রাঙামাটির পাহাড়ে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস
Published: 18th, June 2025 GMT
বর্ষা মৌসুম আসলেই রাঙামাটিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জীবন থাকে শঙ্কায়। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পার্বত্য এ জেলাই প্রতিবছরই ছোট-বড় পাহাড় ধসে প্রাণহানি হয়। এরপরও পাহাড়ের ওপর ও আশপাশে বসতি গড়ে বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে।
আট বছর আগে অথাৎ ২০১৭ সালের জুন মাসে পাহাড় ধসে রাঙামাটি জেলায় ১২০ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। বৃষ্টি শেষ হলে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে আসে সবকিছু। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিয়ে স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় সমস্যা দীর্ঘতর হচ্ছে বলে মত স্থানীয়দের।
প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে বর্তমানে ১০০’র বেশি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষার আগে এসব এলাকায় প্রশাসন সাইনবোর্ড দিয়ে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভারী কিংবা টানা বৃষ্টি হলে পহাড়ে বসবাসকারীদের নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা
অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ
চট্টগ্রামের শিমুলতলী এলাকার পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতি। পাহাড় ও আশপাশে থাকা স্থাপনার বেশিরভাগই রয়েছে ঝুঁকিতে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধস হলে এই এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অর্ধ শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ২০ জনের বেশি মানুষ মারা যান, আহত হন শতাধিক।
প্রাণহানির পরেও পুনরায় একই স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। শুধু শিমুলতলী এলাকায় নয়; রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, মোনঘর ও সনাতন পাড়া এলাকার চিত্রও একই।
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলী বলেন, “এভাবে পাহাড়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার যদি কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তখন আমরা সেখানে চলে যাব।”
রূপনগর এলাকার খোকন ও হামিদা পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন। তারা জানান, অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় মৃত্যুর শঙ্কা আছে জেনেও সেখানে রয়েছেন।
খোকন বলেন, “সরকার আমাদের জায়গা ছাড়তে বলে। আমরা কোথায় যাব, থাকব কোথায় সেই বিষয়ে তারা কিছুই বলে না। তাই আমরা কোথাও যাব না। বাঁচলে এখানেই বাঁচব, আর মরলে এখানেই মরব।”
যুব উন্নয়ন এলাকা ও মনতলা আদাম এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র লাল চাকমা ও সোনা চন্দ্র চাকমা জানান, বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে দিয়ে চলে যায়। পাহাড়কে ঝুঁকিমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, “২০১৭ সালে পাহাড় ধসে অনেক প্রাণহানির পর প্রশাসন থেকে পাহাড় ধসের কারণ ও করণীয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ আমরা আজো জানতে পারিনি। বর্তমান পাহাড়ের চিত্রই বলে দেয় সেই রিপোর্টের সুপারিশ অনুসরণ করা হয়নি। যদি অনুসরণ করা হতো, তাহলে এতো বড় একটি ঘটনার পর পুনরায় একই স্থানে বসতি স্থাপন হতো না। সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হতো না।”
তিনি বলেন, “পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও সম্পদের অপচয় রোধ করতে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পারছি ২০১৭ সালের ঘটনার পরও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কমেনি, উল্টো বেড়েছে কয়েকগুণ।”
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “জেলায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে আমরা পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসি।”
স্থায়ী সমাধানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পার্বত্য জেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে এখানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটু জটিল। তবে, প্রশাসন থেকে ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড়ধসে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প হ ড় ধস ক প র ণ বসব স ২০১৭ স ল প হ ড় ধস ব যবস থ ন র পর এল ক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা বন্ধের ঝুঁকিতে’
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, আরো অর্থ না পেলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের আবেদন করা হয়েছে, যার মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে। শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র বাবর বালুচ এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী বসতি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের শিবিরগুলোতে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস অভিযানের পর তাদের বেশিরভাগই পালিয়ে এসেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র বাবর বালুচ বলেছেন, “আমাদের কী প্রয়োজন এবং কী সম্পদ উপলব্ধ রয়েছে তার মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। এই তহবিল ঘাটতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলবে। কারণ তারা খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য প্রতিদিন মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া ও চীনের ক্রমবর্ধমান ভয়ের কারণে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে প্রধান দাতাদের তহবিল হ্রাসের ফলে মানবিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বালুচ বলেন, “বিশ্বব্যাপী তীব্র তহবিল সংকটের কারণে, নতুন আগত শরণার্থী ও ইতিমধ্যে উপস্থিত উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা পূরণ হবে না এবং অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত না করা হলে সমগ্র রোহিঙ্গা শরণার্থী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।
ইউএনএইচসিআর অনুসারে, গত ১৮ মাসে কমপক্ষে এক লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসেছেন। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নিপীড়ন হাজার হাজার মানুষকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে।
বালুচ বলেন, “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এই স্থানান্তর... ২০১৭ সালের পর থেকে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি, যখন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মারাত্মক সহিংসতা থেকে পালিয়ে এসেছিল।”
ঢাকা/শাহেদ