বর্ষা মৌসুম আসলেই রাঙামাটিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের জীবন থাকে শঙ্কায়। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পার্বত্য এ জেলাই প্রতিবছরই ছোট-বড় পাহাড় ধসে প্রাণহানি হয়। এরপরও পাহাড়ের ওপর ও আশপাশে বসতি গড়ে বসবাস করছেন হাজারো মানুষ। মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও এ সংখ্যা দিন দিন আরো বাড়ছে।

আট বছর আগে অথাৎ ২০১৭ সালের জুন মাসে পাহাড় ধসে রাঙামাটি জেলায় ১২০ জনের প্রাণহানি হয়। এরপর থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে তোড়জোড় শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। বৃষ্টি শেষ হলে আবারো আগের অবস্থায় ফিরে আসে সবকিছু। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিয়ে স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না নেওয়ায় সমস্যা দীর্ঘতর হচ্ছে বলে মত স্থানীয়দের। 

প্রশাসনের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে বর্তমানে ১০০’র বেশি এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষার আগে এসব এলাকায় প্রশাসন সাইনবোর্ড দিয়ে সতকর্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ভারী কিংবা টানা বৃষ্টি হলে পহাড়ে বসবাসকারীদের নিকটস্থ নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। 

আরো পড়ুন:

রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা

অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ

চট্টগ্রামের শিমুলতলী এলাকার পাহাড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতি। পাহাড় ও আশপাশে থাকা স্থাপনার বেশিরভাগই রয়েছে ঝুঁকিতে। ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড়ধস হলে এই এলাকায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অর্ধ শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ২০ জনের বেশি মানুষ মারা যান, আহত হন শতাধিক। 

প্রাণহানির পরেও পুনরায় একই স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ঘরবাড়ি। শুধু শিমুলতলী এলাকায় নয়; রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী, যুব উন্নয়ন এলাকা, মনতলা আদাম, সাপছড়ি, পোস্ট অফিস এলাকা, মুসলিম পাড়া, নতুন পাড়া, মোনঘর ও সনাতন পাড়া এলাকার চিত্রও একই।

শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলী বলেন, “এভাবে পাহাড়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। মৃত্যুঝুঁকি জেনেও বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার যদি কোথাও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তখন আমরা সেখানে চলে যাব।”

রূপনগর এলাকার খোকন ও হামিদা পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেছেন। তারা জানান, অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় মৃত্যুর শঙ্কা আছে জেনেও সেখানে রয়েছেন। 

খোকন বলেন, “সরকার আমাদের জায়গা ছাড়তে বলে। আমরা কোথায় যাব, থাকব কোথায় সেই বিষয়ে তারা কিছুই বলে না। তাই আমরা কোথাও যাব না। বাঁচলে এখানেই বাঁচব, আর মরলে এখানেই মরব।”

যুব উন্নয়ন এলাকা ও মনতলা আদাম এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্র লাল চাকমা ও সোনা চন্দ্র চাকমা জানান, বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে দিয়ে চলে যায়। পাহাড়কে ঝুঁকিমুক্ত করে বসবাসের উপযোগী করার কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন গ্লোবাল ভিলেজের নির্বাহী পরিচালক ফজলে এলাহী বলেন, “২০১৭ সালে পাহাড় ধসে অনেক প্রাণহানির পর প্রশাসন থেকে পাহাড় ধসের কারণ ও করণীয় নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ আমরা আজো জানতে পারিনি। বর্তমান পাহাড়ের চিত্রই বলে দেয় সেই রিপোর্টের সুপারিশ অনুসরণ করা হয়নি। যদি অনুসরণ করা হতো, তাহলে এতো বড় একটি ঘটনার পর পুনরায় একই স্থানে বসতি স্থাপন হতো না। সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হতো না।” 

তিনি বলেন, “পাহাড় ধসে প্রাণহানি ও সম্পদের অপচয় রোধ করতে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা দেখতে পারছি ২০১৭ সালের ঘটনার পরও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কমেনি, উল্টো বেড়েছে কয়েকগুণ।”

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, “জেলায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষণের পূর্বাভাস থাকলে আমরা পাহাড়ের পদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসি।”

স্থায়ী সমাধানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পার্বত্য জেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে এখানে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া একটু জটিল। তবে, প্রশাসন থেকে ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩ জুন পাহাড়ধসে পাঁচ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালের জুনে জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ফের পাহাড়ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের জুনে জেলার কাপ্তাইয়ে তিনজনের প্রাণহানি ঘটে।

ঢাকা/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প হ ড় ধস ক প র ণ বসব স ২০১৭ স ল প হ ড় ধস ব যবস থ ন র পর এল ক র

এছাড়াও পড়ুন:

জেমাইমার কান্নার ম্যাচে টুপটাপ ভাঙল রেকর্ডও

নাবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৮ রান তাড়া করতে নেমে ভারত জয় তুলে নেয় ৯ বল হাতে রেখে। নারী বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু রেকর্ড হয়েছে এ ম্যাচে। আসুন, দেখে নিই।৩৩৯

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়ায় ভারতের লক্ষ্য। নারী বিশ্বকাপে এটাই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের বিশ্ব রেকর্ড। এবারের নারী বিশ্বকাপের বিশাখাপত্তনমে ভারতের দেওয়া ৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই রেকর্ড ভেঙে গতকাল রাতে নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারত। মেয়েদের ওয়ানডেতে এর আগে সর্বোচ্চ ২৬৪ রান তাড়া করে জিতেছে ভারত। তবে মেয়েদের বিশ্বকাপে ভারত এর আগে কখনো ন্যূনতম ২০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি।

১৫

নারী বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার টানা ম্যাচ জয়সংখ্যা। গতকাল রাতে হারের আগে সর্বশেষ ২০১৭ নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এই ভারতের বিপক্ষেই হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। নারী বিশ্বকাপে এটা যৌথভাবে টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটিও ছিল অস্ট্রেলিয়ার (১৯৯৩-২০০০)।

৬৭৯

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট রান। নারী বিশ্বকাপে দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে এটাই সর্বোচ্চ রানের ম্যাচ। ২০১৭ সালে ব্রিস্টলে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে ম্যাচে উঠেছিল ৬৭৮ রান।

আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে ফাইনালে ভারত১১ ঘণ্টা আগে৩

ছেলে ও মেয়েদের ওয়ানডে মিলিয়ে নকআউট ম্যাচে ৩০০–এর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের নজির। আগের দুবার এই নজির গড়েছে ভারতের ছেলেদের ক্রিকেট দল। ১৯৯৮ সালে ইনডিপেনডেন্স কাপের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানের ৩১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ইংল্যান্ডের ৩২৫ রান তাড়া করে জেতে ভারত।

১২৭*

নারী ওয়ানডেতে রান তাড়ায় ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, যেটা গতকাল রাতে খেলেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। গত মাসে দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২৫ রানের ইনিংস খেলেন স্মৃতি মান্ধানা।

৭৭

ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করতে অস্ট্রেলিয়ার ফোবে লিচফিল্ডের খেলা বলসংখ্যা। মেয়েদের ওয়ানডেতে নকআউট ম্যাচে এটা দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯০ বলে সেঞ্চুরি করেন হারমানপ্রীত কৌর। ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের ন্যাট শিভার-ব্রান্টও ৯০ বলে সেঞ্চুরি করেন।

২০২৫ সালে মেয়েদের এই বিশ্বকাপ ফাইনালই প্রথম ফাইনাল যেখানে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মধ্যে কাউকে দেখা যাবে না। আগের সব কটি বিশ্বকাপের ফাইনালেই এই দুই দলের মধ্যে কেউ না কেউ ছিল।

আরও পড়ুনবোলাররা ভাসান, ব্যাটসম্যানেরা ডোবান—আজ কী করবে বাংলাদেশ৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা
  • জেমাইমার কান্নার ম্যাচে টুপটাপ ভাঙল রেকর্ডও