২ ডলার। পরের বছর গড় দাম বেড়ে হয় প্রায় ৭১ ডলার। তেলের দামে বড় উল্লম্ফন ঘটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ২০২২ সালে সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ১৩৯ ডলার পর্যন্ত। ফলে বিশ্বজুড়ে জিনিসপত্রের দামও বাড়তে থাকে। পরের দুই বছর এটি কমতে কমতে ৮০ ডলারে নেমে আসে। ২০২৪ সালেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের গড় দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল।
গত এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপের পর প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম নেমে আসে ৬০ ডলারের কাছাকাছি। এরপর এটি ৬৫ ডলারের মধ্যেই ছিল। তবে ইরান–ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে বর্তমানে এটি ৭৫ ডলারে উঠেছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে দাম ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট গবেষণা সংস্থাগুলো।
বিপিসির চেয়ারম্যান অবশ্য বলেছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লেও ভোক্তা পর্যায়ে পুরোটা না চাপিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করা হবে।
আরও পড়ুনইরান–ইসরায়েল যুদ্ধের কী প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে১৭ জুন ২০২৫২০১৬ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর দেশে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা। ২০২১ সালের নভেম্বরে দাম বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। একই সময়ে পেট্রল ৮৬ ও অকটেন বিক্রি হয়েছে ৮৯ টাকায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২২ সালের আগস্টে একলাফে দেশে ডিজেলের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১৪ টাকা। সমালোচনার মুখে ২৫ দিনের মাথায় দাম ৫ টাকা কমানো হয়। ওই সময় পেট্রল ১২৫ ও অকটেন ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
তবে গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ শুরু করেছে সরকার। সে হিসাবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। জুনে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১০২ টাকায়। আর পেট্রল ১১৮ ও অকটেন ১২২ টাকায়।
আরও পড়ুনইসরায়েল–ইরান সংঘাতের জের, বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার দাম১৪ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর শ ধ ত জ ব ল ন ব শ বব জ র ত ল আমদ ন অপর শ ধ ত র গড় দ ম পর বহন ব কল প ল খ টন অকট ন
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু
যশোরে শেখ আমির (৬৮) নামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে যশোর জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
শেখ আমির যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বাসিন্দা।
হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. রবিউল ইসলাম তুহিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ জুন শেখ আমির সার্জারি বিভাগে ভর্তি হন। করোনার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ায় পরীক্ষা করা হয়। করোনা পজেটিভ শনাক্ত হলে ১৬ জুন বিকেলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে সন্দেহজনক আরও তিনজন রোগী রয়েছেন। তারা করোনায় আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।